একদিন হযরত ফাতিমা (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন। রাসূল (সাঃ) একজন মেহমানকে সাথে নিয়ে ফাতিমা (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন।
তিনি দরজাতে কড়া নেড়ে বললেন- ‘ফাতিমা, আমি তোমার বাবা, ভিতরে আসতে পারি? আমার সাথে এক মেহমান আছেন। আমি শুনেছি তুমি অসুস্থ! তাই তোমাকে দেখতে এলাম, মা’!
সারা জাহানের নবী, খাতামুল আম্বিয়া, হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)-এর মেয়ে তখন কি জবাব দিয়েছিলেন জানেন? বলেছিলেন- ‘হে আব্বাজান, আমার ঘরে তো পর্যাপ্ত কাপড় নেই। আমি পর্দা করবো কিভাবে?
একজন পরপুরুষ আপনার সঙ্গে আছেন’।
আল্লাহু আকবার! দোজাহানের বাদশাহের মেয়ের ঘরে কাপড় নেই পর্দা করার মত। কি জীবন তিনি কাটিয়ে গেছেন! আর তাঁর উম্মত হয়ে আমরা ভোগ-বিলাসে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে থাকি!
ফাতিমা (রাঃ)-এর এমন কথা শুনে রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন- ‘ফাতিমা, আমার চাদর নিয়ে পর্দা করো’। তিনি আপন কাঁধ থেকে চাদর খুলে দরজার ভিতরে দিলেন। হযরত ফাতিমা (রাঃ) সেই চাদর পরলেন ও মুখ ঢাকলেন।
রাসূল (সাঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন। হজরত ফাতিমা (রাঃ) রাসূলের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন- ‘আব্বাজান, আমি ক্ষুধার্ত। ঘরে খাবার নেই’। রাসূল (সাঃ)-ও কাঁদতে শুরু করলেন।
তায়েফের ময়দানে যিনি পাথরের আ*ঘা*ত সহ্য করেছেন, উহু*দের ময়দানে নিজের দাঁত হারিয়েছেন, পেটে পাথর বেঁধে চলাফেরা করেছেন। কিন্তু জগতের কোন ব্যথাই তাঁর চোখের পানির কারণ হতে পারেনি।
অথচ আজ মেয়ের চোখের পানি দেখে তাঁর চোখেও বাঁধ ভেঙে পানি গড়াতে শুরু করলো। সেই পানি মায়ার নবীর পবিত্র রক্তিম গাল বেয়ে ঝরতে লাগলো টপ টপ করে।
মেয়ের মাথাটাকে বুকের সাথে শক্ত করে ধরে মায়ার নবী বলতে লাগলেন- ‘কেঁদো না, আমার কলিজার টুকরা, কেঁদো না। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি তোমার বাবাকে সত্য নবী বানিয়েছেন, আজ তিনদিন হয়ে গেছে আমি নিজেও কিছুই খাইনি।
মারে, তোমার জন্য সুসংবাদ আছে। আমার মাবুদ তোমাকে জান্নাতের সর্দারনী হিসেবে কবুল করেছেন’।
একবার ভাবুন তো, আমার আপনার নবীকে কুরাইশের সর্দাররা বলেছিল- তিনি যদি ইসলাম প্রচার না করেন, তাহলে তারা তাঁকে আরবের সেরা ধনবান ব্যক্তি বানিয়ে দেবে।
কিন্তু আমার আপনার জন্য তিনি সেই জীবন গ্রহণ না করে এই ব্যথা ভরা জীবন মেনে নিয়েছেন।
আর আমরা কী করছি? ভাবুন জান্নাতের সর্দার্নীর জীবন।
এই সম্মান কোন আরামের বিছানাতে মিলেনি। এই সম্মান এসেছে ক্ষুধা তৃষ্ণা, সবর ও শুকরিয়া থেকে।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন এবং তাঁর উপরে খাঁটি বিশ্বাস রাখার তৌফিক দান করুন, আমিন…
সংগৃহীত।
ইসলামিক_গল্প
ইসলামিক_ইতিহাস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন