মু‘জেযা সমূহ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মু‘জেযা সমূহ গণনা করা সম্ভব নয়। প্রসিদ্ধগুলি নিম্নরূপ:
(১) চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করণ।[বুখারী হা/৩৮৬৮-৬৯; মুসলিম হা/২৮০০]
(২) মি‘রাজের ঘটনা।[বুখারী হা/৩৮৮৭; মুসলিম হা/১৬২]
(৩) কা‘বাগৃহে সালাতরত অবস্থায় মাথায় উটের ভুঁড়ি চাপানো যে সাত জনের বিরুদ্ধে তিনি বদ দো‘আ করেছিলেন, তাদের বদর যুদ্ধে নিহত হওয়া।[বুখারী হা/২৪০, ৫২০; মুসলিম হা/১৭৯৪]
(৪) কা‘বাগৃহে সালাতরত অবস্থায় রাসূল (সাঃ)-এর মাথা পা দিয়ে পিষে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলে আবু জাহল সম্মুখে অগ্নিগহবর দেখে ভয়ে পিছিয়ে যায়।[মুসলিম হা/২৭৯৭; মিশকাত হা/৫৮৫৬]
(৫) ইয়ামনের যেমাদ আযদী রাসূল (সাঃ)-কে জিনে ধরা রোগী মনে করে ঝাড়-ফুঁক করতে এলে তিনি তাঁর মুখে ইন্নাল হামদা লিল্লাহ, নাহমাদুহূ.. শুনে ইসলাম কবুল করেন।[মুসলিম হা/৮৬৮; মিশকাত হা/৫৮৬০]
(৬) মক্কায় একদিন আবুবকরকে সাথে নিয়ে রাসূল (সাঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন। ইবনু মাসঊদ বলেন, তখন আমি উক্ববা বিন আবু মু‘আইতের বকরী চরাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, হে বৎস! দুধ আছে কি? আমি বললাম, আছে। কিন্তু আমি তো আমানতদার মাত্র। তখন তিনি বললেন, বাচ্চা (নাবালিকা) ছাগীটি নিয়ে এস। অতঃপর আমি নিয়ে গেলে তিনি তার বাঁট ছুঁয়ে দিলেন। তখন দুধ নেমে আসে। ফলে তিনি ও আবুবকর পেট ভরে পান করেন। অতঃপর তিনি পুনরায় বাঁটে হাত দেন ও দুধ বন্ধ হয়ে যায়। যাওয়ার সময় তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, হে বৎস! আল্লাহ তোমাকে অনুগ্রহ করুন’।[আহমাদ হা/৩৫৯৮, সনদ ‘হাসান’]
(৭) হিজরতের শুরুতে ছওর গিরিগুহায় অবস্থানকালে শত্রুর আগমন টের পেয়ে তিনি বলেন, আমরা দু’জন নই, তৃতীয় জন আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন।[বুখারী হা/৩৬৫৩; মুসলিম হা/২৩৮১]
(৮) হিজরতকালে উম্মে মা‘বাদের রুগ্ন বকরীর শুষ্ক পালান দুধে ভরে যাওয়া।[হাকেম হা/৪২৭৪; মিশকাত হা/৫৯৪৩]
(৯) পিছু ধাওয়াকারী সুরাক্বা বিন মালেকের ঘোড়ার পাগুলি মাটিতে দেবে যাওয়া। অতঃপর ফিরে যাওয়া।[বুখারী হা/৩৬১৫; মিশকাত হা/৫৮৬৯]
(১০) হিজরতের পরপরই ইহূদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন সালামের তিনটি প্রশ্নের জওয়াব দেওয়া। যা নবী ব্যতীত কারু পক্ষে সম্ভব ছিল না।[বুখারী হা/৪৪৮০; মিশকাত হা/৫৮৭০]
(১১) হোদায়বিয়ার কূয়া থেকে এবং তাবূকের সফরে হাতের আঙ্গুল সমূহ থেকে শুষ্ক ঝর্ণায় পানির প্রবাহ নির্গমন।[বুখারী হা/৩৫৭৬, ৪১৫০; মুসলিম হা/৭০৬ (১০)]
(১২) অন্য এক সফরে তৃষ্ণার্ত হলে সওয়ারী এক মহিলার দু’টি মশক থেকে পানি নিয়ে একটি পাত্রে ঢালেন। অতঃপর তা থেকে সাথী ৪০ জন ও সওয়ারীর পশুগুলি পান করে। অতঃপর সমস্ত পাত্র ভরে নেওয়া হয়। এরপরেও মহিলাকে তার মশক দু’টি পূর্ণভাবে পানি ভর্তি অবস্থায় ফেরৎ দেওয়া হয়।[বুখারী হা/৩৫৭১; মিশকাত হা/৫৮৮৪]
(১৩) একবার মদীনার ‘যাওরা’ বাজারে রাসূল (সাঃ) একটি পানির পাত্রে হাত রাখলে আঙ্গুল সমূহের ফাঁক দিয়ে এত বেশী পানি প্রবাহিত হয় যে, ৩০০ বা তার কাছাকাছি মানুষ তা পান করে পরিতৃপ্ত হয়।[বুখারী হা/৩৫৭২; মিশকাত হা/৫৯০৯]
(১৪) মসজিদে নববীতে দূরাগত মুছল্লীদের ওযূর পানিতে কমতি হলে রাসূল (সাঃ) ছোট্ট একটি পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেন। অতঃপর তা থেকে ৮০ জনের অধিক মুছল্লী ওযূ করেন (বুখারী হা/১৯৫)।
(১৫) মসজিদে নববীতে মিম্বর স্থাপিত হলে রাসূল (সাঃ) ইতিপূর্বে খেজুর গাছের যে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে খুৎবা দিতেন, সেটি ত্যাগ করে মিম্বরে বসেন। তখন খুঁটিটি শিশুর মত চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। রাসূল (সাঃ) নীচে নেমে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে সে থেমে যায়।[বুখারী হা/৩৫৮৪-৮৫; মিশকাত হা/৫৯০৩] তিনি বলেন, যদি আমি তাকে বুকে টেনে আদর না করতাম, তাহলে সে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই কাঁদতে থাকত।[ইবনু মাজাহ /১৪১৫; সহীহাহ হা/২১৭৪]
(১৬) গাছ ও পাথরের সিজদা করা।[তিরমিযী হা/৩৬২০; মিশকাত হা/৫৯১৮]
(১৭) বৃক্ষের হেঁটে চলে আসা ও পুনরায় তার স্থানে ফিরে যাওয়া [আহমাদ হা/১২১৩৩; মিশকাত হা/৫৯২৪] এবং দু’টি গাছ একত্রিত হয়ে তাঁর জন্য নীচু হয়ে তাঁর হাজত সারার জন্য আড়াল করা।[মুসলিম হা/৩০১২; মিশকাত হা/৫৮৮৫]
(১৮) বদর যুদ্ধের দিন মুশরিক নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান সমূহ নির্দেশ করা।[মুসলিম হা/১৭৭৯ (৮৩); মিশকাত হা/৫৮৭১]
(১৯) ঐ দিন ঘোড় সওয়ার ফেরেশতা কর্তৃক তার ঘোড়ার প্রতি নির্দেশ ‘হায়যূম! আগে বাড়ো’ বলার পরেই নিহত শত্রুর পতন হওয়া।[মুসলিম হা/১৭৬৩ (৫৮); মিশকাত হা/৫৮৭৪]
(২০) ওহুদের যুদ্ধে রাসূল (সাঃ)-এর ডাইনে ও বামে সাদা পোষাকধারী দু’জন ব্যক্তির যুদ্ধ করা’। যারা ছিলেন জিবরাঈল ও মীকাঈল।[বুখারী হা/৫৮২৬; মিশকাত হা/৫৮৭৫]
(২১) তাঁর উম্মৎ সাগরে নৌযুদ্ধে গমন করবে এবং উম্মে হারাম হবেন তাদের অন্যতম। মু‘আবিয়া (রাঃ) ও ইয়াযীদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়।[বুখারী হা/২৭৮৮-৮৯; মুসলিম হা/১৯১২]
(২২) রোমকরা পরাজিত হলে তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই রোমকরা বিজয়ী হবে
(২৩) রোম ও পারস্য সাম্রাজ্য বিজিত হবে। উমর ও উসমান (রাঃ)-এর সময় যা বাস্তবায়িত হয়।
(২৪) হাসান বিন আলীর মাধ্যমে মুসলমানদের বিবদমান দু’টি বড় দলের মধ্যে সন্ধি হবে। হাসান (রাঃ)-এর খেলাফত ত্যাগ ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফত গ্রহণের মাধ্যমে যা বাস্তবায়িত হয়।
(২৫) নাজাশীর মৃত্যুর দিন মদীনায় সাহাবীদের উক্ত খবর দেওয়া এবং গায়েবানা জানাযা পড়া
(২৬) ভন্ডনবী আসওয়াদ ‘আনাসী আজ রাতে ইয়ামনে নিহত হবে এবং তা বাস্তবায়িত হওয়া
(২৭) খন্দক যুদ্ধে পরিখা খননকালে শক্ত পাথর তাঁর কোদালের আঘাতে গুঁড়া হয়ে বালুর স্তূপে পরিণত হওয়া।[বুখারী হা/৪১০২; মুসলিম হা/২০৩৯]
(২৮) আরেকটি পাথরে আঘাত করার পর তার একাংশ ভেঙ্গে পড়লে তিনি বলেন ওঠেন, আল্লাহু আকবর! আমাকে পারস্যের সাম্রাজ্য দান করা হয়েছে...
