রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মক্কায় প্রবেশ
ক্বাছওয়া উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে আনছার ও মুহাজির পরিবেষ্টিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কায় প্রবেশ করেন। এদিন তিনি আল্লাহর প্রতি বিনয়ী ও তাঁর নে‘মতের শুকরিয়া আদায়কারী হিসাবে মক্কায় প্রবেশ করেন। বিজয়ী সেনাপতির ন্যায় অহংকারীভাবে নয়। এ সময় তিনি সওয়ারীর উপরে বসে সূরা ফাৎহ বা তার কিছু অংশ ধীর কণ্ঠে বারবার পাঠ করছিলেন’ (বুখারী হা/৪২৮১, ৫০৪৭)। যুদ্ধের প্রস্তুততি থাকার কারণে রাসূল (সাঃ) এ দিন মুহরিম ছিলেন না। এ সময় তাঁর মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণের উপর কালো পাগড়ী ছিল’ (বুখারী হা/৪২৮৬, মুসলিম হা/১৩৫৮)।
অতঃপর তিনি মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং হাতের মাথা বাঁকানো লাঠি দ্বারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন।[1] এ সময় কা‘বাগৃহের ভিতরে ও বাইরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাতের লাঠি দ্বারা এগুলি ভাঙতে থাকেন এবং কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়তে থাকেন।وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوْقًا ‘তুমি বল, হক এসে গেছে, বাতিল দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই বাতিল দূরীভূত হয়েই থাকে’ (বনু ইসরাঈল ১৭/৮১)। তিনি আরও পড়েন,قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ ‘তুমি বল হক এসে গেছে এবং বাতিল আর না শুরু হবে, না ফিরে আসবে’ (সাবা ৩৪/৪৯)। অর্থাৎ সত্যের মুকাবিলায় মিথ্যা এমনভাবে পর্যুদস্ত হয় যে, তা কোন বিষয়ের সূচনা বা পুনরাবৃত্তির যোগ্য থাকে না’ (বুখারী হা/৪২৮৭)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী অতঃপর তিনি উসমান বিন ত্বালহাকে ডেকে তাকে ভিতর থেকে সমস্ত মূর্তি-প্রতিকৃতি বের করার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি তার মধ্যে ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দু’টি প্রতিকৃতি দেখেন। যাদের হাতে ভাগ্য নির্ধারণী তীর দেখে তিনি বলে ওঠেন,قَاتَلَهُمُ اللهُ لَقَدْ عَلِمُوا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ ‘মুশরিকদের আল্লাহ ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! তারা জানে যে, তাঁরা কখনোই এ ধরনের ভাগ্যতীর ব্যবহার করেননি’। তিনি বলেন,مَا كانَ إِبْراهِيمُ يَهُودِيًّا وَلا نَصْرانِيًّا، وَلكِنْ كانَ حَنِيفاً مُسْلِماً، وَما كانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘ইবরাহীম কখনো ইহূদী বা নাছারা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)। ইবনু আববাসের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, সেখানে মারিয়ামের ছবিও ছিল (বুখারী হা/৩৩৫১)। এভাবে সমস্ত ছবি-মূর্তি দূর হওয়ার পর তিনি কা‘বাগৃহে প্রবেশ করেন ও ঘরের চারিদিকে তাকবীর দেন (বুখারী হা/৪২৮৮)।
ইবনু উমরের বর্ণনায় এসেছে যে, অতঃপর তিনি ভিতরে প্রবেশ করেন ও দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা, বেলাল এবং উসমান বিন তালহা (রাঃ)। এরপর তিনি কা‘বার দরজা পিছনে রেখে সম্মুখ দেওয়ালের তিন হাত পিছনে দুই খাম্বার মাঝে দাঁড়িয়ে বাম দিকে এক খাম্বা ও ডান দিকে দুই খাম্বা এবং পিছনে তিন খাম্বা রেখে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেন। এ সময় কা‘বাগৃহে মোট ছয়টি খাম্বা ছিল’ (মুসলিম হা/১৩২৯; বুখারী হা/৫০৫)। কোন কোন বিদ্বান একে ‘তাহিইয়াতুল মসজিদ’ দু’রাক‘আত সালাত বলেছেন।[ফাৎহুল বারী ৩/৫৪৪, হা/১৫৯৮]
ঐদিন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কা‘বা গৃহের মধ্যে সালাত আদায় করেছিলেন কি-না, এ নিয়ে বেলাল ও উসামাহর দু’ধরনের বক্তব্য থাকায় বিদ্বানগণ একমত হতে পারেননি। বেলাল বলেছেন, ‘পড়েছেন দুই ইয়ামানী খাম্বার মাঝে’ (বুখারী হা/১৫৯৮, ৪২৮৯)। অন্যদিকে উসামা বলেছেন, ‘পড়েননি, বরং ঘরের চারদিকে হেটে তাকবীর দিয়েছেন’ (মুসলিম হা/১৩৩০, ফাৎহ ৩/৫৪৩)। এর সমন্বয় দু’ভাবে হতে পারে। ১. বেলালের বর্ণনা হ্যাঁ বোধক (مُثْبِتٌ)। তাছাড়া এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই। অতএব সেটাই অগ্রাধিকারযোগ্য। ২. উসামা বালতি ভরে পানি নিয়ে যখন প্রবেশ করেন, তখন তিনি তাকে (সালাত শেষে) দাঁড়িয়ে দো‘আ পাঠ ও তাকবীর দিতে দেখেন। উপরন্তু ঘরে ছিল অন্ধকার। অতএব বাহির থেকে ঢুকে সালাত দেখতে না পাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয় (ফাৎহ ৩/৫৪৭)। এটা নিশ্চিত যে, ঐ সময় রাসূল (সাঃ) ‘মুহরিম’ ছিলেন না (বুখারী হা/৪২৮৬)। অতএব মসজিদ হিসাবে সেখানে ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ দু’রাক‘আত নফল সালাত পড়াটাই স্বাভাবিক। পরবর্তীতে বিদায় হজ্জের সময় তিনি কা‘বার মধ্যে সালাত আদায় করেননি। বরং বাইরে মাক্বামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে কা‘বাকে সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। কেননা এভাবে আদায়ের নির্দেশ রয়েছে কুরআনে (বাক্বারাহ ২/১২৫)।[ফাৎহুল বারী ৩/৫৪৫, ৫৪৭, হা/১৫৯৮ ও ১৬০১] অতঃপর তিনি দরজা খুলে দেন। এসময় শত শত মানুষ কা‘বাগৃহের সম্মুখে দন্ডায়মান ছিল’ (মুসলিম হা/১৩২৯)। অতঃপর ত্বাওয়াফ শেষে উষ্ট্রীকে বসানোর জায়গা না পেয়ে বাতনে ওয়াদীতে সরিয়ে দেন (সহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮২৮)।
এসময় আবুবকর (রাঃ) তাঁর বৃদ্ধ ও অন্ধ পিতা আবু কুহাফাকে নিয়ে আসেন। তাকে দেখে রাসূল (সাঃ) বললেন, কেন তুমি তাকে বাড়ীতে রেখে এলে না? আমিই তাঁর কাছে যেতাম। আবুবকর (রাঃ) বললেন, আপনি যাওয়ার চাইতে তাঁরই আসার হক বেশী। অতঃপর তিনি পিতাকে সামনে বসিয়ে দিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) তাঁর বুকে হাত রেখে বললেন, ইসলাম কবুল করুন! নিরাপদ থাকুন’। তিনি ইসলাম কবুল করলেন।[ইবনু হিশাম ২/৪০৬]
রাসূল (সাঃ)-এর হাজূনে অবতরণ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
