বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫

আহলে মাদইয়ানের উপরে আপতিত গজবের বিবরণ


 

আহলে মাদইয়ানের উপরে আপতিত গজবের বিবরণ

হযরত শোয়াইব (আঃ)-এর শত উপদেশ উপেক্ষা করে যখন কওমের নেতারা তাদের অন্যায় কর্মসমূহ চালিয়ে যাবার ব্যাপারে অনড় রইল এবং নবীকে জনপদ থেকে বের করে দেবার ও হত্যা করার হুমকি দিল ও সর্বোপরি হঠকারিতা করে তারা আল্লাহর গজব প্রত্যক্ষ করতে চাইল, তখন তিনি বিষয়টি আল্লাহর উপরে সোপর্দ করলেন এবং কওমের নেতাদের বললেন, وَارْتَقِبُوْا إِنِّي مَعَكُمْ رَقِيْبٌ ‘(ঠিক আছে), তোমরা এখন আযাবের অপেক্ষায় থাক। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম’ (হূদ ১১/৯৩)।
বলা বাহুল্য, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় চিরন্তন বিধান অনুযায়ী শোয়াইব (আঃ) ও তাঁর ঈমানদার সাথীগণকে উক্ত জনপদ হতে অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নিলেন। অতঃপর জিবরীলের এক গগণবিদারী নিনাদে অবাধ্য কওমের সকলে নিমেষে ধ্বংস হয়ে গেল। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,
وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْباً وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوْا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ- كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا فِيهَا أَلاَ بُعْداً لِّمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُوْدُ- (هود ৯৪-৯৫)-

‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি শোয়াইব ও তার ঈমানদার সাথীদের নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করলাম। আর পাপিষ্ঠদের উপর বিকট গর্জন আপতিত হল। ফলে তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে মরে পড়ে রইল’। ‘(তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হ’ল) যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। সাবধান! ছামূদ জাতির উপর অভিসম্পাতের ন্যায় মাদইয়ানবাসীর উপরেও অভিসম্পাত’ (হূদ ১১/৯৪-৯৫)। যদিও তারা দুনিয়াতে মযবুত ও নিরাপদ অট্টালিকায় বসবাস করত।
আছহাবে মাদইয়ানের উপরে গজবের ব্যাপারে কুরআনে ظُلَّةٌ (শো‘আরা ১৮৯), رَجْفَةٌ (হূদ ৯৪), صَيْحَةٌ (আ‘রাফ ৮৮) তিন ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বিকট নিনাদ, ভূমিকম্প। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আহলে মাদইয়ানের উপরে প্রথমে সাতদিন এমন ভীষণ গরম চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা দহন জ্বালায় ছটফট করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একটি ঘন কালো মেঘমালা পাঠিয়ে দিলেন, যার নীচ দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন কওমের লোকেরা ঊর্ধ্বশ্বাসে সেখানে দৌড়ে এল। এভাবে সবাই জমা হবার পর হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হল এবং মেঘমালা হতে শুরু হল অগ্নিবৃষ্টি। তাতে মানুষ সব পোকা-মাকড়ের মত পুড়ে ছাই হতে লাগল। ইবনু আববাস (রাঃ) ও মুহাম্মাদ বিন কা‘ব আল-কুরাযী বলেন, অতঃপর তাদের উপর নেমে আসে এক বজ্রনিনাদ। যাতে সব মরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল’।[তাফসীর ইবনে কাছীর, শো‘আরা ১৮৯; কুরতুবী] এভাবে কোনরূপ গ্রেফতারী পরোয়ানা ও সিপাই-সান্ত্রীর প্রহরা ছাড়াই আল্লাহদ্রোহীরা সবাই পায়ে হেঁটে স্বেচ্ছায় বধ্যভূমিতে উপস্থিত হয় এবং চোখের পলকে সবাই নিস্তনাবুদ হয়ে যায়।

মক্কা থেকে সিরিয়া যাওয়ার পথে এসব ধ্বংসস্থল নযরে পড়ে। আল্লাহ বলেন,وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيْشَتَهَا فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيْلاً وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ، ‘এসব জনপদ ধ্বংস হওয়ার পর পুনরায় আবাদ হয়নি অল্প কয়েকটি ব্যতীত। অবশেষে আমিই এ সবের মালিক রয়েছি’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৮)। তিনি বলেন, إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِيْنَ، ‘নিশ্চয়ই এর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে’ (হিজর ১৫/৭৫)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন এসব স্থান অতিক্রম করতেন, তখন আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে পড়তেন ও সওয়ারীকে দ্রুত হাঁকিয়ে নিয়ে স্থান অতিক্রম করতেন।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১২৫] অথচ এখনকার যুগের বস্ত্তবাদী লোকেরা এসব স্থানকে শিক্ষাস্থল না বানিয়ে পর্যটন কেন্দ্রের নামে তামাশার স্থলে পরিণত করেছে। আল্লাহ আমাদের সুপথ প্রদর্শন করুন- আমীন!
ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ বলেন, শু‘আয়েব (আঃ) ও তাঁর মুমিন সাথীগণ মক্কায় চলে যান ও সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। কা‘বা গৃহের পশ্চিম দিকে দারুন নাদওয়া ও দার বনু সাহ্মের মধ্যবর্তী স্থানে তাদের কবর হয়’।[আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/১৭৯] তবে এই সকল বর্ণনার ভিত্তি সুনিশ্চিত নয়। আর থাকলেও সেগুলি সবই এখন নিশ্চিহ্ন এবং সবই বায়তুল্লাহর চতুঃসীমার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...