মদীনার পথে রাসূল (সাঃ)
২০ দিন তাবূকে অবস্থানের পর এবং স্থানীয় খ্রিষ্টান ও অন্যান্য গোত্রগুলির সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে রোমক বাহিনীর সাথে কোনরূপ সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয় ছাড়াই বিজয় সম্পন্ন ও সুসংহত করার পর রাসূল (সাঃ) মদীনার পথে রওয়ানা হলেন।
বিনা রক্তপাতে যুদ্ধ জয়ের পর যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাথীগণ সহাস্য বদনে মদীনায় ফিরে চললেন, তখন মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইয়ের গোপন সাথী যারা ছিল, তারা প্রমাদ গুণলো এবং রাসূল (সাঃ)-কে পথিমধ্যেই হত্যার পরিকল্পনা করল।
রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
মদীনায় ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি সংকীর্ণ গিরিসংকট অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তাঁর সাথে কেবল ‘আম্মার বিন ইয়াসির ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ছিলেন। ‘আম্মার রাসূল (সাঃ)-এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে সামনে হাঁটছিলেন এবং হুযায়ফা পিছনে থেকে উষ্ট্রী হাঁকাচিছলেন। মুসলিম বাহিনী তখন পিছনে উপত্যকায় ছিল। ১২ জন মুনাফিক যারা এতক্ষণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, তারা মুখোশ পরে দ্রুত এগিয়ে এসে ঐ গিরিসংকটে প্রবেশ করল এবং পিছন থেকে অতর্কিতে রাসূল (সাঃ)-কে হত্যা করতে উদ্যত হল। হঠাৎ পদশব্দে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পিছন ফিরে তাকান এবং হুযায়ফাকে ওদের ঠেকানোর নির্দেশ দেন। হুযায়ফা তাঁর ঢাল দিয়ে ওদের বাহনগুলির মুখের উপরে আঘাত করতে থাকেন। এতেই আল্লাহর ইচ্ছায় তারা ভীত হয়ে পিছন ফিরে দৌড় দিয়ে দ্রুত সেনাবাহিনীর মধ্যে হারিয়ে যায়।
এভাবেই মুনাফিকরা অন্যান্য সময়ের ন্যায় এবারেও রাসূল (সাঃ)-এর ক্ষতি সাধনে ব্যর্থ হল। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,وَهَمُّوْا بِمَا لَمْ يَنَالُوْا ‘তারা চেয়েছিল সেটাই করতে, যা তারা পারেনি’ (তওবাহ ৯/৭৪)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের সকলের নাম ও তাদের অসদুদ্দেশ্য সম্পর্কে হুযায়ফাকে অবহিত করেন। তবে সেগুলি প্রকাশ করতে নিষেধ করেন। একারণে হুযায়ফাকেصَاحِبُ سِرِّ رَّسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গোপন রহস্যবিদ’ বলে অভিহিত করা হয়’ (তিরমিযী হা/৩৮১১; মিশকাত হা/৬২২৩)। ঐ মুনাফিকদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,إِنَّ فِىْ أُمَّتِىْ اثْنَا عَشَرَ مُنَافِقًا لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدُوْنَ رِيْحَهَا حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِىْ سَمِّ الْخِيَاطِ ‘আমার উম্মতের মধ্যে ১২ জন মুনাফিক রয়েছে, যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। তাদের জান্নাতে যাওয়া ঐরূপ অসম্ভব, যেরূপ সূঁচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ অসম্ভব’ (মুসলিম হা/২৭৭৯; মিশকাত হা/৫৯১৭)। ফলে মদীনায় কেউ মারা গেলে উমর (রাঃ) তার জানাযায় যাওয়ার পূর্বে খোঁজ নিতেন হুযায়ফা যাচ্ছেন কি-না। হুযায়ফা না গেলে তিনি যেতেন না, এই কারণে যে, যদি ঐ মৃত ব্যক্তি ঐ মুনাফিকদের মধ্যকার কেউ হয়।[আল-বিদায়াহ ৫/১৯; মির‘আত ১/১৪০]
মদীনায় উপস্থিতি ও মদীনাবাসীর অভিনন্দন :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
দূর হতে দেখতে পেয়ে খুশীতে রাসূল (সাঃ) বলে ওঠেন, هَذِهِ طَابَةٌ وَهَذَا أُحُدٌ ‘এই যে মদীনা, এই যে ওহুদ’। جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ ‘এই পাহাড় আমাদের ভালবাসে এবং আমরা একে ভালবাসি’ (বুখারী হা/৪৪২২; মুসলিম হা/১৩৯২)। মদীনার নারী-শিশু ও বালকেরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বিপুল উৎসাহে রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান।[1]
উল্লেখ্য যে, এটাই ছিল রাসূল (সাঃ)-এর জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধ। ৫০ দিনের এই সফরে ৩০ দিন যাতায়াতে ও ২০ দিন ছিল তাবূকে অবস্থান (আহমাদ হা/১৪১৭২)। রজব মাসে গমন ও রামাযান মাসে প্রত্যাবর্তন।[ইবনু হিশাম ২/৫১৫-১৬, ৫৩৭; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৯১; আর-রাহীক্ব ৪৩৬ পৃঃ]
মদীনায় ফেরার পরবর্তী ঘটনাবলী :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
(১) মুনাফিকদের ওযর কবুল(قبول اعتذار المنافقين) : মদীনায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম মসজিদে নববীতে দু’রাক‘আত নফল সালাত আদায় করেন। অতঃপর সেখানেই লোকজনের সাথে বসে পড়েন। এ সময় ৮০ জনের অধিক লোক এসে তাদের যুদ্ধে গমন না করার পক্ষে নানা ওযর-আপত্তি পেশ করে ক্ষমা চাইতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের ক্ষমা করে দেন ও আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন এবং তাদের হৃদয়ের গোপন বিষয়সমূহ আল্লাহর উপরে ছেড়ে দেন। তবে এদের ওযর সমূহ যে কপটতাপূর্ণ ছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ সূরা তওবার ৯৪-৯৮ আয়াতে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সাঃ) রাজি হলেও আল্লাহ যে কখনো তাদের উপরে রাজি হবেন না, সেকথা বলে দেন। যেমন আল্লাহ বলেন,يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِيْنَ ‘তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও, তবু আল্লাহ তো ফাসেক কওমের উপর রাজি হন না’ (তওবা ৯/৯৬)। এভাবেই মুনাফিকদের সাথে মুমিনদের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর ভাষায়مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ ‘আল্লাহ মুমিনদেরকে বর্তমান অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না, যতক্ষণ না অপবিত্র লোকগুলিকে পবিত্রদের থেকে পৃথক করে দেন’ (আলে ইমরান ৩/১৭৯)। অবশ্য আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার দলবল উক্ত ৮০ জনের বাইরে ছিল। যাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশী।[ফাৎহুল বারী ৮/১১৯; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৪৩৭]
(২) পিছনে থাকা তিনজন খাঁটি মুমিনের অবস্থা(حالة الثلاثة الذين خلّفوا) : আনছারদের তিনজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি, যারা স্রেফ সাময়িক বিচ্যুতির কারণে যুদ্ধে গমন থেকে পিছিয়ে ছিলেন, তাঁরা ওযর-আপত্তি না তুলে সরাসরি সত্য কথা বলেন। এঁরা হলেন, ১- হযরত কা‘ব বিন মালেক, যিনি মক্কায় ঐতিহাসিক বায়‘আতে আক্বাবায় অংশগ্রহণকারী ৭৩ জন পুরুষ সাহাবীর অন্যতম ছিলেন। ২- মুরারাহ বিন রবী‘ এবং ৩- হেলাল বিন উমাইয়া। এরা ইতিহাসে ‘আল-মুখাল্লাফূন’(الْمُخَلَّفُوْنَ) বা ‘পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিগণ’ বলে পরিচিত হয়েছেন।
এঁরা সবাই ছিলেন অত্যন্ত মুখলেছ এবং রাসূল (সাঃ)-এর সাথে বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহণকারী সাহাবী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁদের ওযর কবুল করলেন এবং তাদেরকে পূর্ণ বয়কটের নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাদের তওবা কবুলের বিষয়টি আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিলেন। তাদের বিরুদ্ধে বয়কট চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়। এরি মধ্যে তাদের অবস্থা কঠিন আকার ধারণ করল। আপনজন ও বন্ধু-বান্ধব কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। কথাও বলে না। সালাম দিলেও জবাব দেয় না। মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। এই দুর্বিষহ জীবনে দুঃখে-বেদনায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার উপক্রম হয়। চল্লিশ দিনের মাথায় তাদের প্রতি স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ এল। ফলে তারা স্ব স্ব স্ত্রীদের পিতৃগৃহে পাঠিয়ে দিলেন। যা তাদের অবস্থাকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলল। তারা সর্বদা আল্লাহর দরবারে কেঁদে বুক ভাসাতে থাকেন। এই বয়কট চলাকালে হযরত কা‘ব বিন মালেক আরেকটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। গাসসান অধিপতি তাঁর নিকটে একটি পত্র পাঠিয়ে তাদের তিনজনের প্রতি সহানুভূতি জানান এবং কা‘বকে তাঁর দরবারে আমন্ত্রণ জানান। পত্রে বলা হয় যে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, তোমাদের মনিব তোমাদের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননার জন্য রাখেননি এবং তোমাকে নষ্ট করতে চান না। তুমি আমাদের কাছে চলে এসো। আমরা তোমার প্রতি খেয়াল রাখব ও যথোপযুক্ত মর্যাদা দেব’। চিঠি পড়েই কা‘ব বলেন, এটাও একটি পরীক্ষা’। তিনি বলেন, এরপর আমি পত্রটা একটা জ্বলন্ত চুলায় নিক্ষেপ করলাম’ (বুখারী হা/৪৪১৮)। অতঃপর ৫০ দিনের মাথায় তাদের খালেছ তওবা কবুল হল এবং নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হল।-
وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِيْنَ خُلِّفُوْا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوْا أَنْ لاَ مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلاَّ إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوْبُوْا إِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ-
‘এবং আল্লাহ দয়াশীল হন সেই তিন ব্যক্তির উপরে, যারা (জিহাদ থেকে) পিছনে ছিল। তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে, প্রশস্ত যমীন তাদের উপরে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল ও তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তারা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত তাদের অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর আল্লাহ তদের তওবা কবুল করেন যাতে তারা ফিরে আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও অসীম দয়ালু’ (তওবাহ ৯/১১৮)।