এদিন তিনি তাঁর নিজ পিতৃগৃহে অবতরণ করেননি। বরং তাঁর জন্য হাজূনে (حَجُون) প্রস্তুতকৃত তাঁবুতে অবতরণ করেন (বুখারী হা/৩৫৭; মুসলিম হা/৩৩৬)। এই স্থানেই কুরায়েশগণ বনু হাশেম ও মুসলমানদের সাথে বয়কটচুক্তি করেছিল, যা তিন বছর স্থায়ী হয়। উসামা বিন যায়েদ তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, বাড়িতে প্রবেশ করবেন কি? জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘আক্বীল আমাদের জন্য কোন ঘর-বাড়ি ছেড়ে গেছেন কি?(মুসলিম হা/১৩৫১; বুখারী হা/১৫৮৮) অর্থাৎ ‘আক্বীল ও তার বড় ভাই ত্বালিব, যারা তখন কাফের ছিলেন। বদর যুদ্ধের বছর কাফের অবস্থায় ত্বালিবের মৃত্যুর পর ‘আক্বীল তাদের বাড়ি-ঘর সব বেঁচে দিয়েছিলেন। আর আলী ও জা‘ফর ইসলামের কারণে আবু ত্বালিবের অংশীদার হননি। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, মুসলিম কোন কাফিরের উত্তরাধিকারী হয় না।[2]
১ম দিনের ভাষণ :
━━━━━━━━━━
মক্কা বিজয়ের দু’দিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একাধিক ভাষণ দিয়েছেন। পূর্বাপর সম্পর্ক বিবেচনায় ভাষণগুলিকে ১ম দিনের ও ২য় দিনের ভাষণ হিসাবে ভাগ করা হয়েছে। ১ম দিন তিনি কা‘বাগৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে কুরায়েশদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।-
(১) হামদ ও ছানা শেষে তিনি বলেন,اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لآ إلَه إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ صَدَقَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ ‘আল্লাহ সবার চেয়ে বড়, আল্লাহ সবার চেয়ে বড়, আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি এক, যাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সেনাদল সমূহকে একাই পরাভূত করেছেন’।
(২) أَلاَ كُلُّ مَأْثُرَةٍ أَوْ مَالٍ أَوْ دَمٍ فَهُوَ تَحْتَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ إِلاَّ سِدَانَةَ الْبَيْتِ وَسِقَايَةَ الْحَاجِّ ‘শুনে রাখ, সম্মান ও সম্পদের সকল অহংকার এবং রক্তারক্তি আমার এই পদতলে পিষ্ট হল। কেবলমাত্র বায়তুল্লাহর চাবি সংরক্ষণ ও হাজীদের পানি পান করানোর সম্মানটুকু ছাড়া (অর্থাৎ এ দু’টি দায়িত্ব তোমাদের জন্য বহাল রইল)।
(৩)أَلاَ وَقَتْلُ الْخَطَإِ شِبْهُ الْعَمْدِ السَّوْطُ وَالْعَصَا، فَفِيهِ الدِّيَةُ مُغَلَّظَةً مِائَةٌ مِنَ الْإِبِلِ أَرْبَعُونَ مِنْهَا فِي بُطُونِهَا أَوْلاَدُهَا ‘ভুলক্রমে হত্যা যা লাঠিসোটা দ্বারা হয়ে থাকে, তা ইচ্ছাকৃত হত্যার সমতুল্য। তাকে পূর্ণ রক্তমূল্য দিতে হবে একশ’টি উট। যার মধ্যে ৪০টি হবে গর্ভবতী’।[আবুদাঊদ হা/৪৫৪৭; সহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮২৮]
(৪) অতঃপর বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ، فَالنَّاسُ رَجُلاَنِ : مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ، أَنْتُمْ بَنُوْ آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ ‘হে জনগণ! আল্লাহ তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের অংশ ও পূর্ব পুরুষের অহংকার দূরীভূত করে দিয়েছেন। মানুষ দু’প্রকারের : মুমিন আল্লাহভীরু অথবা পাপাচারী হতভাগা। তোমরা আদম সন্তান। আর আদম ছিলেন মাটির তৈরী’ (আর মাটির কোন অহংকার নেই)। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং তিনি সবকিছুর খবর রাখেন’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।[তিরমিযী হা/৩২৭০; আবু দাউদ হা/৫১১৬; মিশকাত হা/৪৮৯৯]
(৫) তিনি বললেন,لاَ يُقْتَلُ قُرَشِىٌّ صَبْرًا بَعْدَ هَذَا الْيَوْمِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘আজকের দিনের পর কোন কুরায়শীকে আর যুদ্ধাবস্থা ব্যতীত হত্যা করা হবে না’ (মুসলিম হা/১৭৮২)। অর্থাৎ তারা এদিন সবাই মুসলমান হবে এবং কেউ মুরতাদ হবে না। আর অন্যায়ভাবে তাদের কাউকে হত্যা করা হবে না (ঐ, শরহ নববী)। অতঃপর তিনি বলেন,أَقُوْلُ هَذَا وَاسْتَغْفَرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ ‘আমি এগুলি বললাম। অতঃপর আমি আল্লাহর নিকট আমার জন্য ও তোমাদের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি’ (সহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮২৮)।
(৬) ভাষণ শেষে তিনি সমবেত কুরায়েশদের উদ্দেশ্যে বলেন,يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ مَا تَرَوْنَ أَنِّي فَاعِلٌ بِكُمْ؟ ‘হে কুরায়েশগণ! আমি তোমাদের সাথে কিরূপ আচরণ করব বলে তোমরা আশা কর’? সবাই বলে উঠল,خَيْرًا، أَخٌ كَرِيمٌ وَابْنُ أَخٍ كَرِيمٍ ‘উত্তম আচরণ। আপনি দয়ালু ভাই ও দয়ালু ভাইয়ের পুত্র’। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন,فَإِنّي أَقُولُ لَكُمْ كَمَا قَالَ يُوسُفُ لِإِخْوَتِهِ لاَ تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ اذْهَبُوا فَأَنْتُمُ الطُّلَقَاءُ ‘শোন! আমি তোমাদের সেকথাই বলছি, যেকথা ইউসুফ তার ভাইদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি আজ আর কোন অভিযোগ নেই’ (ইউসুফ ১২/৯২)। যাও তোমরা সবাই মুক্ত’।[ইবনু হিশাম ২/৪১২; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬০; আর-রাহীক্ব ৪০৫ পৃঃ] বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ।[যঈফাহ হা/১১৬৩; মা শা-‘আ ১৯০ পৃঃ] কিন্তু মতন (Text) মশহূর এবং এর মর্ম (Meaning) সঠিক। কারণ ঐ দিন কাউকে বন্দী করা হয়নি বা গণীমত সংগ্রহ করা হয়নি। বরং সবাই মুক্ত ছিল এবং উপস্থিত সবাই বায়‘আত গ্রহণ করে ইসলাম কবুল করেছিল।
উক্ত প্রসঙ্গে উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেন, ‘ওহুদের দিন আনছারদের ৬৪ জন ও মুহাজিরদের ৬ জন শহীদ হন। তখন রাসূল (সাঃ)-এর সাথীগণ বলেন, ‘যদি আমাদের নিকট মুশরিকদের সঙ্গে এইরূপ কোন দিন আসে, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ প্রতিশোধ নেব। অতঃপর যখন মক্কা বিজয়ের দিন এল, তখন একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি বলে উঠল, لاَ قُرَيْشَ بَعْدَ الْيَوْمِ، فَنَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمِنَ الْأَسْوَدُ وَالْأَبْيَضُ إِلاَّ فُلاَنًا وَفُلاَنًا، نَاسًا سَمَّاهُمْ ‘আজকের দিনের পর আর কোন কুরায়েশ নেই’। তখন রাসূল (সাঃ)-এর একজন ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে বললেন, কালো-সাদা সকলে নিরাপত্তা পাবে, অমুক অমুক ব্যতীত, যাদের নাম তিনি বললেন। এ সময় আল্লাহ নাযিল করেন,وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُمْ بِهِ وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ ‘যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে। আর যদি তোমরা ছবর কর, তাহলে সেটাই ছবরকারীদের জন্য উত্তম হবে’ (নাহল ১৬/১২৬)। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন,نَصْبِرُ وَلاَ نُعَاقِبُ ‘আমরা ছবর করব, প্রতিশোধ নেব না’ (আহমাদ হা/২১২৬৭, সনদ হাসান)।