(২৯) তিন দিন না খেয়ে পেটে পাথর বাঁধা ক্ষুধার্ত রাসূল-কে খাওয়ানোর জন্য সাহাবী জাবের (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করলেন এবং তাঁর স্ত্রী এক ছা‘ (আড়াই কেজি) যব পিষে আটা তৈরী করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন ঐ সময় পরিখা খননরত ১০০০ সাহাবীর সবাইকে সাথে নিয়ে আসেন। অতঃপর সকলে তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পরেও আগের পরিমাণ আটা ও গোশত অবশিষ্ট থেকে যায়।[বুখারী হা/৪১০২; মুসলিম হা/২০৩৯]
(৩০) ক্ষুধার কষ্টে রাসূল (সাঃ)-এর কণ্ঠস্বর দুর্বল বুঝতে পেরে সাহাবী আবু ত্বালহা স্ত্রী উম্মে সুলায়েম-কে বললে তিনি তাঁর জন্য কয়েকটি রুটি কাপড়ে জড়িয়ে পুত্র আনাসকে দিয়ে গোপনে পাঠিয়ে দেন। পরে রাসূল (সাঃ) সকল সাথীকে নিয়ে আবু ত্বালহার বাড়ীতে আসেন। অতঃপর রুটিগুলি টুকরা টুকরা করেন এবং বিসমিল্লাহ বলে ১০ জন করে সবাইকে খেতে বলেন। দেখা গেল ৮০ জন খাওয়ার পরেও আরও উদ্বৃত্ত রইল’।[বুখারী হা/৫৪৫০; মুসলিম হা/২০৪০] মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রুটিগুলি দুই মুদ বা অর্ধ মুদ যবের আটার তৈরী ছিল।[আহমাদ হা/১৩৪৫২, ১২৫১৩]
(৩১) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে খাদ্য ভক্ষণ অবস্থায় (কখনো কখনো) তার তাসবীহ শুনতে পেতাম’।[মিশকাত হা/৫৯১০]
(৩২) (ক) এক সফরে একটি উট এসে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট অভিযোগ পেশ করে। তখন তিনি মালিককে ডেকে বলেন, এই উটের কাছ থেকে অধিক কাজ নেওয়া হয় এবং তাকে খাদ্য কম দেওয়া হয়। অতএব এর সঙ্গে সদাচরণ কর। (খ) কিছু দুর গিয়ে এক স্থানে রাসূল (সাঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন মাটি ফুঁড়ে একটি গাছ উঠে এসে তাঁকে ছায়া করল। অতঃপর চলে গেল। (গ) অতঃপর কিছু দুর গিয়ে একটি ঝর্ণার নিকটে একজন মহিলা তার জিনে ধরা ছেলেকে নিয়ে আসল। রাসূল (সাঃ) তার নাক ধরে বললেন, বেরিয়ে যাও! আমি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ’। ফেরার পথে উক্ত মহিলাটি তার ছেলের সুস্থতার কথা জানালো’।[দারেমী হা/১৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১৪১৬৮; মিশকাত হা/৫৯২২] আনাস (রাঃ) কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, আনছারদের একটি বাগিচায় গেলে উট এসে তাঁর সামনে সিজদায় পড়ে যায়।[আহমাদ হা/১২৬৩৫; সহীহ ইবনু হিববান হা/৪১৬২]
(৩৩) ৫ম হিজরীতে খন্দক যুদ্ধে পরিখা খননের সময় ‘আম্মার বিন ইয়াসিরকে তিনি বলেন, ‘হে ‘আম্মার! জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে’।[মুসলিম হা/২৯১৫; মিশকাত হা/৫৮৭৮] অতঃপর তিনি ৩৭ হিজরীতে আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে সংঘটিত ছিফফীন যুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধ করা অবস্থায় ৯৩ বছর বয়সে শহীদ হন’।[আল-ইছাবাহ, ‘আম্মার ক্রমিক ৫৭০৮]
(৩৪) ইহূদী নেতা সালাম ইবনুল হুক্বাইক্ব-কে হত্যা শেষে আবু রাফে‘ দুর্গ থেকে ফেরার সময় আব্দুল্লাহ বিন আতীকের এক পা ভেঙ্গে যায়। পরে তাতে হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর তিনি সাথে সাথে পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান (বুখারী হা/৪০৩৯)।
(৩৫) তোমরা সত্ত্বর মাসজিদুল হারামে বিজয়ী বেশে প্রবেশ করবে বলে স্বপ্ন বর্ণনা। যা হোদায়বিয়ার সন্ধি ও পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।
(৩৬) পারস্যরাজ কিসরা তাঁর চিঠি ছিঁড়ে ফেললে তিনি বলেন, তার সাম্রাজ্যকে ছিন্নভিন্ন করুন।
(৩৭) কিসরার গবর্ণর প্রেরিত দূতদ্বয়কে তাদের সম্রাট আজ রাতেই নিহত হবে বলে খবর দেওয়া এবং তা সত্যে পরিণত হওয়া (সহীহাহ হা/১৪২৯)।
(৩৮) খায়বর যুদ্ধে আহত সালামা বিন আকওয়া‘ পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে রাসূল (সাঃ) সেখানে তিনবার থুক মারেন। তাতে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে যান।[বুখারী হা/৪২০৬; মিশকাত হা/৫৮৮৬]
(৩৯) খায়বর যুদ্ধে বিজয়ের দিন সকালে তিনি বলেন, আজ আমি যার হাতে পতাকা দিব, তার হাতেই বিজয় আসবে। পরে চোখের অসুখে কাতর আলীকে ডেকে এনে তার চোখে হাত বুলিয়ে দেন। তাতে তিনি সুস্থ হয়ে যান। অতঃপর খায়বরের শ্রেষ্ঠ না‘এম দুর্গ জয় করেন।[বুখারী হা/২৯৪২, ৩৭০১; মুসলিম হা/২৪০৬]
(৪০) মুতার যুদ্ধে গমনের সময় তিনি সেনাপতি যায়েদ, জা‘ফর ও আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা-এর আগাম শাহাদাতের খবর দেন। অতঃপর যুদ্ধের ময়দানে তাঁদের শাহাদাতের পর মদীনায় দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে সবাইকে তিনি খবর দেন এবং খালেদ বিন অলীদের হাতে যুদ্ধ জয়ের সুসংবাদ দেন।[মিশকাত হা/৫৮৮৭; বুখারী হা/৪২৬২]
(৪১) হোনায়েন যুদ্ধে সংকটকালে তিনি এক মুষ্ঠি বালু শত্রুদের দিকে ছুঁড়ে মারেন। তাতে সবাই পালিয়ে যায়।[মুসলিম হা/১৭৭৭ (৮১); মিশকাত হা/৫৮৯১]
(৪২) একই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষের জনৈক দুর্ধর্ষ যোদ্ধাকে তিনি বলেন, এই ব্যক্তি জাহান্নামী। পরে দেখা গেল তিনি আত্মহত্যা করে মারা গেলেন।[বুখারী হা/৬৬০৬; মিশকাত হা/৫৮৯২]
(৪৩) মদীনার লাবীদ বিন আ‘ছাম তার মাথার চুল ও চিরুনীতে জাদু করেন। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় তার নিকটে দু’জন ব্যক্তি এসে বলেন, ‘যারওয়ান’ কূয়ার নীচে সেটি পাথর চাপা দেওয়া আছে। পরে সেখান থেকে সেটি বের করা হয়।[বুখারী হা/৫৭৬৫; মুসলিম হা/২১৮৯]
(৪৪) হোনায়েন যুদ্ধে গণীমত বণ্টনকালে তাঁর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশকারী যুল-খুওয়াইছেরাহ-কে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তার অনুসারী একদল লোক হবে, যাদের সালাত, সিয়াম ও তেলাওয়াত তোমাদের চাইতে উত্তম হবে। এরা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়।[বুখারী হা/৩৩৪৪; মুসলিম হা/১০৬৪] পরবর্তীতে চরমপন্থী খারেজী দলের উদ্ভব উক্ত ছিল ভবিষ্যদ্বাণীরই বাস্তবতা।
(৪৫) আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর দাবীক্রমে তিনি বলেন, চাদর বিছিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তাতে দো‘আ করে ফুঁক দিলেন। তাতে তিনি আর কোনদিন হাদীছ ভুলে যাননি।[বুখারী হা/২৩৫০; মুসলিম হা/২৪৯৩]
(৪৬) খরায় আক্রান্ত মদীনায় বৃষ্টির জন্য দো‘আ চাইলে তিনি দো‘আ করেন। ফলে প্রচুর বৃষ্টিতে মদীনার রাস্তা-ঘাট ডুবে যেতে থাকে। তখন তিনি পুনরায় দো‘আ করেন। ফলে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়।[বুখারী হা/১০১৩; মিশকাত হা/৫৯০২]
(৪৭) তাবূক যুদ্ধে গমনের সময় যুল-বিজাদায়েনকে তিনি বলেন, তুমি যদি প্রচন্ড জ্বরে মারা যাও, তাতেও তুমি শহীদ হিসাবে গণ্য হবে। পরে তাবূক পৌঁছে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৮৮৭]
(৪৮) ফাযালাহ বিন ওবায়েদ (রাঃ) বলেন, তাবূক থেকে ফেরার পথে আমাদের উটগুলি কষ্টে হাসফাস করতে থাকে। তখন রাসূল (সাঃ) দো‘আ করেন। ফলে মদীনায় আসা পর্যন্ত তারা সবল থাকে’ (আহমাদ হা/২৪০০১, হাদীছ সহীহ)।
(৪৯) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নেকড়ে একটি বকরীকে ধরে নিল। তখন রাখাল সেটি ছিনিয়ে নিল। নেকড়ে বলল, তুমি কি আল্লাহকে ভয় কর না? তুমি আমার রিযিক ছিনিয়ে নিলে। যা আল্লাহ আমার জন্য পাঠিয়েছিলেন। রাখাল বলল, কি আশ্চর্য! আমার সঙ্গে নেকড়ে মানুষের মত কথা বলছে। তখন নেকড়ে বলল, আমি কি তোমার নিকটে এর চাইতে বিস্ময়কর খবর দিব না? মুহাম্মাদ ইয়াছরিবে এসেছেন। তিনি মানুষকে গায়েবের খবর দিচ্ছেন। তখন রাখালটি দ্রুত মদীনায় প্রবেশ করল এবং এসে দেখল রাসূল (সাঃ) সমবেত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, অতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না পশুরা মানুষের সাথে কথা বলবে (আহমাদ হা/১১৮০৯, হাদীছ সহীহ)।
(৫০) একদিন তিনি আবুবকর, উমর ও উসমানকে সাথে নিয়ে ওহুদ পাহাড়ে ওঠেন। ফলে পাহাড়টি কেঁপে ওঠে। তখন তিনি পা দিয়ে আঘাত করে বলেন, হে পাহাড়! থাম। তোমার উপরে একজন নবী, একজন ছিদ্দীক্ব ও দু’জন শহীদ আছেন’।[বুখারী হা/৩৬৮৬; মিশকাত হা/৬০৭৪] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সাঃ) উসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহ তোমাকে পোষাক পরাবেন। যদি মুনাফিকরা সেই পোষাক খুলে নিতে চায়, তাহলে তুমি কখনই তা তাদেরকে খুলে দিয়ো না। একথা তিনি তিনবার বলেন’।[তিরমিযী হা/৩৭০৫; ইবনু মাজাহ হা/১১২; মিশকাত হা/৬০৬৮] বস্ত্ততঃ এই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন