বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫

গজবের ধরন

 

গজবের ধরন

হযরত সালেহ (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বৃহষ্পতিবার ভোরে অবিশ্বাসী কওমের সকলের মুখমন্ডল গভীর হলুদ বর্ণ ধারণ করল। কিন্তু তারা ঈমান আনল না বা তওবা করল না। বরং উল্টা হযরত সালেহ (আঃ)-এর উপর চটে গেল ও তাঁকে হত্যা করার জন্য খুঁজতে লাগল। দ্বিতীয় দিন সবার মুখমন্ডল লাল বর্ণ ও তৃতীয় দিন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেল। তখন সবই নিরাশ হয়ে গজবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। চতুর্থ দিন রবিবার সকালে সবাই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুততি নিয়ে সুগন্ধি মেখে অপেক্ষা করতে থাকে।[ইবনু কাছীর, সূরা আ‘রাফ ৭৩-৭৮] এমতাবস্থায় ভীষণ ভূমিকম্প শুরু হল এবং উপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন শোনা গেল। ফলে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হল (আ‘রাফ ৭/৭৮; হূদ ১১/৬৭-৬৮) এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হল এমনভাবে, যেন তারা কোনদিন সেখানে ছিল না’। অন্য আয়াতে এসেছে যে, ‘আমি তাদের প্রতি একটিমাত্র নিনাদ পাঠিয়েছিলাম। তাতেই তারা শুষ্ক খড়কুটোর মত হয়ে গেল’ (ক্বামার ৫৪/৩১)।
কোন কোন হাদীছে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ছামূদ জাতির উপরে আপতিত গজব থেকে ‘আবু রেগাল’ নামক জনৈক অবিশ্বাসী নেতা ঐ সময় মক্কায় থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু হারাম শরীফ থেকে বেরোবার সাথে সাথে সেও গজবে পতিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে মক্কার বাইরে আবু রেগালের উক্ত কবরের চিহ্ন দেখান এবং বলেন যে, তার সাথে একটা স্বর্ণের ছড়িও দাফন হয়ে গিয়েছিল। তখন কবর খনন করে তারা ছড়িটি উদ্ধার করেন। উক্ত রেওয়ায়াতে একথাও বলা হয়েছে যে, ত্বায়েফের প্রসিদ্ধ ছাক্বীফ গোত্র উক্ত আবু রেগালের বংশধর। তবে হাদীছটি যঈফ।[ইবনু কাছীর, আ‘রাফ ৭৮; আলবানী, যঈফ আবুদাঊদ; যঈফাহ হা/৪৭৩৬]
অন্য হাদীছে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে, ‘ছাক্বীফ গোত্রে একজন মিথ্যাবাদী (ভন্ড নবী) ও একজন রক্ত পিপাসুর জন্ম হবে।[মুসলিম, মিশকাত হা/৫৯৯৪] রাসূলের এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয় এবং এই বংশে মিথ্যা নবী মোখতার ছাক্বাফী এবং রক্তপিপাসু কসাই ইরাকের উমাইয়া গবর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জন্ম হয়। কওমে ছামূদ-এর অভিশপ্ত বংশের রক্তধারার কু-প্রভাব হওয়াটাও এতে বিচিত্র নয়।

অন্য এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সিরিয়া ও হেজাযের মধ্যবর্তী ‘হিজ্র’ নামক সে স্থানটি অতিক্রম করেন, যেখানে ছামূদ জাতির উপরে গজব নাযিল হয়েছিল। তিনি ছাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দেন, কেউ যেন ঐ গজব বিধ্বস্ত এলাকায় প্রবেশ না করে এবং ওখানকার কূয়ার পানি ব্যবহার না করে’।[বুখারী হা/৪৩৩, মুসলিম, আহমাদ] এসব আযাব-বিধ্বস্ত এলাকাগুলিকে আল্লাহ তা‘আলা ভবিষ্যৎ মানবজাতির জন্য শিক্ষাস্থল হিসাবে সংরক্ষিত রেখেছেন, যাতে তারা উপদেশ হাছিল করতে পারে এবং নিজেদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতা হতে বিরত রাখে।
আরবরা তাদের ব্যবসায়িক সফরে নিয়মিত সিরিয়া যাতায়াতের পথে এইসব ধ্বংসস্ত্তপ গুলি প্রত্যক্ষ করত। অথচ তাদের অধিকাংশ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেনি এবং শেষনবীর উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। যদিও পরবর্তীতে সব এলাকাই ‘মুসলিম’ এলাকায় পরিণত হয়ে গেছে। আল্লাহ বলেন,
وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيْشَتَهَا فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلاَّ قَلِيلاً وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِيْنَ، وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَى حَتَّى يَبْعَثَ فِيْ أُمِّهَا رَسُولاً يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَى إِلاَّ وَأَهْلُهَا ظَالِمُوْنَ- (القصص ৫৮-৫৯)-
‘আমি অনেক জনপদ ধ্বংস করেছি; যেসবের অধিবাসীরা তাদের বিলাসী জীবন যাপনে মত্ত ছিল। তাদের এসব আবাসস্থলে তাদের পরে মানুষ খুব সামান্যই বসবাস করেছে। অবশেষে আমিই এসবের মালিক রয়েছি’। ‘আপনার পালনকর্তা জনপদ সমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত না তার কেন্দ্রস্থলে রাসূল প্রেরণ করেন। যিনি তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করেন। আর আমি জনপদ সমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা (অর্থাৎ নেতারা) যুলুম করে’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৮-৫৯)।
উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত কাহিনীর প্রধান বিষয়গুলি পবিত্র কুরআনের ২২টি সূরায় ৮৭টি আয়াতে এবং কিছু অংশ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কিছু অংশ এমনও রয়েছে যা তাফসীরবিদগণ বিভিন্ন ইস্রাঈলী বর্ণনা থেকে সংগ্রহ করেছেন, যা সত্য ও মিথ্যা দুই-ই হতে পারে। কিন্তু সেগুলি কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় এবং সেগুলির উপরে ঘটনার প্রমাণ নির্ভরশীল নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...