সেমতে ছবর করা হয়, ঘোষিত মাত্র কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। বস্ত্ততঃ এদিন কিছু সময়ের জন্য রক্তপাত হালাল করা হলেও ২য় দিনের ভাষণে তা চিরকালের জন্য হারাম ঘোষণা করা হয়।
১ম দিনের অন্যান্য খবর :
━━━━━━━━━━━━━━━
(ক) কালো খেযাব নিষিদ্ধ (نهى الخضاب الأسود) : এদিন আবুবকর (রাঃ) স্বীয় পিতা আবু কুহাফাকে ইসলাম কবুলের জন্য নিয়ে এলে তাঁর মাথার চুল ও দাড়ি কাশফুলের মত সাদা দেখে রাসূল (সাঃ) বলেন,غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ ‘তোমরা এঁর চুলগুলি কালো ব্যতীত অন্য কোন রং দিয়ে পরিবর্তন করে দাও’ (মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪)। ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন,يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِى آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لاَ يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ ‘শেষ যামানায় একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা কালো রং-এর খেযাব লাগাবে কবুতরের বুকের ঠোসার কালো পাখনা সমূহের ন্যায়। এরা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’।[আবুদাঊদ হা/৪২১২; নাসাঈ হা/৫০৭৫; মিশকাত হা/৪৪৫২]
(খ) কা‘বাগৃহের চাবি হস্তান্তর(رد مفتاح بيت الله) : জাহেলী যুগ থেকেই বনু হাশেমের উপর এবং সে হিসাবে ইসলামী যুগের প্রাক্কালে হযরত আববাস-এর উপরে হাজীদের পানি পান করানোর এবং উসমান বিন ত্বালহার উপর কা‘বার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল। উসমান বিন ত্বালহা ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন’। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সাঃ) তার নিকটেই পুনরায় চাবি হস্তান্তর করেন (ইবনু হিশাম ২/৪১২)। যা আজও অব্যাহত আছে। যাদের ১০৮তম বংশধর শায়খ আব্দুল কাদের আশ-শায়বী ৭৫ বছর বয়সে গত ২৩শে অক্টোবর’২০১৪-তে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পরে এখন দায়িত্বে আছেন শায়বী পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ড. সালেহ বিন ত্বোয়াহা আশ-শায়বী।[মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ডিসেম্বর’১৪, ১৮তম বর্ষ ৩য় সংখ্যা ৪৬ পৃঃ]
(গ) ৮ রাক‘আত নফল সালাত আদায়(اداء الصلاة النافلت ثماني ركعات) : মক্কা বিজয় সম্পন্ন হওয়ার পর দুপুরের কিছু পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘হাজূনে’ তাঁর অবস্থান স্থলে গমন করেন ও গোসল সারেন। এ সময় ফাতেমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করেন। গোসলের সময় আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানী (যিনি ঐ দিন ইসলাম কবুল করেন), সেখানে যান ও অনুমতি প্রার্থনা করেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) এক কাপড়ে ৮ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, এটি ছিল ‘ছালাতুয যুহা’।[3] অতঃপর তিনি উম্মে হানীর সাথে কথা বলেন। ঐ সময় উম্মে হানীর গৃহে তার দু’জন দেবর হারেছ বিন হিশাম ও আব্দুল্লাহ বিন আবু রাবী‘আহ আশ্রিত ছিল। আলী (রাঃ) তাদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন। উম্মে হানী তাদের জন্য রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে আশ্রয় চাইলে তিনি তাদের আশ্রয় দেন (হাকেম হা/৫২১০; আহমাদ হা/২৬৯৩৬)। ইবনু কাছীর বলেন, এটি ছিল বিজয়োত্তর শুকরিয়ার সালাত, যা তিনি দুই দুই রাক‘আত করে পড়েছিলেন। পরে এটাই রীতি হয়ে যায়। যেমন সা‘দ ইবনু আবী ওয়াকক্বাছ মাদায়েন বিজয়ের দিন এটা পড়েন।[ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নছর, ৮/৪৮২]
(ঘ) কা‘বার ছাদে আযানের ধ্বনি(التأذين على سقف الكعبة) : যোহরের ওয়াক্ত সমাগত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেলালকে নির্দেশ দিলেন কা‘বার ছাদে দাঁড়িয়ে আযান দিতে। শুরু হল বেলালের মনোহারিণী কণ্ঠের গুরুগম্ভীর আযান ধ্বনি। শিরকী জাহেলিয়াত খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো তাওহীদ ও রিসালাতের গগনভেদী আওয়াযে। মক্কার পাহাড়ে ও উপত্যকায় সে আওয়ায ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে চলে গেল দূরে বহু দূরে। ছবি ও মূর্তিহীন কা‘বা পুনরায় ইবরাহীমী যুগের আসল চেহারা ফিরে পেল। বেলালী কণ্ঠের এ আযান ধ্বনি যেন তাই খোদ কা‘বারই কণ্ঠস্বর। মুমিনের হৃদয়ে তা এনে দিল এক অনাবিল আনন্দের অব্যক্ত মূর্চ্ছনা, এক অনুপম আবেগেয় বাঙ্ময় অনুভূতি। আড়াই হাযার বছর পূর্বে নির্মিত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের স্মৃতিধন্য কা‘বার পাদদেশে মাক্বামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে সালাতের ইমামতি করবেন ইসমাঈল-সন্তান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। মক্কার অলিতে-গলিতে শুরু হল এক অনির্বচনীয় আনন্দের ফল্গুধারা। দলে দলে মুমিন নর-নারী ছুটলো কা‘বার পানে। সে দৃশ্য কেবল মনের চোখেই দেখা যায়। লিখে প্রকাশ করা যায় না। কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়, মুখে বলা যায় না। কিন্তু শয়তান কখনই তার স্বভাব ছাড়ে না।