তওবা কবুলের উক্ত আয়াত নাযিলের সাথে সাথে মুমিনদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ উঠে গেল। সকলে দান-ছাদাক্বায় লিপ্ত হল। এমন আনন্দ তারা জীবনে পায়নি। এটাই ছিল যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যময় দিন।
কা‘ব বিন মালিক তার বাড়ীর ছাদে নিঃসঙ্গভাবে দুঃখে-বেদনায় পড়েছিলেন। এমন সময় নিকটবর্তী সালা‘ (سَلْع) পাহাড়ের উপর থেকে একজন আহবানকারীর আওয়ায শোনা গেল-يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ ‘হে কা‘ব বিন মালেক! সুসংবাদ গ্রহণ কর’।
কা‘ব বলেন, এ সংবাদ শুনেই আমি সিজদায় পড়ে যাই। অতঃপর দৌড়ে রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে চলে যাই। বন্ধু-বান্ধব চারদিক থেকে ছুটে এসে অভিনন্দন জানাতে থাকে। সারা মদীনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাস্যোজ্জ্বল মুখে আমাকে বলেন,أَبْشِرْ بِخَيْرِ يَوْمٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُنْذُ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ ‘সুসংবাদ গ্রহণ কর! জন্মের পর থেকে এমন আনন্দের দিন তোমার জীবনে আর কখনো আসেনি’। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ (ক্ষমা) আপনার পক্ষ থেকে, না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এর শুকরিয়া স্বরূপ আমি আমার সম্পদ থেকে আল্লাহর রাহে ছাদাক্বা করতে চাই। রাসূল (সাঃ) বললেন, কিছু অংশ রেখে দাও। সেটা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, খায়বরের গণীমতের অংশ আমি রেখে দিয়েছি। অতঃপর আমি বললাম, সত্য কথা বলার জন্য আল্লাহ আমাকে নাজাত দিয়েছেন। অতএব আমার তওবা এই যে, যতদিন বেঁচে থাকব কখনই সত্য ছাড়া বলবো না। আল্লাহর কসম! রাসূল (সাঃ)-এর সামনে সত্য বলার আগ পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে সত্য কথা বলার জন্য আমার মত পরীক্ষা কাউকে দিতে হয়েছে বলে আমি জানতে পারিনি’।[2]
(৩) সত্যিকারের অপারগদের জন্য সুসংবাদ(بشارة للمجبورين الصادقين) : মদীনায় এমন বহু মুমিন ছিলেন, যারা মনের দিক দিয়ে সর্বক্ষণ রাসূল (সাঃ)-এর সাথী ছিলেন, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা, আর্থিক অপারগতা, বাহনের অপ্রাপ্যতা বা অনিবার্য কোন কারণবশতঃ যুদ্ধে যেতে পারেননি। তাদের এই অক্ষমতার জন্য তারা যেমন দুঃখিত ও লজ্জিত ছিলেন, তেমনি ভীত ছিলেন এজন্য যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কি-না। আল্লাহ তাদের অন্তরের খবর রাখেন। তাই তাদের ক্ষমার সুসংবাদ দিয়ে আয়াত নাযিল হল-
لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَؤُوفٌ رَحِيمٌ-
‘অবশ্যই আল্লাহ দয়াশীল হয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনছারদের প্রতি, যারা দুঃসময়ে তার অনুসারী হয়েছিল, তাদের এক দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ার পর। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি দয়াপরবশ হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি স্নেহশীল ও করুণাময় (তওবাহ ৯/১১৭)। আরও নাযিল হয়,-
لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلاَ عَلَى الْمَرْضَى وَلاَ عَلَى الَّذِيْنَ لاَ يَجِدُوْنَ مَا يُنْفِقُوْنَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوْا لِلَّهِ وَرَسُوْلِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِيْنَ مِنْ سَبِيْلٍ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ-
‘কোন অভিযোগ নেই ঐসব লোকদের প্রতি, যারা দুর্বল, রোগী এবং (যুদ্ধের সফরে) ব্যয়ভার বহনে অক্ষম, যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-এর প্রতি আন্তরিক নিষ্ঠা পোষণ করে। সদাচারী লোকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবাহ ৯/৯১)।
মদীনার কাছাকাছি পৌঁছে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এইসব লোকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন,إِنَّ بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِيًا إِلاَّ كَانُوا مَعَكُمْ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ قَالَ وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ ، حَبَسَهُمُ الْعُذْرُ ‘মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর করেছ, বা যে উপত্যকা অতিক্রম করেছ, তারা সর্বদা তোমাদের সঙ্গে থেকেছে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা মদীনায় থেকেও আমাদের সঙ্গে ছিল? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ তারা মদীনায় থেকেও তোমাদের সঙ্গে ছিল। ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছিল’(حَبَسَهُمُ الْعُذْرُ) (বুখারী হা/৪৪২৩; মিশকাত হা/৩৮১৫)।
(৪) মুনাফিকদের প্রতি কঠোর হওয়ার নির্দেশ(أمر الغلظة على المنافقين) : তাবূক যুদ্ধের সময় মুনাফিকরা যে ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছিল, তা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। বিশেষ করে বহিঃশক্তি রোমক বাহিনীকে মদীনা আক্রমণের আহবান জানানো ও তার জন্য ষড়যন্ত্রের আখড়া হিসাবে ক্বোবায় ‘মসজিদে যেরার’ নির্মাণ ছিল রীতিমত রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। এ প্রেক্ষিতে এদের অপতৎপরতা যাতে আর বৃদ্ধি পেতে না পারে এবং রাসূল (সাঃ)-এর উদারতাকে তারা দুর্বলতা না ভাবে, সেকারণ আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে তাদের ব্যাপারে কঠোর হবার নির্দেশ দিয়ে বলেন,يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ ‘হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের ঠিকানা হল জাহান্নাম এবং সেটি কতই না মন্দ ঠিকানা’ (তওবাহ ৯/৭৩)। এখানে মুনাফিকদের সাথে জিহাদের অর্থ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মৌখিক কঠোরতার জিহাদ (ইবনু কাছীর)। কেননা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কখনোই তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেননি বা তাদেরকে হত্যা করেননি।
(৫) মসজিদে যেরার ধ্বংস(إهلاك مسجد الضرار) : রোমকদের কেন্দ্রভূমি সিরিয়া থেকে ষড়যন্ত্রকারী আবু ‘আমের আর-রাহেব-এর পত্র মোতাবেক মদীনার ১২ জন মুনাফিক ক্বোবা মসজিদের অদূরে একটি মসজিদ নির্মাণ করে (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭)। এটা তাদের চক্রান্ত ও অস্ত্র সংগ্রহের কেন্দ্র হলেও সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য তারা এটাকে ‘মসজিদ’ নাম দেয় এবং রাসূল (সাঃ)-কে সেখানে গিয়ে সালাত আদায়ের জন্য দাওয়াত দেয়। অজুহাত হিসাবে তারা বলেছিল যে, এটি তারা নির্মাণ করছে দুর্বলদের জন্য এবং অসুস্থদের জন্য, যারা শীতের রাতে কষ্ট করে দূরের মসজিদে যেতে পারে না তাদের জন্য। তারা বলে, আমরা চাই যে, আপনি সেখানে সালাত আদায় করুন এবং আমাদের জন্য বরকতের দো‘আ করুন’। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সরল মনে তাদের দাওয়াত কবুল করেন এবং তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে সেখানে যাবেন বলে ওয়াদা করেন। কিন্তু তাবূক থেকে ফেরার সময় এক ঘণ্টার পথ বাকী থাকতে তিনি যখন মদীনার নিকটবর্তী যু-আওয়ান(ذُو أَوَان) নামক স্থানে অবতরণ করেন, তখন তাঁর নিকটে মুনাফিকদের ঐ ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়ে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوْا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيْقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَإِرْصَادًا لِمَنْ حَارَبَ اللهَ وَرَسُولَهُ مِنْ قَبْلُ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلاَّ الْحُسْنَى وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ- لاَ تَقُمْ فِيْهِ أَبَدًا لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيْهِ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ-
‘আর যারা মসজিদ তৈরী করেছে ক্ষতি সাধনের জন্য, কুফরী করার জন্য ও মুমিনদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য এবং আল্লাহ ও তার রাসূল-এর বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি করার জন্য, তারা অবশ্যই শপথ করে বলবে যে, আমরা সদুদ্দেশ্যেই এটা করেছি। অথচ আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’। ‘তুমি কখনোই উক্ত মসজিদে দন্ডায়মান হবে না। যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেটাই তোমার (সালাতের জন্য) দাঁড়াবার যথাযোগ্য স্থান। সেখানে এমন সব লোক রয়েছে, যারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হওয়াকে ভালবাসে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (তওবাহ ৯/১০৭-০৮)।
প্রকৃত ঘটনা অবহিত হয়ে মদীনায় উপস্থিত হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) প্রাথমিক কাজকর্ম সেরে মালেক বিন দুখশুম, মা‘আন বিন ‘আদী, ‘আমের বিন সাকান এবং ওহুদ যুদ্ধে হামযা (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহশী বিন হারবকে নির্দেশ দিলেন মসজিদ নামক উক্ত ষড়যন্ত্রের ঘাঁটিকে গুঁড়িয়ে ও পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে আসার জন্য।[ইবনু হিশাম ২/৫৩০; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৮১] তারা সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে উক্ত গৃহটি সমূলে উৎপাটিত করে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেন। মসজিদে ক্বোবা থেকে অনতিদূরে উক্ত অভিশপ্ত স্থানটি আজও বিরান পড়ে আছে। এই সময় সূরা তওবায় মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে অনেকগুলি আয়াত নাযিল হয়। ফলে তারা সমাজে চিহ্নিত হয়ে যায় এবং একেবারেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে।[3]
অতঃপর মাত্র তিন মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আরও কতগুলি ঘটনা ঘটে। যেমন-
(৬) লে‘আন-এর ঘটনা(قصة اللعان) : স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, আর তার কোন সাক্ষী না থাকে, সে অবস্থায় যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো হয়, তাকে লে‘আন বলা হয়। পদ্ধতি এই যে, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে আদালতে বিচারকের সম্মুখে দাঁড়াবে। অতঃপর স্বামী আল্লাহর কসম করে চারবার বলবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলবে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার উপরে আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হৌক (নূর ২৪/৬-৭)। আর ‘স্ত্রীর শাস্তি রহিত হয়ে যাবে যদি সে আল্লাহর কসম করে চারবার বলে যে, তার স্বামী অবশ্যই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলে, যদি তার স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে তার উপর আল্লাহর গজব নেমে আসুক’ (নূর ২৪/৮-৯)। হেলাল বিন উমাইয়া এবং ‘উওয়াইমির ‘আজলানীর ঘটনার প্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতগুলি নাযিল হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদের স্বামী-স্ত্রীকে ডেকে এনে মসজিদের মধ্যে লে‘আন করান। উভয় পক্ষে পাঁচটি করে সাক্ষ্য পূর্ণ হয়ে লে‘আন সমাপ্ত হলে ‘উওয়াইমের বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখন যদি আমি তাকে স্ত্রীরূপে রাখি, তাহলে আমি মিথ্যা অপবাদ দানকারী হয়ে যাব। অতএব আমি তাকে তালাক দিলাম’। হেলাল বিন উমাইয়ার ঘটনায় রাসূল (সাঃ) লে‘আনের পর স্বামী ও স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং বলেন যে, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্ত্রীর বলে কথিত হবে- পিতার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হবে না। তবে সন্তানটিকে ধিকৃত করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,الْمُتَلاَعِنَانِ إِذَا تَفَرَّقَا لاَ يَجْتَمِعَانِ أَبَدًا ‘লে‘আনকারীদ্বয় পৃথক হলে তারা কখনোই আর একত্রিত হতে পারবে না’ (দারাকুৎনী হা/৩৬৬৪)। বিচারক বিবাহ বিচ্ছিন্ন করে দেবার পর ইদ্দত পূর্ণ করে উক্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে। এভাবে লে‘আনের মাধ্যমে সে দুনিয়ার শাস্তি থেকে বাঁচলেও আখেরাতের শাস্তি বেড়ে যাবে।
(৭) গামেদী মহিলার ব্যভিচারের শাস্তি(رجم امرأة غامدية) : গামেদী মহিলার(امرأة غامدية) ব্যভিচারের শাস্তি দানের বিখ্যাত ঘটনাটি এ সময়ে সংঘটিত হয়। উক্ত মহিলা ইতিপূর্বে নিজে এসে ব্যভিচারের স্বীকৃতি দেয় ও গর্ভধারণের কথা বলে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে সন্তান প্রসবের পর আসতে বলেন। অতঃপর ভূমিষ্ট সন্তান কোলে নিয়ে এলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে দুধ ছাড়ানোর পর বাচ্চা শক্ত খাবার খেতে শিখলে পরে আসতে বলেন। অতঃপর বাচ্চার হাতে রুটিসহ এলে এবং রাসূল (সাঃ)-এর আহবানে জনৈক আনছার সাহাবী ঐ বাচ্চার লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাকে ব্যভিচারের শাস্তি স্বরূপ প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়।
প্রস্তরাঘাতে ফেটে যাওয়া মাথার রক্তের ছিটা খালেদ বিন অলীদের মুখে এসে লাগলে তিনি গালি দিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। তাতে রাসূল (সাঃ) তাকে ধমক দিয়ে বলেন,مَهْلاً يَا خَالِدُ فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ ‘থাম হে খালেদ! যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, এই মহিলা এমন তওবা করেছে, যদি রাজস্ব আদায়ে খেয়ানতকারী ব্যক্তিও এমন তওবা করত, তাহলে তাকেও ক্ষমা করা হত’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার জানাযা পড়েন। তখন উমর (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি তার জানাযা পড়লেন? অথচ সে যেনা করেছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ سَبْعِيْنَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ تَوْبَةً أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا للهِ تَعَالَى؟ ‘এ মহিলা এমন তওবা করেছে যে, তা সত্তর জন মদীনাবাসীর মধ্যে বণ্টন করে দিলেও যথেষ্ট হয়ে যেত। তুমি কি এর চাইতে উত্তম কোন তওবা পাবে, যে ব্যক্তি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে? (মুসলিম হা/১৬৯৫-৯৬; মিশকাত হা/৩৫৬২)’ বস্ত্ততঃ পরকালের কঠিন শাস্তি হতে বাঁচার জন্য দুনিয়ায় প্রাণদন্ডের মত কঠোরতম শাস্তি স্বেচ্ছায় বরণ করার এ আকুতি পৃথিবীর কোন সমাজব্যবস্থায় পাওয়া যাবে কি?
(৮) নবীকন্যা উম্মে কুলছূমের মৃত্যু (وفاة ام كلثم بنت النبى صـ) : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কন্যা উম্মে কুলছূম এসময় নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাভিভূত হন। জামাতা উসমান গণীকে তিনি বলেন, ‘আমার আর কোন মেয়ে থাকলে তাকেও আমি তোমার সাথে বিবাহ দিতাম’ (আল-বিদায়াহ ৫/৩০৯)।
উল্লেখ্য যে, রাসূল (সাঃ)-এর দ্বিতীয়া কন্যা এবং উসমান (রাঃ)-এর প্রথমা স্ত্রী রুক্বাইয়া মাত্র ২১ বছর বয়সে ২য় হিজরীর রামাযান মাসে বদরের যুদ্ধের সুসংবাদ মদীনায় পৌঁছার দিন মারা যান। অতঃপর ৩য় হিজরীতে উসমানের সাথে উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়। ৯ম হিজরীতে তার মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এতই ব্যথিত হন যে, তিনি কবরের পাশে বসে পড়েন। এ সময় তাঁর গন্ড বেয়ে অবিরলধারে অশ্রুবন্যা বয়ে যাচ্ছিল।[বুখারী হা/১৩২০; মিশকাত হা/১৭১৫; মির‘আত হা/১৭২৯]
(৯) ইবনে উবাইয়ের মৃত্যু(وفاة ابن أبىّ المنافق) : এ সময় মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মৃত্যু হয়। তার ছেলে আব্দুল্লাহ, যিনি উত্তম সাহাবী ছিলেন, তার দাবী অনুযায়ী তার কাফন পরানোর জন্য রাসূল (সাঃ) নিজের ব্যবহৃত জামা তাকে প্রদান করেন ও জানাযা পড়তে সম্মত হন। অতঃপর তিনি জানাযায় গমনের জন্য উঠে দাঁড়ালে উমর (রাঃ) তাঁর কাপড় টেনে ধরে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার জানাযার সালাত আদায় করবেন, অথচ আল্লাহ কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা পড়তে নিষেধ করেন নি? তখন মুচকি হেসে রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘সরে যাও হে উমর! আমাকে এ ব্যাপারে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। যদি আমি জানতাম ৭০ বারের অধিক মাগফেরাত কামনা (তওবা ৯/৮০) করলে তাকে ক্ষমা করা হবে, তাহলে আমি তার চেয়ে অধিকবার ক্ষমা চাইতাম। উমর বললেন, সে তো মুনাফিক! অতঃপর রাসূল (সাঃ) তার জানাযার সালাত আদায় করলেন এবং ফিরে এলেন। এর কিছু পরেই মুনাফিকদের জানাযায় অংশগ্রহণের উপরে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা জারী করে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِّنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلاَ تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَمَاتُوْا وَهُمْ فَاسِقُوْنَ ‘তাদের মধ্যে কারু মৃত্যু হলে কখনোই তার জানাযা পড়বে না এবং তার কবরে দাঁড়াবে না। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি কুফরী করেছে (অর্থাৎ তাঁর বিধানকে প্রত্যাখ্যান করেছে)। আর তারা মৃত্যুবরণ করেছে পাপাচারী অবস্থায়’ (তওবা ৯/৮৪)। আরও নাযিল হয়,سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ أَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ لَنْ يَغْفِرَ اللهُ لَهُمْ إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা চাও বা না চাও, দু’টিই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ কখনোই তাদের ক্ষমা করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (মুনাফিকূন ৬৩/৬)। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আর কোন মুনাফিকের জানাযা পড়েননি (বুখারী হা/১২৬৯, ৪৬৭০-৭২, ৫৭৯৬)।
উমর (রাঃ)-এর এরূপ বলার কারণ, ইতিপূর্বে আয়াত নাযিল হয়েছিল যে,مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ ‘নবী বা কোন মুমিনের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক’ (তওবা ৯/১১৩)। উক্ত আয়াত মক্কায় নাযিল হয়েছিল আবু ত্বালিবের মৃত্যুর সময়। সম্ভবতঃ তার উপরে ভিত্তি করেই উমর (রাঃ) এরূপ কথা বলে থাকবেন (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ৮৪ আয়াত)।
আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের সাথে রাসূল (সাঃ)-এর এরূপ সদাচরণের কারণ তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, আমার জামা তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারবে না। তবে আমি একাজটি এজন্য করেছি, আমার আশা যে, এর ফলে তার গোত্রের বহু লোক মুসলমান হয়ে যাবে’। ইবনু ইসহাক তার মাগাযীতে এবং কোন কোন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সাঃ)-এর এই সদাচরণ দেখে ইবনু উবাইয়ের খাযরাজ গোত্রের এক হাযার লোক মুসলমান হয়ে যায়।[কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ৮৪ আয়াত, ৮/২০২; তাফসীর ত্বাবারী হা/১৭০৫৮]
এর আরও কারণ থাকতে পারে। জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে, বদরের যুদ্ধে বন্দী রাসূল (সাঃ)-এর চাচা আববাস-এর জন্য একটি জামার প্রয়োজন হলে কারু জামা তার গায়ে হয়নি। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের দেওয়া জামাটিই আববাসের গায়ের জন্য উপযুক্ত হয়’। সেদিনের সেই দানের প্রতিদান হিসাবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নিজের জামা তাকে দিয়ে দেন। ইবনু উয়ায়না বলেন, রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের এটি সৌজন্য ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছিলেন (বুখারী হা/৩০০৮)।
(১০) আবুবকরের হজ্জ ; বিধি-বিধান সমূহ জারী(حج أبى بكر وإعلان أحكام الحج) : হজ্জের বিধি-বিধান জারী করার উদ্দেশ্যে ৯ম হিজরীতে হজ্জের মৌসুমে আবুবকর (রাঃ)-কে ‘আমীরুল হাজ্জ’ হিসাবে মক্কায় পাঠানো হয়। তাদের রওয়ানা হবার পরপরই সূরা তওবাহর প্রথম দিকের আয়াতগুলি নাযিল হয়। যাতে মুশরিকদের সঙ্গে সম্পাদিত ইতিপূর্বেকার সকল চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে সে যুগের নিয়মানুযায়ী রাসূল (সাঃ)-এর রক্ত সম্পর্কীয় হিসাবে হযরত আলীকে পুনরায় পাঠানো হয়। কেননা পরিবার বহির্ভূত কোন ব্যক্তির মাধ্যমে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা সে যুগে স্বীকৃত ছিল না বা কার্যকর হত না। আরাজ (الْعَرْج) অথবা যাজনান (الضَجْنَان) উপত্যকায় গিয়ে আলী (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-এর কাফেলার সাথে মিলিত হন। তখন আবুবকর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন,أَمِيْرٌ أَوْ مَأْمُوْرٌ ‘আমীর হিসাবে এসেছেন না মামূর হিসাবে?’ আলী (রাঃ) বললেন,لاَ بَلْ مَأْمُوْرٌ ‘না। বরং মা’মূর হিসাবে’।
অতঃপর হজ্জের বিধি-বিধানসমূহ জারী করার ব্যাপারে আবুবকর (রাঃ) তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন। এরপর কুরবানীর দিন হযরত আলী (রাঃ) কংকর নিক্ষেপের স্থান জামরার নিকটে দাঁড়িয়ে রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষে সূরা তওবাহর প্রথম দিককার সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলি পড়ে শুনান এবং পূর্বের সকল চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। তিনি চুক্তিবদ্ধ ও চুক্তিবিহীন সকলের জন্য চার মাসের সময়সীমা বেঁধে দেন। যাতে এই সময়ের মধ্যে মুশরিকরা চুক্তিতে বর্ণিত বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি করে ফেলে। তবে যেসব মুশরিক অঙ্গীকার পালনে কোন ত্রুটি করেনি বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করেনি, তাদের চুক্তিনামা পূর্বনির্ধারিত সময় পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়। অতঃপর আবুবকর (রাঃ) একদল লোক পাঠিয়ে ঘোষণা জারী করেন যে,لاَ يَطُوْفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ وَلاَ يَحُجُّ مُشْرِكٌ ‘এখন থেকে আর কোন মুশরিক কা‘বাগৃহে হজ্জ করতে পারবে না এবং কোন ব্যক্তি নগ্ন অবস্থায় কা‘বাগৃহ ত্বাওয়াফ করতে পারবে না’।[বুখারী হা/৪৬৫৬; যাদুল মা‘আদ ৩/৫১৯] এর ফলে মূর্তিপূজা চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হল। মূলতঃ ৯ম হিজরীর এই হজ্জ ছিল পরবর্তী বছর রাসূল (সাঃ)-এর বিদায় হজ্জের প্রাথমিক পর্ব। যাতে ঐ সময় মুশরিকমুক্ত অবস্থায় হজ্জ সম্পন্ন করা যায় এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে, সূরা তওবাহর মোট ১২৯টি আয়াতের মধ্যে অনেকগুলি আয়াত তাবূক যুদ্ধে রওয়ানার প্রাক্কালে, মধ্যে ও ফিরে আসার পর নাযিল হয়’ (আর-রাহীক্ব ৪৩৮-৩৯ পৃঃ)।
[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এসময় মদীনার নারী-শিশু ও বালকেরা বেরিয়ে রাসূল (সাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا + مِنْ ثَنِيَّاتِ الْوَدَاع، وَجَبَ الشُّكْرُ عَلَيْنَا + مَا دَعَا ِللهِ دَاعِ কবিতা পাঠ করেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৪৮২; আর-রাহীক্ব ৪৩৬ পৃঃ)। বায়হাক্বী বলেন, আমাদের বিদ্বানগণ এটিকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকালীন সময়ের কথা বলেছেন, তাবূক থেকে ফেরার সময় নয়’ (আল-বিদায়াহ ৫/২৩)। জীবনীকার আলী আল-হালাবী (৯৭৫-১০৪৪ হি.) বলেন, ولا مانع من تعدد ذلك ‘এটি একাধিক বার হওয়ায় কোন বাধা নেই’ (সীরাহ হালাবিইয়াহ ৩/১২৩)। তাছাড়া ‘ছানিয়াহ’ বা টিলা মক্কা ও তাবূক দু’দিকে হওয়াটা অসম্ভব নয়। বস্ত্ততঃ এ ব্যাপারে প্রমাণিত সেটুকুই যা উপরে সহীহ হাদীছ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ‘১ম জুম‘আ আদায় ও ইয়াছরিবে প্রবেশ’ অনুচ্ছেদ, টীকা-৩২২।
[2]. এ বিষয়ে কাব বিন মালেক (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত বর্ণনা দেখুন বুখারী হা/৪৪১৮; মুসলিম হা/২৭৬৯। মানছূরপুরী এখানে প্রথমে সমস্ত সম্পদ, পরে দুই তৃতীয়াংশ, পরে অর্ধেক এবং শেষে এক তৃতীয়াংশ সম্পদ ছাদাক্বা দানের কথা বলেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/১৪৫)। কথাটি ভুল। বস্ত্ততঃ সেটি ছিল বদরী সাহাবী সা‘দ বিন খাওলা (রাঃ)-এর ঘটনা। যিনি বিদায় হজ্জের সময় মক্কায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মাত্র একটি কন্যা সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন (আল-ইছাবাহ, সা‘দ বিন খাওলা ক্রমিক ৩১৪৭)। বুখারী ও মুসলিমে তাঁর নাম সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ লেখা হয়েছে (আল-ইছাবাহ, ঐ)। ইবনু হাজার বলেন, ظَاهِرُهُ أَنَّهُ مِنْ قَوْلِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ وَيَحْتَمِلُ أَنْ يَكُونَ مِنْ قَوْلِ مَنْ دُونَهُ وَاللهُ أَعْلَمُ ‘প্রকাশ্য মতন অনুযায়ী এটি সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ-এর কথা। তবে এটি তিনি ব্যতীত অন্যের কথা হতে পারে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত (ফাৎহুল বারী হা/২৭৪৪-এর আলোচনা)। সা‘দ বিন খাওলা কর্তৃক এক তৃতীয়াংশ সম্পদ ছাদাক্বা দানের বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ দ্রষ্টব্য বুখারী হা/১২৯৫; মুসলিম হা/১৬২৮ (৫)। উল্লেখ্য যে, সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ) ৫৫ হিজরীতে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন এবং বাক্বী‘ গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয় (আল-ইস্তী‘আব; আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৩১৯৬)।
[3]. ১২ জন ব্যক্তির মাধ্যমে মসজিদে যেরার তৈরী এবং সেখানে সালাত আদায়ের জন্য রাসূল (সাঃ)-কে আমন্ত্রণের উক্ত ঘটনাটি ইবনু ইসহাক বিনা সনদে বর্ণনা করেছেন (ইবনু হিশাম ২/৫২৯)। যে সম্পর্কে ইবনু কাছীর, আলবানী প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন, বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ। আলবানী বলেন, সীরাতের কিতাবসমূহে ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ। কিন্তু আমি এর কোন বিশুদ্ধ সনদ খুঁজে পাইনি (ইরওয়া হা/১৫৩১, ৫/৩৭০ পৃঃ)। তাছাড়া উক্ত ঘটনায় আবু ‘আমের আল-ফাসেক্ব-এর জড়িত থাকার বিষয়টি অনিশ্চিত। কেননা রাসূল (সাঃ) যখন মদীনায় হিজরত করে আসেন তখন সে মদীনা থেকে মক্কায় চলে যায়। অতঃপর যখন মক্কা বিজিত হয়, তখন সে ত্বায়েফে চলে যায়। অতঃপর যখন ত্বায়েফবাসীরা ইসলাম কবুল করে তখন সে বেরিয়ে শামে চলে যায় এবং সেখানেই বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৪৮০; মা শা-‘আ ২১৯-২০ পৃঃ)। তবে মুনাফিকদের জন্য কোন ষড়যন্ত্রই অসম্ভব নয়। শয়তান ওদের পথ বাৎলিয়ে দেয়। আর মসজিদ আগুনে নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনাটি সঠিক। যেমন জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনছারী (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে যেরারকে জ্বলন্ত অবস্থায় দেখেছি’। রাবী বলেন, আমি পূর্বতন অনেক সাহাবীকে বলতে শুনেছি যে, তাঁরা উক্ত দৃশ্য দেখেছেন’ (হাকেম হা/৮৭৬৩, সনদ সহীহ)। এক্ষণে এ আগুন আল্লাহর পক্ষ থেকেও হতে পারে’ (মা শা-‘আ ২২১ পৃঃ)। কেননা কারা আগুন দিয়েছিল, তার কোন নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন