মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

খন্দক ও বনু কুরাইজা পরবর্তী যুদ্ধসমূহ

 

খন্দক ও বনু কুরাইজা পরবর্তী যুদ্ধসমূহ

১. সারিইয়া আব্দুল্লাহ বিন আতীক আনছারী(سرية عبد الله بن عتيق الأنصارى) : ৫ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাস। বনু কুরাইজার শত্রুতা থেকে মুক্ত হয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পর খায়বরের আবু রাফে‘ দুর্গের অধিপতি অন্যতম শীর্ষ দুষ্টমতি ইহূদী নেতা এবং মদীনা থেকে বিতাড়িত বনু নাযীর গোত্রের অন্যতম সর্দার সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্বকে হত্যার জন্য খাযরাজ গোত্রের বনু সালামাহ শাখার লোকেরা রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে দাবী করে। সাল্লামের উপনাম ছিল আবু রাফে‘। সে ছিল কা‘ব বিন আশরাফের ন্যায় প্রচন্ড ইসলাম ও রাসূল বিদ্বেষী ইহূদী নেতা। মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বদা সে শত্রুপক্ষকে সাহায্য করত। ওহুদ যুদ্ধের দিন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের প্ররোচনায় আউস গোত্রের বনু হারেছাহ ও খাযরাজ গোত্রের বনু সালামাহ শাখার লোকেরা ফিরে যেতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা যায়নি। এ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরান ১২২ আয়াত নাযিল হয়। খন্দকের যুদ্ধের দিনও এরা মুনাফিকদের প্ররোচনায় যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যেতে চেয়েছিল এবং রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে ওযর পেশ করেছিল (আহযাব ৩৩/১২-১৩)। সেই বদনামী দূর করার জন্য এবং ইতিপূর্বে ৩য় হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে আউস গোত্রের লোকেরা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর নেতৃত্বে রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশে কা‘ব বিন আশরাফকে রাতের বেলায় হত্যা করে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিল, অনুরূপ একটি দুঃসাহসিক কাজ করার জন্য তারা রাসূল (সাঃ)-এর অনুমতি প্রার্থনা করে।
অতঃপর রাসূল (সাঃ)-এর অনুমতি নিয়ে আব্দুল্লাহ বিন আতীকের নেতৃত্বে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি দল খায়বর অভিমুখে রওয়ানা হয় এবং রাতের বেলা কৌশলে দুর্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আবু রাফে‘ সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্বকে হত্যা করে ফিরে আসে। বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন আতীক বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আবু রাফে‘-এর পেটে তরবারি চালিয়ে হত্যা করার পর আমি দরজা খুলে বেরিয়ে আসি। তখন চাঁদনী রাতে সিঁড়ির শেষ মাথায় এসে পা ফসকে পড়ে যাই। এতে আমার পায়ের নলা ভেঙ্গে যায়। তখন আমি আমার পাগড়ী দিয়ে ওটা বেঁধে ফেলি। তারপর আমার সাথীদের নিকট চলে আসি। অতঃপর আমি রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে পৌঁছে যাই এবং ঘটনা বলি। তখন তিনি আমাকে বলেন,ابْسُطْ رِجْلَكَ ‘তোমার পা বাড়িয়ে দাও’। আমি পা বাড়িয়ে দিলাম। তিনি তাতে হাত বুলিয়ে দিলেন। তখন আমার মনে হল, এখানে কোনদিন কোন যখম ছিল না’।[বুখারী হা/৪০৩৯; মিশকাত হা/৫৮৭৬]

২. সারিইয়া মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(سرية محمد بن مسلمة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর মুহাররম মাস। মদীনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী নাজদের বনু বকর বিন কিলাব গোত্রের প্রতি মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ আনছারীর নেতৃত্বে ৩০ জনের এই দলকে ১০ই মুহাররম তারিখে মদীনা থেকে প্রেরণ করা হয়। মুসলিম সেনাদল সেখানে পৌঁছার সাথে সাথে তারা পালিয়ে যায়। তাদের পরিত্যক্ত ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে আসার পথে ইয়ামামার হানীফা গোত্রের সরদার ছুমামাহ বিন আছাল হানাফী(ثُمامةُ بنُ آثَالٍ الْحَنَفِى) তাদের হাতে গ্রেফতার হয়। উক্ত ব্যক্তি ইয়ামামার নেতা মুসায়লামার নির্দেশ মতে ছদ্মবেশে মদীনায় যাচ্ছিল রাসূল (সাঃ)-কে গোপনে হত্যা করার জন্য।
ছুমামাহর ইসলাম গ্রহণ(إسلام ثمامة) :
ছুমামাকে এনে মসজিদে নববীর খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনمَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ ‘তোমার নিকটে কি আছে হে ছুমামাহ! সে বলল, عِنْدِى يَا مُحَمَّدُ خَيْرٌ إِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ ‘আমার নিকটে মঙ্গল আছে হে মুহাম্মাদ’! আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন, তাহলে এমন একজনকে হত্যা করবেন যার বদলায় রক্ত প্রবাহিত হবে। যদি অনুগ্রহ করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি সম্পদ চান, তবে যা চাইবেন তাই আপনাকে দেওয়া হবে’।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু না বলে ফিরে গেলেন। এভাবে তিনদিন একই প্রশ্নের একই উত্তর পাওয়ার পর তিনি তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। মুক্তি পেয়ে তিনি মসজিদের নিকটবর্তী বাক্বী‘ গারক্বাদের খেজুর বাগানে গেলেন ও গোসল করলেন। অতঃপর মসজিদে এসে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করে বায়‘আত গ্রহণের মাধ্যমে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর বলেন, وَاللهِ مَا كَانَ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضَ إِلِيَّ مِنْ وَجْهِكَ، وَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوهِ إِلِيَّ، وَاللهِ مَا كَانَ دِينٌ أَبْغَضَ إِلِيَّ مِنْ دِينِكَ وَقَدْ أَصْبَحَ دِينُكَ أَحَبَّ الْأَدْيَانِ إِلِيَّ ‘আল্লাহর কসম! এ পৃথিবীতে আপনার চাইতে নিকৃষ্ট চেহারা আমার কাছে ছিলনা। কিন্তু এখন সেটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় চেহারায় পরিণত হয়েছে। একইভাবে আল্লাহর কসম! এ পৃথিবীতে আপনার দ্বীনের চাইতে নিকৃষ্ট কোন দ্বীন আমার কাছে ছিলনা। কিন্তু এখন সেটি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় দ্বীনে পরিণত হয়েছে’। অতঃপর ছুমামাহ মক্কায় গিয়ে উমরাহ করেন। সেখানে কুরায়েশ নেতারা তাকে বলে, أَصَبَوْتَ؟ ‘তুমি কি ধর্মত্যাগী হয়ে গেছ?’ জবাবে তিনি বলেন,لاَ وَاَللهِ وَلَكِنِّي أَسْلَمْتُ مَعَ مُحَمّد না। আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মাদের সাথে মুসলমান হয়েছি’। অতঃপর তিনি তাদের হুমকি দিয়ে বললেন,وَاللهِ لاَ يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ حَتَّى يَأْذَنَ فِيهَا رَسُولُ اللهِ ‘আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে তোমাদের জন্য গমের একটি দানাও আর আসবে না, যে পর্যন্ত না রাসূল (সাঃ) অনুমতি দেন’।[বুখারী হা/৪৩৭২; মুসলিম হা/১৭৬৪; আর-রাহীক্ব ৩২১ পৃঃ] ঐ সময় ইয়ামামা ছিল মক্কাবাসীদের জন্য শস্যভান্ডার স্বরূপ। হুমকি মতে শস্য আগমন বন্ধ হয়ে গেলে মক্কাবাসীগণ বাধ্য হয়ে রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে পত্র লেখে। তখন রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশে পুনরায় শস্য রফতানী শুরু হয়’।[ইবনু হিশাম ২/৬৩৮-৩৯; যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৮; আল-বিদায়াহ ৪/১৪৯]
মুহাররম মাসের একদিন বাকী থাকতে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর এই সেনাদল মদীনায় ফিরে আসে। এই অভিযান পরবর্তী সময়ের জন্য খুবই ফলদায়ক প্রমাণিত হয়।

৩. সারিইয়া উক্কাশা বিন মিহছান(سرية عكاشة بن محصن) : ৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আউয়াল অথবা আখের। ৪০ জনের একটি সেনাদল বনু আসাদ গোত্রের গামর(ماء غَمْر) প্রস্রবণের দিকে উক্কাশার নেতৃত্বে প্রেরিত হয়। কেননা বনু আসাদ গোত্র মদীনায় হামলা করার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করছিল। মুসলিম বাহিনীর আকস্মিক উপস্থিতিতে তারা পালিয়ে যায়। পরে গণীমত হিসাবে ২০০ উট নিয়ে অত্র বাহিনী মদীনায় ফিরে আসে।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৫০; আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ।]

৪. সারিইয়া মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(سرية محمد بن مسلمة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আউয়াল অথবা আখের। ১০ সদস্যের একটি বিদ্বান দল মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর নেতৃত্বে বনু ছা‘লাবাহ অঞ্চলের যুল-ক্বাছছা(ذُو الْقَصَّة) নামক স্থানে প্রেরিত হয়। মানছূরপুরী বলেন, এঁরা সেখানে দ্বীনের দাওয়াত ও তা‘লীমের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শত্রুদের প্রায় একশত লোক এসে তাদেরকে হত্যা করে। দলনেতা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ আহত অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হন।[আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আল-বিদায়াহ ৪/১৪৯]

৫. সারিইয়া আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ(سرية أبي عبيدة بن الجراح) : ৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আখের। পূর্বের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ৪০ জনের এই দল যুল-ক্বাছছায় প্রেরিত হয়। কিন্তু বনু ছা‘লাবাহ গোত্রের সবাই পালিয়ে যায়। একজন গ্রেফতার হলে সে মুসলমান হয়ে যায়। ফলে তাদের পরিত্যক্ত গবাদিপশু নিয়ে তারা ফিরে আসেন।[আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫০]

৬. সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ(سرية زيد بن حارثة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আখের। যায়েদ বিন হারেছাহর নেতৃত্বে একটি সেনাদল মার্রুয যাহরানের বনু সুলায়েম গোত্রের ‘জামূম’ (ماء جَمُوم) ঝর্ণার দিকে প্রেরিত হয়। বনু সুলায়েমের কয়েকজন লোক বন্দী হয়। মুযাইনা গোত্রের হালীমা নাম্নী একজন বন্দী মহিলা সহ বাকী বন্দী ও গবাদিপশু নিয়ে যায়েদ মদীনায় ফিরে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বন্দীদের ছেড়ে দেন ও মহিলাকে মুক্ত করে বিবাহের ব্যবস্থা করে দেন।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ]

৭. গাযওয়া বনু লেহিয়ান(غزوة بني لحيان) : ৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাস। ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে এই গোত্রের লোকেরা প্রতারণার মাধ্যমে ডেকে নিয়ে মক্কা সীমান্তে রাজী‘ নামক স্থানে ১০ জন নিরীহ সাহাবীকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত খোবায়েব বিন ‘আদী (রাঃ)। তাদের হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য বনু কুরাইজাকে বহিষ্কারের ৬ মাস পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং ২০০ সৈন্য নিয়ে এই অভিযানে বের হন। আমাজ ও ওসফানের(بَيْنَ أَمَجَ وَعُسْفَانَ) মধ্যবর্তী রাজী‘ পৌঁছে ‘গুরান’ (غُرَانَ) উপত্যকার যে স্থানে ৮ জন সাহাবীকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করুণাসিক্ত হয়ে পড়েন ও তাদের জন্য দো‘আ করেন(فَتَرَحَّمَ عَلَيْهِمْ وَدَعَا لَهُمْ)। বনু লেহিয়ান গোত্রের লোকেরা পালিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে দু’দিন অবস্থান করেন। পরে তিনি মক্কার দিকে ‘উসফান’ ও ‘কুরা‘উল গামীম’ এলাকায় ছোট ছোট দল প্রেরণ করেন। যাতে মক্কাবাসীরা এ খবর জানতে পারে। অবশেষে শত্রুপক্ষের কারু নাগাল না পেয়ে ১৪ দিন পরে মদীনায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি বেদুঈন হামলা বন্ধের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট অভিযান সমূহ প্রেরণ করতে থাকেন। এই অভিযানের সময় মদীনার দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৬-৪৭; ইবনু হিশাম ২/২৭৯; আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ]

৮. সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ(سرية زيد بن حارثة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা। ১৭০ জনের একটি দল নিয়ে তিনি শামের সমুদ্রোপকুলবর্তী সায়ফুল বাহর এলাকার ‘ঈছ (الْعِيْص) অভিমুখে প্রেরিত হন। এখানে তখন মক্কা থেকে পলাতক নও মুসলিম আবু জান্দাল, আবু বাছীর ও তাদের সাথীরা অবস্থান করতেন এবং কুরায়েশ কাফেলার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। ঐপথে তখন রাসূল (সাঃ)-এর জামাতা আবুল ‘আছ বিন রবী‘-এর নেতৃত্বে একটি কুরায়েশ বাণিজ্য কাফেলা মক্কা অভিমুখে অতিক্রম করছিল। আবুল ‘আছ লুকিয়ে দ্রুত মদীনায় এসে নবী তনয়া যয়নবের আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং রাসূল (সাঃ)-কে কাফেলার সব মালামাল ফেরত দানের অনুরোধ করেন। সেমতে তাকে সব মাল ফেরৎ দেওয়া হয়। আবুল ‘আছ মক্কায় গিয়ে পাওনাদারদের মালামাল বুঝিয়ে দেন ও প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলের ঘোষণা দেন। অতঃপর তিনি মদীনায় ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যয়নবকে পূর্বের বিবাহের উপরে তার স্বামীর নিকটে অর্পণ করেন। উল্লেখ্য যে, আবুল ‘আছ ছিলেন যয়নবের আপন খালাতো ভাই এবং খালা খাদীজা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় তাদের বিবাহ হয়।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৫২; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ]
ওয়াক্বেদীর বর্ণনা মতে ঘটনাটি ছিল ৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসের (ওয়াক্বেদী ২/৫৫৩)। কিন্তু মূসা বিন উক্ববা ধারণা করেন যে, ঘটনাটি ছিল হোদায়বিয়া সন্ধির পরের (যাদুল মা‘আদ ৩/২৫২)। ইবনু ইসহাক এটাকে মক্কা বিজয়ের সামান্য পূর্বে(قُبَيْلَ الْفَتْحِ) বলেছেন (ইবনু হিশাম ১/৬৫৭)। সেটাই সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। কেননা হাদীছে ৬ বছর পরে যয়নাবকে তার স্বামীর নিকটে সমর্পণের কথা এসেছে (তিরমিযী হা/১১৪৩)। অন্য বর্ণনায় ‘দুই বছরের’ কথা এসেছে (আবুদাঊদ হা/২২৪০ সনদ সহীহ)। ইবনু কাছীর বলেন, তার অর্থ হল ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে হোদায়বিয়ার সন্ধির পর কাফির ও মুসলিমে বিবাহ ছিন্ন হওয়ার যে আয়াত নাযিল হয়, তার দু’বছর পরে (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা মুমতাহিনা ১০ আয়াত)।

৯. সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ(سرية زيد بن حارثة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল আখেরাহ। ১৫ সদস্যের একটি বাহিনীসহ তিনি মদীনা থেকে ৩৬ মাইল দূরে বনু ছা‘লাবাহ গোত্রের ‘তারাফ’ (الطَّرَف) অথবা ‘তুরুক্ব’ (طُرُق) নামক স্থানে প্রেরিত হন। কিন্তু শত্রুপক্ষ পালিয়ে যায়। ৪ দিন অবস্থান শেষে গণীমতের ২০টি উট নিয়ে তিনি মদীনায় ফিরে আসেন।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ]

১০. সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ(سرية زيد بن حارثة) : ৬ষ্ঠ হিজরীর রজব মাস। ১২ জনের একটি দল নিয়ে ওয়াদিল ক্বোরা(وادي الْقُرَى) এলাকায় প্রেরিত হন শত্রুপক্ষের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। কিন্তু এলাকাবাসী তাদের উপরে অতর্কিতে হামলা করে ৯ জনকে হত্যা করে। দলনেতা যায়েদসহ তিনজন কোন মতে রক্ষা পান (আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...