(ঙ) যাদের রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করা হয়(رجال من أهدر دمائهم) : মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বড় বড় পাপীদের মধ্যে ৯ জনের রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করেন এবং কঠোর নির্দেশ জারী করেন যে, এরা যদি কা‘বার গেলাফের নীচেও আশ্রয় নেয়, তথাপি তাদের হত্যা করা হবে। এই নয় জন ছিল- (১) আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবু সারাহ। ইনি উসমান গণী (রাঃ)-এর দুধ ভাই ছিলেন। পরে মুসলমান হন এবং রাসূল (সাঃ)-এর ‘অহি’ লেখক হন। পরে ‘মুরতাদ’ হয়ে কুরায়েশদের কাছে ফিরে যায়। (২) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল। এ ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) তাকে যাকাত সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি তার মুসলিম গোলামকে হত্যা করেন। অতঃপর ‘মুরতাদ’ হয়ে মুশরিকদের সাথে মিশে যায়। সে কা‘বাগৃহের গেলাফ ধরে ঝুলছিল (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৯০)। জনৈক সাহাবী এখবর দিলে রাসূল (সাঃ) তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। (৩-৪) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বালের দুই দাসী। যারা রাসূল (সাঃ)-কে ব্যঙ্গ করে গান গাইত (৫) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব(حُوَيرث بن نُقَيذ)। সে মক্কায় রাসূল (সাঃ)-কে কঠিনভাবে কষ্ট দিত। এ ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় প্রেরণের সময় রাসূল-কন্যা হযরত ফাতেমা ও উম্মে কুলছূমকে তীর মেরে উটের পিঠ থেকে ফেলে দিয়েছিল’। (৬) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ(مِقْيَس بن حُبابة)। এ ব্যক্তি ইতিপূর্বে মুসলমান হয়ে জনৈক আনছার সাহাবীকে হত্যা করে ‘মুরতাদ’ হয়ে মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। (৭) সারাহ- যে আব্দুল মুত্ত্বালিবের সন্তানদের কারু দাসী ছিল। ধারণা করা হয় যে, এই দাসীই মদীনা থেকে গোপনে হাতেব বিন আবু বালতা‘আহর পত্র বহন করেছিল (ইবনু হিশাম ২/৩৯৮)। (৮) ইকরিমা বিন আবু জাহল (ইবনু হিশাম ২/৪০৯-১০)। (৯) হাববার ইবনুল আসওয়াদ(هَبَّار بن الأَسوَد)। এ ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর গর্ভবতী কন্যা যয়নবকে হিজরতের সময় তার হাওদায় বর্শা নিক্ষেপ করেছিল। যাতে আহত হয়ে তিনি উটের পিঠ থেকে নীচে পাথরের উপরে পতিত হন এবং তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায় (ইবনু হিশাম ১/৬৫৪)।
উপরের ৯ জনের মধ্যে যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়, তারা হল- (১) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল। তাকে হত্যা করেন সাঈদ বিন হুরায়েছ আল-মাখযূমী এবং আবু বারযাহ আসলামী। (২) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ। তার কওমের নুমায়লা বিন আব্দুল্লাহ তাকে হত্যা করেন। (৩) ইবনু খাত্বালের দুই দাসীর মধ্যে একজন। (৪) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব। আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করেন।
অতঃপর বাকী ৫ জন যাদের ক্ষমা করা হয় তারা হলেন : (১) আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ। মক্কা বিজয়ের দিন হযরত উসমান (রাঃ) তাকে সাথে নিয়ে রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ফলে তাকে ক্ষমা করা হয়। পরে আমৃত্যু তার ইসলাম খুবই ভাল ছিল। (২) ইকরিমা বিন আবু জাহল। তার স্ত্রী এসে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে ইয়ামনের পথে পলায়নরত অবস্থায় তার স্ত্রী গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তার ইসলাম খুবই ভাল ছিল। (৩) হাববার ইবনুল আসওয়াদ। মক্কা বিজয়ের দিন এই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে মুসলমান হন এবং তার ইসলাম সুন্দর ছিল। (৪) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজনের জন্য আশ্রয় চাওয়া হয়। অতঃপর সে ইসলাম কবুল করে। (৫) সারাহর জন্যও আশ্রয় প্রার্থনা করা হয় এবং সেও ইসলাম কবুল করে।[ইবনু হিশাম ২/৪১০; মিশকাত হা/৩১৮০]
উল্লেখ্য যে, ইবনু হাজার বিভিন্ন সূত্রে ৮ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী সহ মোট ১৪ জনের কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর বর্ণিত তালিকা মতে পুরুষের সংখ্যা হয় ৯ জন এবং নারীর সংখ্যা ৪ জন সহ মোট ১৩ জন। যাদের মধ্যে ইতিপূর্বে বর্ণিত ৬ জন পুরুষ ছাড়াও বাকী ৩ জন হলেন, (ক) হারেছ বিন ত্বালাত্বেল আল-খুযাঈ(حارثُ بنُ طَلاطِلَ الْخُزاعِيُّ)। যাকে আলী (রাঃ) হত্যা করেন। (খ) হামযাহ (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহ্শী বিন হারব, যিনি পরে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। (গ) রাসূল (সাঃ)-কে ব্যঙ্গকারী বিখ্যাত কবি কা‘ব বিন যুহায়ের, যিনি পরে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর ১ জন নারী হলেন, (ঘ) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওৎবা। যিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।[ফাৎহুল বারী হা/৪২৮০; আর-রাহীক্ব ৪০৬-০৭ পৃঃ]
উপরের হিসাব মতে নিহতদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জন। (১) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল (২) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ (৩) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব (৪) হারেছ বিন ত্বালাত্বেল আল-খুযাঈ এবং একজন নারী- (৫) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজন।
ক্ষমাপ্রাপ্তদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৫ জন। (১) আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ (২) ইকরিমা বিন আবু জাহল (৩) হাববার ইবনুল আসওয়াদ (৪) ওয়াহশী বিন হারব ও (৫) কা‘ব বিন যুহায়ের এবং নারী ৩ জন।- (৬) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজন (৭) দাসী সারাহ (৮) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওৎবা।
উল্লেখ্য যে, রক্ত প্রবাহিত করা স্রেফ মক্কা বিজয়ের দিন কয়েক ঘণ্টার(سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ) জন্য হালাল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে চিরকালের জন্য হারাম করা হয় (বুখারী হা/২৪৩৪)।
এদিকে মক্কার অন্যতম নেতা সাফওয়ান বিন উমাইয়ার রক্ত বৃথা সাব্যস্ত করা না হলেও তিনি পালিয়ে যান। ওমায়ের বিন ওয়াহাব আল-জুমাহী তার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করলে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তা মনযূর করেন এবং তাকে আশ্রয় দানের প্রতীক স্বরূপ নিজের পাগড়ী প্রদান করেন। যে পাগড়ী পরে তিনি বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। অতঃপর ওমায়ের যখন সাফওয়ানের নিকটে পৌঁছেন, তখন তিনি জেদ্দা হতে ইয়ামন যাওয়ার জন্য জাহাযে ওঠার প্রস্তুততি নিচ্ছিলেন। ওমায়ের তাকে ফিরিয়ে আনেন। তিনি এসে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট দু’মাস সময়ের আবেদন করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে চার মাস সময় দেন। অতঃপর সাফওয়ান ইসলাম কবুল করেন। তার স্ত্রী পূর্বেই ইসলাম কবুল করেছিলেন। ফলে তাদের মধ্যে বিবাহ বহাল রাখা হয়।[4] সাফওয়ান মুশরিক অবস্থায় রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষে হোনায়েন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
২য় দিনের ভাষণ :
━━━━━━━━━━
(১) আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া কর্তৃক নিযুক্ত মদীনার গবর্ণর ‘আমর বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ যখন মক্কায় অভিযানের জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন, তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বিখ্যাত সাহাবী আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, ‘হে আমীর! আপনি কি আমাকে সেই ভাষণটি বলার অনুমতি দিবেন, যা আমি নিজ কানে শুনেছি ও নিজ অন্তরে উপলব্ধি করেছি এবং নিজ দুই চোখে দেখেছি, যখন তিনি কথাগুলি বলছিলেন মক্কা বিজয়ের দ্বিতীয় দিনে?
حَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللهُ وَلَمْ يُحَرِّمْهَا النَّاسُ، فَلاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ يَسْفِكَ بِهَا دَمًا، وَلاَ يَعْضِدَ بِهَا شَجَرَةً، فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ لِقِتَالِ رَسُولِ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : فِيهَا فَقُولُوا إِنَّ اللهَ قَدْ أَذِنَ لِرَسُولِهِ، وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ. وَإِنَّمَا أَذِنَ لِى فِيهَا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، ثُمَّ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالأَمْسِ، وَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ- رواه البخارىُّ-
হামদ ও ছানার পরে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই মক্কাকে আললাহ হারাম করেছেন। অথচ লোকেরা এটিকে হারাম করেনি। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে তার জন্য এখানে রক্তপাত ও বৃক্ষ কর্তন হালাল নয়। যদি কেউ আল্লাহর রাসূলের রক্তপাতের দোহাই দিয়ে এটাকে হালাল করতে চায়, তাহলে তোমরা বলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি অনুমতি দেননি। আর তিনি তো আমাকে অনুমতি দিয়েছিলেন কেবল দিনের কিছু সময়ের জন্য। অতঃপর আজ তার সম্মান ফিরে এসেছে, যে সম্মান ছিল গতকাল। সুতরাং তোমাদের উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতগণের নিকট পৌঁছে দেয়’ (বুখারী হা/১০৪)। উল্লেখ্য যে, উক্ত যুদ্ধে কা‘বাগৃহে রক্তপাত হয় এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) ৭৩ বছর বয়সে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন (ঐ, ফাৎহুল বারী)।
(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
لَمَّا فَتَحَ اللهُ عَلَى رَسُولِهِ- صلى الله عليه وسلم- مَكَّةَ قَامَ فِى النَّاسِ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ اللهَ حَبَسَ عَنْ مَكَّةَ الْفِيلَ وَسَلَّطَ عَلَيْهَا رَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ، فَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لأَحَدٍ كَانَ قَبْلِى، وَإِنَّهَا أُحِلَّتْ لِى سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ وَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لأَحَدٍ بَعْدِى، فَلاَ يُنَفَّرُ صَيْدُهَا وَلاَ يُخْتَلَى شَوْكُهَا وَلاَ تَحِلُّ سَاقِطَتُهَا إِلاَّ لِمُنْشِدٍ، وَمَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيلٌ فَهْوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ، إِمَّا أَنْ يُفْدَى وَإِمَّا أَنْ يُقِيدَ. فَقَالَ الْعَبَّاسُ إِلاَّ الإِذْخِرَ، فَإِنَّا نَجْعَلُهُ لِقُبُورِنَا وَبُيُوتِنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : إِلاَّ الإِذْخِرَ، فَقَامَ أَبُو شَاهٍ- رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ- فَقَالَ اكْتُبُوا لِى يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : اكْتُبُوا لأَبِى شَاهٍ- رواه البخارىُّ-
‘যখন আল্লাহ তাঁর রাসূলকে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর হাম্দ ও ছানা শেষে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মক্কা থেকে হস্তীওয়ালাদের প্রতিরোধ করেছিলেন এবং তার উপরে তিনি তাঁর রাসূল ও মুমিনদের বিজয়ী করেছেন। আমার পূর্বে কারু জন্য এখানে রক্তপাত হালাল ছিল না। দিনের কিছু সময়ের জন্য কেবল আমার জন্য হালাল করা হয়। আর তা আমার পরে কারু জন্য হালাল হবে না। অতএব এখানকার কোন শিকার কেউ তাড়াবে না। এখানকার কোন কাঁটা কেউ উঠাবে না। কোন হারানো বস্ত্ত কেউ কুড়াবে না। তবে উক্ত বিষয়ে প্রচারকারী ব্যতীত। যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের জন্য দু’টি এখতিয়ার থাকবে। তারা চাইলে হত্যার বদলে হত্যা করবে অথবা রক্তমূল্য গ্রহণ করবে। এ সময় আববাস (রাঃ) বললেন, ‘ইযখির’ (الْإِذْخِر) ঘাস ব্যতীত। কেননা এটি আমরা ব্যবহার করে থাকি আমাদের বাড়ী-ঘরের জন্য এবং কবরের জন্য। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘ইযখির’ ব্যতীত। এসময় ‘আবু শাহ’ নামক জনৈক ইয়ামনবাসী উঠে দাঁড়িয়ে বলল, اُكْتُبْ لِى يَا رَسُوْلَ اللهِ ‘হে আল্লাহর রাসূল’! কথাগুলি আমাকে লিখে দিন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন,اُكْتُبُوْا لِأَبِىْ شَاهٍ ‘তোমরা আবু শাহকে কথাগুলি লিখে দাও’ (বুখারী হা/২৪৩৪; মুসলিম হা/১৩৫৫)। রাসূল (সাঃ)-এর এই নির্দেশের মধ্যে তাঁর জীবদ্দশায় হাদীছ সংকলনের দলীল পাওয়া যায়।
একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এই দিন রাসূল (সাঃ)-এর মিত্র বনু খোযা‘আহ গোত্রের লোকেরা বনু লাইছ(بَنُو لَيْث) গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করে জাহেলিয়াতের সময় তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যার বদলা নেয়। একথা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনগণের উদ্দেশ্যে উক্ত কথা বলেন (বুখারী হা/১১২)।
আবু হুরায়রা ও আবু শুরাইহ উভয় রাবী কর্তৃক আরও বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ خُزَاعَةَ وَارْفَعُو أَيْدِيَكُمْ عَنِ الْقَتْلِ فَقَدْ كَثُرَ إِنْ يَّقَعَ ‘হে বনু খোযা‘আহ! হত্যা করা থেকে নিবৃত্ত হও। কেননা হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে এর সংখ্যা বেড়ে যাবে’ (বুখারী হা/১১২; আহমাদ হা/১৬৪২৪)। তিনি বলেন,فَمَنْقُتِلَ بَعْدَ مَقَامِيْ هَذَا فَأَهْلُهُ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ إِنْ شَاءُوْا فَدَمُ قَاتِلِهِ وَإِنْ شَاءُوْا فَعَقْلُهُ ‘অতএব এর পরে যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের জন্য দু’টি এখতিয়ার থাকবে। তারা চাইলে হত্যার বদলে হত্যা করবে অথবা রক্তমূল্য গ্রহণ করবে’ (আহমাদ হা/১৬৪২৪)।
(৩) এদিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকাহে মুৎ‘আহ চিরকালের জন্য হারাম করে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِى الاِسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ وَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَىْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيلَهُ وَلاَ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا ‘হে জনগণ! আমি তোমাদের জন্য নিকাহে মুৎ‘আহ বা সাময়িকভাবে ঠিকা বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। এক্ষণে আল্লাহ এটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তির নিকট এই ধরনের কোন মহিলা আছে, তাকে ছেড়ে দাও। তাকে যা কিছু সম্পদ তোমরা দিয়েছ, সেখান থেকে কিছুই নিয়োনা’ (মুসলিম হা/১৪০৬ (২১)।
ভাষ্যকার ইমাম নববী বলেন, অত্র হাদীছ দ্বারা বিগত সাময়িক হুকুম সমূহ রহিত করা হয়েছে। যেমন কবর যিয়ারত প্রথমে নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে তা রহিত করা হয় এবং যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়। অত্র হাদীছের মাধ্যমে নিকাহে মুৎ‘আহকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে’ (ঐ, শরহ নববী)।
সাফা পাহাড়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে রাসূল (সাঃ)-এর দো‘আ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
মক্কা বিজয় সমাপ্ত হওয়ায় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দ্বিতীয় দিন সাফা পাহাড়ের শীর্ষে ওঠেন এবং কা‘বার দিকে ফিরে দু’হাত তুলে আল্লাহর প্রশংসা করেন। অতঃপর ইচ্ছা মত প্রাণভরে যা খুশী দো‘আ করতে থাকেন’ (মুসলিম হা/১৭৮০)।
আনছারদের সন্দেহ :
━━━━━━━━━━━━
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনায় রত ছিলেন, তখন আনছারগণ আপোষে বলাবলি করতে থাকেন, হয়তবা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মক্কাতেই থেকে যাবেন। আর মদীনায় ফিরে যাবেন না। কেননা মক্কা তাঁর শহর, তাঁর দেশ ও তাঁর জন্মভূমি(بَلَدُهُ وَوَطَنُهُ وَمَوْلِدُهُ)। দো‘আ থেকে ফারেগ হয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আনছারদের ডেকে বলেন, তোমরা কি বলছিলে? তারা বললেন, তেমন কিছু নয়। কিন্তু রাসূল (সাঃ)-এর পীড়াপীড়িতে অবশেষে তারা সব বললেন। তখন জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন,مَعَاذَ اللهِ الْمَحْيَا مَحْيَاكُمْ وَالْمَمَاتُ مَمَاتُكُمْ ‘আল্লাহর আশ্রয় চাই। আমার জীবন তোমাদের সাথে ও আমার মরণ তোমাদের সাথে’।[ইবনু হিশাম ২/৪১৬; ফিক্বহুস সীরাহ, ৩৯৯ পৃঃ]
জনগণের নিকট থেকে বায়‘আত গ্রহণ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
মক্কা বিজয়ের দ্বিতীয় দিন হাযার হাযার লোক সাফা পাহাড়ের পাদদেশে জমা হতে থাকে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর হাতে ইসলামের বায়‘আত নেবার জন্য। রাসূল (সাঃ) সাফা পাহাড়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা শেষে উপবেশন করলেন এবং উমর (রাঃ) তাঁর নীচে বসলেন জনগণের বায়‘আত নেবার জন্য’।[ইবনু হিশাম ২/৪১৬; আর-রাহীক্ব ৪০৮ পৃঃ] আসওয়াদ বিন খালাফ (রাঃ) বলেন, আমি ঐ দিন রাসূল (সাঃ)-কে ছোট-বড় নারী-পুরুষ সকলের নিকট থেকে বায়‘আত নিতে দেখেছি ইসলাম ও কালেমা শাহাদাতের উপরে’।[আহমাদ হা/১৫৪৬৯; হাকেম হা/৫২৮৩]
মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম, ঈমান ও জিহাদের উপরে বায়‘আত গ্রহণ করা হয়। হিজরতের উপরে নয়। কেননা রাসূল (সাঃ) ঐ দিন বলেন,لاَ هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ، وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا ‘মক্কা বিজয়ের পর কোন হিজরত নেই। তবে জিহাদ ও জিহাদের নিয়ত বাকী রইল। যখন তোমাদেরকে আমীরের পক্ষ থেকে জিহাদে বের হতে বলা হবে, তখন তোমরা বের হবে’।[বুখারী হা/২৮২৫; মুসলিম হা/১৩৫৩] কারণ মক্কা এখন দারুল ইসলামে পরিণত হয়েছে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের নির্দেশ রহিত হয়েছে। কিন্তু দারুল কুফর থেকে হিজরত রহিত হয় নি। অতএব মুসলমানদের উপরে হিজরত ওয়াজিব হবে, যখন তার দ্বীন পালনে বাধা সৃষ্টি হবে’ (ফাৎহুল বারী হা/৩৯০০-এর ব্যাখ্যা)।
মহিলাদের বায়‘আত :
━━━━━━━━━━━━━
পুরুষের বায়‘আত শেষ হলে মহিলাদের বায়‘আত শুরু হয় (আল-বিদায়াহ ৪/৩১৯)। এসময় আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবাহ উপস্থিত হন। তিনি রাসূল (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,يَا رَسُولَ اللهِ مَا كَانَ مِمَّا عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَهْلُ خِبَاءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ أَنْ يَذِلُّوا مِنْ أَهْلِ خِبَائِكَ- ثُمَّ مَا أَصْبَحَ الْيَوْمَ أَهْلُ خِبَاءٍ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ يَعِزُّوا مِنْ أَهْلِ خِبَائِكَ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আপনার পরিবারের চাইতে অন্য কোন পরিবারের ব্যাপারে আমি আকাংখা করতাম না যে, তারা লাঞ্ছিত হৌক। কিন্তু এখন যমীনের বুকে আপনার পরিবারের ব্যাপারেই আমি সবচেয়ে বেশী আকাংখী যে, তারা সম্মানিত হৌন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন, (তুমি যা বলছ) সেটাই ঠিক। অতঃপর হিন্দা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ সুফিয়ান কৃপণ স্বভাবের মানুষ। আমি যদি তার বিনা অনুমতিতে তার পরিবার-পরিজনের জন্য তার সম্পদ থেকে খরচ করি, এতে কি আমার কোন দোষ হবে? রাসূল (সাঃ) বললেন, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ব্যয় করলে কোন দোষ নেই।[বুখারী হা/৩৮২৫, ৫৩৫৯; মুসলিম হা/১৭১৪]
মক্কায় অবস্থান ও কার্যসমূহ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━
মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে ঊনিশ দিন অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি সর্বদা মানুষকে তাক্বওয়ার উপদেশ দেন এবং হেদায়াতের রাস্তাসমূহ বাৎলিয়ে দিতে থাকেন। আবু উসায়েদ আল-খোযাঈকে দিয়ে হারাম শরীফের নতুন সীমানা স্তম্ভসমূহ খাড়া করেন। ইসলামের প্রচারের জন্য এবং মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার জন্য চারদিকে ছোট ছোট সেনাদল প্রেরণ করেন। এছাড়া ঘোষকের মাধ্যমে মক্কার অলিতে-গলিতে প্রচার করে দেন যে,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يَدَعْ فِيْ بَيْتِهِ صَنَمًا إِلاَّ كَسَرَهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপরে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার বাড়ীতে রক্ষিত মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে’।[ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/১০৪; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৪।]
বিভিন্ন এলাকায় প্রেরিত সেনাদল :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
১. সারিইয়া খালেদ বিন অলীদ (‘উযযা’ মূর্তি ধ্বংস;(سرية خالد لكسر العزى : মক্কা বিজয়ের এক সপ্তাহ পরে ২৫শে রামাযান তারিখে খালেদ বিন অলীদের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি অশ্বারোহী দল মক্কা থেকে উত্তর-পূর্বে ত্বায়েফের পথে ৪০ কি. মি. দূরে নাখলায় প্রেরিত হয় ‘উযযা’ (الْعُزَّى) মূর্তি ধ্বংস করার জন্য। এই মূর্তিটি ছিল কুরায়েশ ও বনু কেনানাহ গোত্রের পূজিত সবচেয়ে বড় মূর্তি। খালেদ বিন অলীদ (রাঃ) মূর্তিটি ভেঙ্গে দিয়ে চলে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا؟ ‘কিছু দেখেছ কি’? বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাহলে তুমি ভাঙ্গোনি। আবার যাও ওটা ভেঙ্গে এসো’। এবার খালেদ উত্তেজিত হয়ে কোষমুক্ত তরবারি নিয়ে ছুটলেন এবং সেখানে যেতেই এক কৃষ্ণাঙ্গ ও বিস্রস্ত চুল বিশিষ্ট নগ্ন মহিলাকে তাদের দিকে বেরিয়ে আসতে দেখেন। তাকে দেখে মন্দির প্রহরী চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিন্তু খালেদ তাকে এক কোপে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন। তারপর রাসূল (সাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে রিপোর্ট করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,نَعَمْ تِلْكَ الْعُزَّى وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تُعْبَدَ فِي بِلاَدِكُمْ أَبَدًا ‘হ্যাঁ এটাই ‘উযযা। তোমাদের দেশে পূজা পাওয়ার ব্যাপারে সে এখন চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেল’।[যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫; নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭] إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ إِلاَّ إِنَاثًا ‘মূর্তিপূজারীরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নারীদের আহবান করে’ (নিসা ৪/১১৭)-এর ব্যাখ্যায় উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন,مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’ (আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান)। এরা মানুষকে অলক্ষ্যে থেকে প্রলুব্ধ করে এবং দলে দলে লোকেরা বিভিন্ন মূর্তি, প্রতিকৃতি, বেদী, মিনার ও কবরে গিয়ে অযথা শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং মিথ্যা আশায় প্রার্থনা করে। যে বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে কোনরূপ দলীল অবতীর্ণ হয়নি।[যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৪-৬৫]
২. সারিইয়া আমর ইবনুল ‘আছ (‘সুওয়া‘ মূর্তি ধ্বংস;(سرية عمرو لكسر سواع : আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-কে একদল সৈন্যসহ রামাযান মাসেই পাঠানো হয় হুযায়েল(بنو هُذَيل) গোত্রের পূজিত সুওয়া‘ (سُوَاع) নামক বড় মূর্তিটি চূর্ণ করার জন্য। যা ছিল মক্কা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ২৫ কি. মি. দূরে রিহাত্ব (رِهَاط) অঞ্চলে। আমর সেখানে পৌঁছলে মন্দির প্রহরী বলল, কি চাও তোমরা? আমর বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এটাকে ভাঙ্গার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন’। সে বলল, তোমরা সক্ষম হবে না’। আমর বললেন, কেন? সে বলল, তোমরা (প্রাকৃতিকভাবে) বাধাপ্রাপ্ত হবে’। আমর বললেন,حَتَّى الآن أَنْتَ عَلَى الْبَاطِلِ؟ فَهَلْ يَسْمَعُ أَوْ يَبْصِرُ؟ ‘তুমি এখনো বাতিলের উপরে রয়েছ? সে কি শুনতে পায়, না দেখতে পায়?’ বলেই তিনি ওটাকে গুঁড়িয়ে দিলেন। অতঃপর প্রহরীকে বললেন, এবার তোমার মত কি? সে বলে উঠলো, أَسْلَمْتُ للهِ ‘আমি আল্লাহর জন্য ইসলাম কবুল করলাম’।[তারীখ ত্বাবারী ৩/৬৬; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫]
৩. সারিইয়া সা‘দ বিন যায়েদ আশহালী (‘মানাত’ মূর্তি ধ্বংস; (سرية سعد لكسر مناة : একই মাসের মধ্যে ২০ জন অশ্বারোহী সহ সা‘দ বিন যায়েদ আশহালীকে পাঠানো হয় আরেকটি প্রসিদ্ধ মূর্তি মানাত (مَنَاة)-কে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। যা ছিল মক্কা থেকে উত্তর-পূর্বে ১৫০ কি. মি. দূরে কুদাইদ(قُدَيْد) এর নিকটবর্তী মুশাল্লাল(مُشَلَّل) নামক স্থানে অবস্থিত এবং যা ছিল আউস, খাযরাজ, গাসসান ও অন্যান্য গোত্রের পূজিত দেবমূর্তি। সা‘দ মূর্তিটির দিকে অগ্রসর হতেই একটি নগ্ন, কৃষ্ণাঙ্গ ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট নারীকে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বেরিয়ে আসতে দেখেন। এই সময় সে কেবল হায় হায়(تَدْعُو بِالْوَيْلِ) করছিল। সা‘দ তাকে এক আঘাতে খতম করে দিলেন। অতঃপর মূর্তি ও ভান্ডার গৃহ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিলেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫)।
৪. সারিইয়া খালেদ বিন অলীদ (বনু জুযায়মাহ গোত্রের প্রতি;(سرية خالد إلى بنى جذيمة) : ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে খালেদ বিন অলীদের নেতৃত্বে মুহাজির, আনছার ও বনু সুলায়েম গোত্রের সমন্বয়ে ৩৫০ জনের একটি দলকে বনু জুযায়মাহ(بَنُو جُذَيْمَة) গোত্রে পাঠানো হয় তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, লড়াই করার জন্য নয়। বনু জুযায়মা মক্কা থেকে দক্ষিণে জেদ্দার নিকটবর্তী ইয়ালামলামের কাছে ৮০ কি. মি. দূরে অবস্থিত (সীরাহ সহীহাহ ২/৪৯২-৯৩)। কিন্তু যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হল, তখন তারা أَسْلَمْنَا ‘আমরা ইসলাম কবুল করলাম’ না বলে صَبَأْنَا صَبَأْنَا ‘আমরা ধর্মত্যাগী হয়েছি’ ‘ধর্মত্যাগী হয়েছি’ বলল। এতে খালেদ তাদেরকে হত্যা করতে থাকেন ও বন্দী করতে থাকেন এবং পরে প্রত্যেকের নিকটে ধৃত ব্যক্তিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বনু সুলায়েম ব্যতীত মুহাজির ও আনছার সাহাবীগণ কেউ এই নির্দেশ মান্য করেননি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ও তাঁর সাথীগণ ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি খুবই ব্যথিত হন এবং আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দু’বার বলেন,اللَّهُمَّ إِنٍّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে আমি তা থেকে তোমার নিকটে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করছি’।[বুখারী হা/৪৩৩৯; মিশকাত হা/৩৯৭৬]
পরে আলী (রাঃ)-কে পাঠিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নিহত ব্যক্তিদের রক্তমূল্য এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দান করেন।[5] উল্লেখ্য যে, খালেদ বিন অলীদ ও আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে এবং বনু সুলায়েম মুতা যুদ্ধের পর ৮ম হিজরীর শেষার্ধ্বে ইসলাম কবুল করেন। সে হিসাবে এঁরা সবাই ছিলেন প্রথম দিকের সাহাবীগণের তুলনায় নূতন মুসলমান।
[1]. আবুদাঊদ হা/১৮৭৮। প্রসিদ্ধ আছে যে, এসময় মক্কার একজন দুঃসাহসী পুরুষ ‘ফাযালাহ বিন ওমায়ের’ (فَضالة بن عُمَير) রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে ত্বাওয়াফের সময় তাঁর কাছাকাছি হয় এবং তাঁকে হত্যার উদ্যোগ নেয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেসে উঠে বলেন, কি মতলব হে ফাযালাহ! সে বলল, কিছু না। আমি আল্লাহর যিকির করছিলাম। তখন রাসূল (সাঃ) তার বুকে হাত রেখে বলেন, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। এতে তার হৃদয় শীতল হয়ে যায়। ফাযালাহ বলেন, এটি আমার নিকটে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয়তর ছিল’। এরপর সে মুসলমান হয়ে যায় (ইবনু হিশাম ২/৪১৭; আর-রাহীক্ব ৪০৭ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৩)। ঘটনাটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয় (মা শা-‘আ ১৯২ পৃঃ; আলবানী, দিফা‘ ‘আনিল হাদীছ, পৃঃ ১/৩৩, সনদ যঈফ)।
[2]. ফাৎহুল বারী হা/১৫৮৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য। উল্লেখ্য যে, ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধ থেকে ফিরে সেই বছর কাফের অবস্থায় ত্বালিবের মৃত্যু হলে আক্বীল সব সম্পত্তির মালিক হন। পরে তিনি সবকিছু বেঁচে দেন। আক্বীল ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের বছর মুসলমান হন। কেউ বলেছেন, ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার সন্ধির পর। তিনি ৮ম হিজরীর প্রথম দিকে মদীনায় হিজরত করেন। পরে মুতার যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি কুরায়েশদের চারজন প্রসিদ্ধ বিবাদ মীমাংসাকারী ব্যক্তির অন্যতম ছিলেন। বংশবিদ্যা বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি (১০১ বছরের) দীর্ঘ বয়সে ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়ার শাসনকালের (৬০-৬৪ হি.) প্রথম দিকে মৃত্যুবরণ করেন (আল-ইছাবাহ, ‘আক্বীল ক্রমিক ৫৬৩২)।
[3]. বুখারী হা/৩৫৭; মুসলিম হা/৩৩৬ (৮২)। প্রসিদ্ধ আছে যে, এদিন রাসূল (সাঃ) উম্মে হানীর গৃহে প্রবেশ করেন ও সেখানে গোসল করে ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করেন (আর-রাহীক্ব ৪০৬ পৃঃ)। কথা সঠিক নয়। বরং সঠিক সেটাই যা উপরে সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
[4]. ইবনু হিশাম ২/৪১৮; মুওয়াত্ত্বা হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩১৮০। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ। তার নিকট থেকে হোনায়েন যুদ্ধের সময় বর্মসমূহ ধার নেওয়া বিষয়ে বর্ণিত হাদীছগুলির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। বায়হাক্বী বলেন, বিষয়টির বর্ণনা ‘মুরসাল’। কিন্তু তার বহু ‘শাওয়াহেদ’ বা সমার্থক বর্ণনা রয়েছে’। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে আলবানী বর্ণনাটিকে ‘হাসান’ বলেছেন’ (সিলসিলা সহীহাহ হা/৬৩১-এর আলোচনা; ইরওয়া হা/১৫১৩, ৫/৩৪৪-৪৬; মা শা-‘আ ১৯৬-৯৮)।
[5]. মানছূরপুরী তাঁর প্রদত্ত যুদ্ধ তালিকার ৭৩ ক্রমিকে কোনরূপ সূত্র ছাড়াই এখানে নিহতের সংখ্যা ৯৫ লিখেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২০০)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন