শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

পরিশিষ্ট

 

পরিশিষ্ট

১. অহি লেখকগণ :
━━━━━━━━━━━
যায়েদ বিন সাবিত (রাঃ) ছিলেন অহি লেখকগণের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। সেকারণ কুরআন জমা করার সময় উসমান (রাঃ) তাঁকেই এ গুরুদায়িত্ব প্রদান করেন (বুখারী হা/৪৬৭৯, ৪৯৭৯)। তিনি ব্যতীত আরও অনেক সাহাবী বিভিন্ন সময়ে এ মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন।
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, অহি নাযিলের শুরু থেকে মক্কায় অহি লেখকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন উসমান (রাঃ)-এর দুধভাই (১) আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবু সারাহ। ইনি পরে ‘মুরতাদ’ হয়ে যান। অতঃপর মক্কা বিজয়ের দিন পুনরায় মুসলমান হন। অতঃপর বিভিন্ন সময়ে অহি লেখক ছিলেন (২) আবুবকর (৩) উমর (৪) উসমান (৫) আলী (৬) যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (৭) খালেদ বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ ও তাঁর ভাই (৮) আবান বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ (৯) হানযালা বিন রবী‘ আসাদী (১০) মু‘আইক্বীব বিন আবু ফাতেমা দাওসী (১১) আব্দুল্লাহ বিন আরক্বাম যুহরী (১২) শুরাহবীল বিন হাসানাহ কুরায়শী (১৩) আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা আনছারী।
মদীনায় প্রথম অহি লেখক ছিলেন (১৪) উবাই বিন কা‘ব। অতঃপর (১৫) যায়েদ বিন সাবিত। তিনি অনুপস্থিত থাকলে অন্যেরা লিখতেন’ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)।[1] (১৬) এছাড়া বনু নাজ্জারের জনৈক ব্যক্তি, যে খ্রিষ্টান হয়ে যায়। অতঃপর মুসলমান হন।[বুখারী হা/৩৬১৭; মুসলিম হা/২৭৮১]


২. অন্যান্য বিষয়ে লেখকগণ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━
(১) আবু সালামাহ মাখযূমী (২) আরক্বাম বিন আবুল আরক্বাম (৩) ‘আমের বিন ফুহায়রাহ (৪) ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (৫) হাত্বেব বিন ‘আমর আবু বালতা‘আহ (৬) আব্দুল্লাহ বিন আবুবকর (৭) আবু আইয়ূব আনছারী (৮) বুরায়দাহ বিন হুছাইব আসলামী (৯) হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (১০) মু‘আয বিন জাবাল (১১) জনৈক আনছার আবু ইয়াযীদ (১২) সাবেত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাস (১৩) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন ‘আব্দে রবিবহি (১৪) মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (১৫) আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উবাই (১৬) খালেদ বিন অলীদ (১৭) ‘আমর ইবনুল ‘আছ (১৮) মুগীরাহ বিন শো‘বা ছাক্বাফী (১৯) জুহাম বিন সা‘দ (২০) জুহাইম বিন ছালত (২১) হুছায়েন বিন নুমায়ের (২২) হুয়াইত্বিব বিন আব্দুল ‘উযযা (২৩) সাঈদ বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ (২৪) জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব (২৫) হানযালা বিন রবী‘ ও তার ভাই (২৬) রাবাহ ও চাচা (২৭) আকছাম বিন ছায়ফী তামীমী (২৮) ‘আলা ইবনুল হাযরামী (২৯) ‘আলা বিন উক্ববাহ (৩০) আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (৩১) আবু সুফিয়ান বিন হারব (৩২) ঐ পুত্র ইয়াযীদ বিন আবু সুফিয়ান ও (৩৩) মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম।[2] এতদ্ব্যতীত (৩৪) আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ যিনি হাদীছ লিখনে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
লেখকগণের মধ্যে মদীনায় যাঁরা বিশেষ বিশেষ কাজে প্রসিদ্ধ ছিলেন তাঁরা হলেন, (১) অহি লিখনে আলী, উসমান, উবাই বিন কা‘ব এবং যায়েদ বিন সাবেত। (২) বাদশাহ ও আমীরদের নিকটে পত্র লিখনে যায়েদ বিন সাবেত। (৩) চুক্তি লিখনে আলী ইবনু আবী তালেব। (৪) মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন সমূহ লিখনে মুগীরাহ বিন শো‘বা। (৫) ঋণচুক্তিসমূহ লিখনে আব্দুল্লাহ বিন আরক্বাম। (৬) গণীমতসমূহ নিবন্ধনে মু‘আইকীব। কোন লেখক অনুপস্থিত থাকলে হানযালা বিন রবী‘ লেখকের দায়িত্ব পালন করতেন। সেজন্য তিনি হানযালা আল-কাতেব নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন।[3]
এঁদের মধ্যে (১) খালেদ বিন সাঈদ ছিলেন আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর পরে ইসলাম কবুলকারী ৩য়, ৪র্থ অথবা ৫ম ব্যক্তি। কারণ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি জাহান্নামের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পিতা তাকে সেদিকে ঠেলে দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার হাত টেনে ধরেছেন, যাতে তিনি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত না হন। পরদিন এ স্বপ্ন আবুবকর (রাঃ)-কে বললে তিনি বলেন, এটি শুভ স্বপ্ন। ইনিই আল্লাহর রাসূল। অতএব তুমি তাঁর অনুসরণ কর। তাহলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। যার ভয় তুমি করছ’। অতঃপর তিনি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট আসেন ও ইসলাম কবুল করেন। এ খবর জানতে পেরে তার পিতা তাকে লাঠিপেটা করেন, খানা-পিনা বন্ধ করে দেন ও তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে তিনি হাবশায় হিজরত করেন। অতঃপর হাবশা থেকে জা‘ফরের সাথে খায়বরে আসেন ও রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ত্বায়েফবাসীদের সাথে সন্ধির সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। পরে সেখান থেকে আগত ছাক্বীফ প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পক্ষে চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করেন। আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর খেলাফতকালে তিনি শামের আজনাদাইন যুদ্ধে শহীদ হন।
(২) ‘আমের বিন ফুহায়রা আবুবকর (রাঃ)-এর মুক্তদাস ছিলেন। হিজরতকালে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর সাথী ছিলেন। পথিমধ্যে পিছু ধাওয়াকারী সুরাক্বাহ বিন মালেক মুদলেজী-কে রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশে তিনি একটি ‘নিরাপত্তানামা’ (كِتَابُ أَمْنٍ) লিখে দেন। ৪র্থ হিজরীতে বি’রে মাঊনা-র মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি শহীদ হন।
(৩) আরক্বাম বিন আবুল আরক্বাম মাখযূমী (রাঃ) প্রথম দিকের ৭ম বা ১০ম মুসলমান ছিলেন। সাফা পাহাড়ে তাঁর গৃহে রাসূল (সাঃ) ইসলামের প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করেন। যা ‘দারুল আরক্বাম’ (دَارُ الْأَرْقَمِ) নামে পরিচিত হয়। তিনি ৫৩ অথবা ৫৫ হিজরীতে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন (আল-ইছবাহ, আরক্বাম ক্রমিক ৭৩)।
(৪) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন ‘আব্দে রবিবহী বায়‘আতে কুবরা-য় শরীক ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদা ছিল এই যে, তিনিই প্রথম আযানের স্বপ্ন দেখেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে ‘সত্যস্বপ্ন’ (إِنَّهَا لَرُؤْيَا حَقٌّ) বলে আখ্যায়িত করেন এবং আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করে বলেন, ফালিল্লাহিল হাম্দ(فََلِلَّهِ الْحَمْدُ) । অতঃপর বেলালের মাধ্যমে তা চালু করে দেন (আবুদাঊদ হা/৪৯৯)। তিনি ৩২ হিজরীতে ৬৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। খলীফা উসমান (রাঃ) স্বয়ং তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন (আল-ইছাবাহ, আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ ক্রমিক ৪৬৮৯)।
(৫) আব্দুল্লাহ সা‘দ বিন আবু সারাহ উসমান বিন ‘আফফান (রাঃ)-এর দুধভাই ছিলেন। উসমানের মা তাঁকে দুধ পান করিয়েছিলেন। তিনি অহি লিখতেন। কিন্তু পরে ‘মুরতাদ’ হয়ে যান। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (সাঃ) যাদের রক্ত বৃথা ঘোষণা করেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। পরে তিনি উসমান (রাঃ)-এর নিকটে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ফলে রাসূল (সাঃ) তাকে আশ্রয় দেন। এরপর থেকে মৃত্যু অবধি তাঁর ইসলাম খুবই সুন্দর ছিল। উসমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ২৫ হিজরীতে তাঁকে মিসরের গবর্ণর নিযুক্ত করা হয় এবং আফ্রিকা জয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর তাঁর আমলেই আফ্রিকা বিজিত হয়। উক্ত যুদ্ধে বিখ্যাত তিন ‘আবাদেলাহ’ অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের, আব্দুল্লাহ বিন উমর এবং আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর যোগদান করেন। ৩৫ হিজরীতে উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতকালে তিনি মিসরের ‘আসক্বালান’ শহরে ছিলেন। তিনি আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন যেন সালাতরত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। অতঃপর একদিন ফজরের সালাত আদায়কালে শেষ বৈঠকে প্রথম সালাম ফিরানোর পর দ্বিতীয় সালাম ফিরানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। এটি ছিল ৩৬ অথবা ৩৭ হিজরীর ঘটনা।[4]
(৬) উবাই বিন কা‘ব আনছারী (রাঃ) বায়‘আতে কুবরা এবং বদর-ওহুদ সহ সকল যুদ্ধে রাসূল (সাঃ)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সাত জন শ্রেষ্ঠ ক্বারীর নেতা। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উবাই বিন কা‘বকে বললেন, إِنَّ اللهَ أَمَرَنِىْ أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ (لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوْا) قَالَ وَسَمَّانِىْ لَكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَبَكَى ‘আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমার উপরে সূরা বাইয়েনাহ পাঠ করি। উবাই বললেন, আল্লাহ আপনার নিকটে আমার নাম বলেছেন? রাসূল (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন উবাই (খুশীতে) কাঁদতে লাগলেন’।[বুখারী হা/৪৯৫৯, মুসলিম হা/৭৯৯] তিনিই প্রথম রাসূল (সাঃ)-এর অহি লেখক ছিলেন এবং অন্যতম ফৎওয়া দানকারী সাহাবী ছিলেন। অধিকাংশের মতে তিনি উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ২২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে উমর (রাঃ) বলেন, আজ মুসলমানদের নেতা মৃত্যুবরণ করল (আল-ইছাবাহ, উবাই ক্রমিক ৩২)।
(৭) যায়েদ বিন সাবেত আনছারী (রাঃ) বয়স কম থাকায় বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে সকল যুদ্ধে রাসূল(সাঃ)-এর সাথী ছিলেন। তিনি অহি লিখতেন এবং শিক্ষিত সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন (مِنْ عُلَمَاءِ الصَّحَابَةِ)। আবুবকর (রাঃ)-এর সময় কুরআন সংকলনের দায়িত্ব তাঁর উপরেই প্রদান করা হয়। হিজরতের পর রাসূল (সাঃ)-এর নিকট বনু নাজ্জারের এই তরুণকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলে তিনি তাঁকে কুরআনের ১৭টি সূরা মুখস্থ শুনিয়ে দেন। তাতে বিস্মিত হয়ে রাসূল (সাঃ) বলেন, তুমি ইহূদীদের পত্র পাঠ করা শিখ। তখন আমি ১৫ দিনের মধ্যেই ইহূদীদের ভাষা শিখে ফেলি। অতঃপর রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে তাদের নিকট আমি পত্র লিখতাম এবং তারা লিখলে আমি তাঁকে তা পড়ে শুনাতাম’ (আল-ইছাবাহ, যায়েদ বিন সাবেত ক্রমিক ২৮৮২)।
(৮) আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর ইবনুল ‘আছ সাহমী কুরায়শী (রাঃ) অত্যন্ত ‘আবেদ ও যাহেদ সাহাবী ছিলেন। রাসূল (সাঃ) এই তরুণ সাহাবীকে একদিন অন্তর একদিন সিয়াম রাখার ও সাতদিনে বা সর্বনিম্নে তিনদিনে কুরআন খতম করার অনুমতি দেন (বুখারী হা/৫০৫২)। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর হাদীছসমূহ লিপিবদ্ধ করতেন। তিনি বলেন, আমি নিয়মিত হাদীছ লিখতাম। তাতে কুরায়েশরা আমাকে নিষেধ করে এবং বলে যে, তুমি সব কথা লিখ না। কেননা রাসূল (সাঃ) একজন মানুষ। তিনি ক্রোধের সময় ও খুশীর সময় কথা বলেন। তখন আমি লেখা বন্ধ করি এবং রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে উক্ত বিষয়টি উত্থাপন করি। জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, اكْتُبْ فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا خَرَجَ مِنِّى إِلاَّ حَقٌّ ‘তুমি লেখ। যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, আমার থেকে হক ব্যতীত কিছুই বের হয় না’ (আহমাদ হা/৬৫১০, হাদীছ সহীহ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, مَا أَجِدُ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه و سلم أَكْثَرَ حَدِيْثًا مِنِّي إِلاَّ مَا كَانَ مِنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو فَإِنَّهُ كَانَ يَكْتُبُ ‘রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীগণের মধ্যে আমি আমার চাইতে অধিক হাদীছ বর্ণনাকারী কাউকে পাইনি আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর ব্যতীত। কেননা তিনি হাদীছ লিখতেন’। তিনি ৬৫ হিজরীতে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর স্থান নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন শামে বা ত্বায়েফে বা মিসরে বা মক্কায়’ (আল-ইছাবাহ, আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর ক্রমিক ৪৮৫০)। তাঁর লিখিত হাদীছের সংখ্যা অন্যূন সাতশত।
(৯) অনুরূপভাবে বনু নাজ্জারের জনৈক ব্যক্তি খ্রিষ্টান হয়ে যায়। পরে সে মুসলমান হয়ে ‘অহি’ লেখার দায়িত্ব পায়। অতঃপর সে পালিয়ে গিয়ে পুনরায় খ্রিষ্টান হয়ে যায় এবং অপবাদ দেয় যে, মুহাম্মাদ সেটুকুই জানে, যতটুকু আমি লিখি (مَا يَدْرِى مُحَمَّدٌ إِلاَّ مَا كَتَبْتُ لَهُ)। পরে আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেন। লোকেরা তাকে দাফন করে। কিন্তু সকালে দেখা গেল যে, মাটি তাকে উগরে ফেলে দিয়েছে। তখন লোকেরা বলল, এসব মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের কাজ। অতঃপর তারা খুব গভীর করে তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে একইভাবে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেল। তখন লোকেরা বলল, এটি মানুষের কাজ নয়। অতঃপর তারা তাকে ফেলে রাখল’ (বুখারী হা/৩৬১৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে বলেছিল, আমি মুহাম্মাদের চাইতে বেশী জানি। আমি চাইলে এরূপ লিখতে পারি’(أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِمُحَمَّدٍ إِنْ كُنْتُ لأَكْتُبُ مَا شِئْتُ)। অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করে। তার উপরোক্ত কথা জানতে পেরে রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘মাটি তাকে কখনই কবুল করবে না’ (إِنَّ الأَرْضَ لَنْ تَقْبَلَهُ)। রাবী আনাস (রাঃ) বলেন, আবু ত্বালহা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমি তার মৃত্যুর স্থানে গিয়ে দেখি যে, তার লাশ মাটির উপরে পড়ে আছে। তিনি লোকদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, আমরা তাকে বারবার দাফন করেছি। কিন্তু মাটি তাকে বারবার উপরে ফেলে দিয়েছে’।[5]


৩. মুক্তদাস ও দাসীগণ :
━━━━━━━━━━━━━━
ইমাম নববী বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাসূল (সাঃ)-এর মোট ৫০ জন গোলাম ছিল। যেমন, (১) যায়েদ বিন হারেছাহ (২) ছাওবান বিন বুজদুদ (ثوبان بن بجدد) (৩) আবু কাবশাহ সুলায়েম। ইনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। (৪) বাযাম (৫) রুওয়াইফে‘ (৬) ক্বাছীর (৭) মায়মূন (৮) আবু বাকরাহ (৯) হুরমুয (১০) আবু ছাফিইয়াহ উবায়েদ (১১) আবু সালমা (১২) আনাসাহ (১৩) সালেহ (১৪) শুক্বরান (১৫) রাবাহ (১৬) আসওয়াদ আন-নূবী (১৭) ইয়াসার আর-রা‘ঈ (১৮) আবু রাফে‘ আসলাম (১৯) আবু লাহছাহ (أبو لهثة)। (২০) ফাযালাহ ইয়ামানী (২১) রাফে‘ (২২) মিদ‘আম (২৩) আসওয়াদ (২৪) কিরকিরাহ (২৫) যায়েদ, যিনি হেলাল বিন ইয়াসার-এর দাদা ছিলেন। (২৬) ওবায়দাহ (২৭) ত্বাহমান (অথবা কায়সান, মিহরান, যাকওয়ান, মারওয়ান)। (২৮) মা’বূর আল-ক্বিবত্বী (২৯) ওয়াক্বেদ (৩০) আবু ওয়াক্বেদ (৩১) হিশাম (৩২) আবু যুমাইরাহ (৩৩) হোনায়েন (৩৪) আবু ‘আসীব আহমার (৩৫) আবু ওবায়দাহ (৩৬) মিহরান ওরফে সাফীনাহ (৩৭) সালমান ফারেসী (৩৮) আয়মান বিন উম্মে আয়মান (৩৯) আফলাহ (৪০) সাবেক্ব (৪১) সালেম (৪২) যায়েদ বিন বূলা (زيد بن بولا)। (৪৩) সাঈদ (৪৪) যুমাইরাহ বিন আবু যুমাইরাহ (ضُمَيرة بن أبى ضميرة) (৪৫) ওবায়দুল্লাহ বিন আসলাম (৪৬) নাফে‘ (৪৭) নাবীল (৪৮) ওয়ারদান (৪৯) আবু উছাইলাহ (أبو أثيلة)। (৫০) আবুল হামরা রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) আরও কয়েকজন মুক্তদাসের নাম বলেছেন। যেমন (১) আনজাশাহ (২) সানদার (سندر) (৩) ক্বাসাম (قسام) (৪) আবু মুওয়াইহিবাহ (যাদুল মা‘আদ ১/১১১-১৩)।
মুক্তদাসী ছিল ১২ জন। যেমন, (১) সালমা (২) উম্মে রাফে‘ (৩) উম্মে আয়মান বারাকাহ (৪) মায়মূনাহ বিনতে সাঈদ (৫) খাযেরাহ (خَضِرَةُ)। (৬) রাযওয়া (رَضْوَى)। (৭) উমাইমাহ (৮) রায়হানা (৯) উম্মে যুমাইরাহ (১০) মারিয়াহ বিনতে শাম‘ঊন আল-ক্বিবত্বিয়াহ (১১) তার বোন শীরীন (১২) উম্মে আববাস। এরা কেউ একসঙ্গে ছিলেন না। বরং বিভিন্ন সময়ে ছিলেন।[6] ইবনুল ক্বাইয়িম আর একজনের নাম বলেছেন, রাযীনাহ (رَزِينَةُ) (যাদুল মা‘আদ ১/১১৩)।
মারিয়াহ ও শীরীন দুই বোনকে মিসর রাজ মুক্বাউক্বিস রাসূল (সাঃ)-এর জন্য উপঢৌকন হিসাবে প্রেরণ করেন। পরে রাসূল (সাঃ) মারিয়াকে রাখেন ও শীরীনকে হাসসান বিন সাবিত আনছারী-কে হাদিয়া দেন। মারিয়ার গর্ভে রাসূল (সাঃ)-এর শেষ সন্তান ইবরাহীমের জন্ম হয় ও শীরীন-এর গর্ভে আব্দুর রহমান বিন হাসসান-এর জন্ম হয় (আল-বিদায়াহ ৫/৩০৭-০৮)।


৪. খাদেমগণ :
━━━━━━━━
(১) আনাস বিন মালেক (২) হিন্দ ও তার ভাই (৩) আসমা বিন হারেছাহ আসলামী (৪) রাবী‘আহ বিন কা‘ব আসলামী (৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ। ইনি রাসূল (সাঃ)-এর জুতা ও মিসওয়াক বহন করতেন। যখনই তিনি উঠতেন জুতা পরিয়ে দিতেন এবং যখনই তিনি বসতেন জুতা জোড়া খুলে নিজ হাতে নিয়ে নিতেন। (৬) ওক্ববাহ বিন ‘আমের আল-জুহানী। সফরকালে তাঁর খচ্চর চালনা করতেন। (৭) বেলাল বিন রাবাহ, মুওয়াযযিন (৮) সা‘দ। দু’জনেই ছিলেন আবুবকর ছিদ্দীক-এর মুক্তদাস। (৯) বাদশাহ নাজাশীর ভাতিজা যূ-মিখমার। যাকে রাসূল (সাঃ)-এর খিদমতের জন্য ৭ম হিজরীতে বাদশাহ পাঠিয়েছিলেন। (১০) বুকায়ের বিন সারাহ লায়ছী (১১) আবু যার গিফারী (১২) আসলা‘ বিন শারীক আ‘রাজী। সওয়ারী পালন করতেন। (১৩) মুহাজির। উম্মে সালামাহ (রাঃ)-এর মুক্তদাস। (১৪) আবুস সাজা‘ (أبو السجع) রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম (টীকা-পূর্বোক্ত)।
(১৫) এছাড়া একটি ইহূদী বালক তাঁর খাদেম ছিল। যে তাঁর ওযূর পানি ও জুতা এগিয়ে দিত। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূল (সাঃ) তাকে দেখতে যান। তার আসন্ন মৃত্যু বুঝতে পেরে তিনি তাকে ইসলাম কবুলের দাওয়াত দেন। সে তার পিতার দিকে তাকালে পিতা তাকে বললেন, أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ ‘তুমি আবুল ক্বাসেমের আনুগত্য কর’। তখন ছেলেটি কালেমা শাহাদাত পড়ে ইসলাম কবুল করল। অতঃপর মারা গেল। তখন রাসূল (সাঃ) বেরিয়ে আসার সময় বললেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَنْقَذَهُ بِى مِنَ النَّارِ ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমার মাধ্যমে ছেলেটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন’।[বুখারী হা/১৩৫৬; মিশকাত হা/১৫৭৪]


৫. উট, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━
উট : (১) ‘ক্বাছওয়া’ (الْقَصْوَاءُ)। যাতে সওয়ার হয়ে তিনি মক্কা বিজয়ের সফরে গমন করেন এবং হজ্জের সময় আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দেন (বুখারী হা/৪৪০০; তিরমিযী হা/৩৭৮৬)। (২) ‘আযবা’ (الْعَضْبَاءُ) ও (৩) ‘জাদ‘আ’(الْجَدْعَاءُ) নামে তাঁর আরও দু’টি উষ্ট্রী ছিল। ‘আযবা’ ছিল অত্যন্ত দ্রুতগামী। যাকে কেউ হারাতে পারত না । একবার জনৈক বেদুঈন সওয়ারী আযবা-কে অতিক্রম করে গেলে রাসূল (সাঃ) সাথীদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘দুনিয়াতে আল্লাহর নীতি এটাই যে, কাউকে উঁচু করলে তাকে নীচুও করে থাকেন’ (বুখারী হা/৬৫০১)। বিদায় হজ্জে ঈদুল আযহার দিন এর পিঠে বসে তিনি কংকর মারেন। অতঃপর ভাষণ দেন।[আহমাদ হা/২০০৮৬-৮৭; আবুদাঊদ হা/১৯৫৪] জাদ‘আ (الْجَدْعَاءُ) হিজরতের সময় আবুবকর (রাঃ) তাঁকে প্রদান করেন (বুখারী হা/৪০৯৩)। আইয়ামে তাশরীক্বের সময় এর পিঠে সওয়ার হয়ে তিনি ভাষণ দেন।[বায়হাক্বী ৫/১৫২, হা/৯৪৬৪; আবুদাঊদ হা/১৯৫২] (৪) আরেকটি অত্যন্ত দ্রুতগামী উট ছিল। যাকে কেউ অতিক্রম করতে পারত না। যা তিনি বদরের যুদ্ধে নিহত আবু জাহলের গণীমত হিসাবে পেয়েছিলেন। যার নাকে রূপার নোলক ছিল। এটাকে তিনি হোদায়বিয়ার দিন নহর করেন মুশরিকদের ক্রুদ্ধ করার জন্য’।[বায়হাক্বী হা/৯৬৭৪; তিরমিযী হা/ ৮১৫; আবুদাঊদ হা/১৭৪৯]
ঘোড়া : তাঁর ঘোড়া ছিল ৭টি। (১) ‘সাক্ব’ (السَّكْبُ)। যার রং ছিল কালো ও কপালচিতা। (২) ‘মুরতাজিয’ (الْمُرْتَجِزُ) (৩) ‘লুহাইফ’ (اللُّحَيْفُ) (৪) ‘লেযায’ (اللِّزَازُ) (৫) ‘যারিব’ (الظَّرِبُ) (৬) ‘সাবহাহ’ (السَّبْحَةُ) এবং (৭) ‘ওয়ার্দ’ (الْوَرْدُ)। ঘোড়ার পালানের নাম ছিল ‘দাজ’ (الدَّاجُ)। অনেকে বলেছেন তাঁর ঘোড়া ছিল ১৫টি। তবে এতে মতভেদ আছে।
খচ্চর : তাঁর খচ্চর ছিল ৩টি। (১) ‘দুলদুল’ (دُلْدُلُ)। যা ছিল সাদা-কালো ডোরা কাটা। যা মিসর রাজ মুক্বাউক্বিস হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। (২) ‘ফায্যাহ’ (فَضَّةٌ)। যা ছিল সাদা। যা রোম সম্রাটের পক্ষে মা‘আন (مَعَان)-এর গবর্ণর ফারওয়া আল-জুযামী ইসলাম কবুলের পর তাঁকে হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। (৩) আরেকটি ডোরা কাটা খচ্চর ছিল, যা আয়লার অধিপতি হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, নাজাশীও তাঁর জন্য একটি খচ্চর পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি সওয়ার হতেন।
গাধা : তাঁর গাধা ছিল ২টি। (১) ইয়া‘ফূর (يَعْفُورٌ) বা ‘উফায়ের (عُفَيْرٌ)। যা ছিল সাদা-কালো ডোরা কাটা। মিসর রাজ মুক্বাউক্বিস তাঁকে হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। (২) অন্যটি ফারওয়া আল-জুযামী হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন। বলা হয়েছে যে, সা‘দ বিন উবাদাহ (রাঃ) তাঁকে আরেকটি গাধা হাদিয়া দিয়েছিলেন। যাতে তিনি সওয়ার হতেন।


৬. অস্ত্র-শস্ত্র :
━━━━━━━
তরবারী : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ৯টি তরবারী ছিল। (১) মা’ছূর (مَأْثُورٌ)। যা তিনি পৈত্রিক উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। (২) ‘আয্ব (الْعَضْبُ)। (৩) ‘যুল-ফিক্বার’ (ذُو الْفِقَارِ)। এটি তিনি ছাড়তেন না। যার বাঁট ছিল লোহার তৈরী ও রূপা দিয়ে মোড়ানো। (৪) ক্বালাঈ (الْقَلَعِيّ)। (৫) বাত্তার (الْبَتَّارُ)। (৬) হাত্ফ (الْحَتْفُ)। (৭) রাসূব (الرَّسُوبُ)। (৮) মিখযাম (الْمِخْذَمُ)। (৯) ক্বাযীব (الْقَضِيبُ)।
বর্ম : তাঁর বর্ম ছিল ৭টি : (১) ‘যাতুল ফুযূল’(ذَاتُ الْفُضُولِ)। লোহার তৈরী এই বর্মটি মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় পরিবারের জন্য রাসূল (সাঃ) জনৈক আবু শাহম (أَبو الشَّحْم) ইহূদীর নিকট ৩০ ছা‘ (৭৫ কেজি) যবের বিনিময়ে এক বছরের জন্য বন্ধক রেখেছিলেন। (২) ‘যাতুল বিশাহ’ (ذَاتُ الْوِشَاحِ)। (৩) ‘যাতুল হাওয়াশী’ (ذَاتُ الْحَوَاشِي)। (৪) সা‘দিয়াহ (السَّعْدِيَّةُ)। (৫) ফিযযাহ (فِضَّةٌ)। (৬) বাতরা (الْبَتْرَاءُ)। (৭) খিরনিক্ব (الْخِرْنِقُ)। (যাদুল মা‘আদ ১/১২৬)।
এতদ্ব্যতীত তাঁর (১) তীরের নাম ছিল ‘সাদাদ’ (السَّدَادُ)। (২) শরাধারের নাম ছিল ‘আল-জাম‘উ’ (الْجَمْعُ)। (৩) বর্শার নাম ছিল ‘সাগা’ (السَّغَاء)। (৪) তাঁর শিরস্ত্রানের নাম ছিল ‘যাক্বান’ (الذَّقَنُ)। (৫) ঢালের নাম ছিল ‘মূজেয’ (الْمُوجِزُ)।[ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ৬/৯]
ব্যবহৃত বস্ত্তসমূহের বিষয় পর্যালোচনা :
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ব্যবহৃত বস্ত্তসমূহকে বরকতের বস্ত্ত হিসাবে পূজা করার কোনরূপ নির্দেশনা শরী‘আতে নেই। তেমন কিছু থাকলে সাহাবায়ে কেরাম নিজেরাই সেগুলি সংরক্ষণ করতেন। বরং এর বিপরীত তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে এবং তাঁর কবরে পূজা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।[বুখারী হা/৩৪৪৫, ১৩৯০; মিশকাত হা/৭৫০] তাঁর ব্যবহৃত পোষাক, জুতা এমনকি তাঁর চুল ইত্যাদি নিয়ে মুসলিম বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলে যেভাবে অতি ভক্তি দেখানো হয়, এমনকি অনেক স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলি স্রেফ বাড়াবাড়ি বৈ কিছুই নয়।


৭. দূতগণ :
━━━━━━
(১) ‘আমর বিন উমাইয়া যামরী : বাদশাহ নাজাশীর নিকট প্রেরিত হন। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর পত্র হাতে নিয়ে সিংহাসন থেকে নীচে নেমে মাটিতে বসেন। অতঃপর জা‘ফর বিন আবু ত্বালিবের নিকটে কালেমা পাঠ করে ইসলাম কবুল করেন। তাঁর ইসলাম আমৃত্যু সুন্দর ছিল। (২) দেহিইয়াহ বিন খালীফাহ কালবী : রোম সম্রাট হেরাক্বল-এর নিকট প্রেরিত হন। (৩) আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ সাহমী : পারস্য সম্রাট কিসরার নিকট। (৪) হাত্বেব বিন আবু বালতা‘আহ লাখমী : মিসর রাজ মুক্বাউক্বিস-এর নিকট। (৫) আমর ইবনুল ‘আছ : ওমানের সম্রাট দুই ভাইয়ের নিকট। (৬) সালীত্ব বিন আমর ‘আলাবী : ইয়ামামার শাসক হাওযাহ বিন আলী-এর নিকট। (৭) শুজা‘ বিন ওয়াহাব আল-আসাদী : শামের বালক্বা-এর শাসক হারেছ বিন আবু শিম্র আল-গাসসানীর নিকট। (৮) মুহাজির বিন আবু উমাইয়াহ মাখযূমী : হারেছ আল-হিমইয়ারীর নিকট। (৯) ‘আলা ইবনুল হাযরামী : বাহরায়েনের শাসক মুনযির বিন সাওয়া আল-‘আব্দীর নিকট। (১০) আবু মূসা আশ‘আরী ও মু‘আয বিন জাবাল : ইয়ামনবাসী ও তাদের শাসকদের নিকট প্রেরিত হন। তাদের শাসকবর্গসহ অধিকাংশ জনগণ ইসলাম কবুল করেন।[7]


৮. তাঁর মুওয়াযযিনগণ :
━━━━━━━━━━━━━
মোট চারজন। তন্মধ্যে দু’জন (১) বেলাল বিন রাবাহ ও (২) আমর ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) মদীনায়, ‘আম্মার বিন ইয়াসিরের মুক্তদাস (৩) সা‘দ আল-ক্বারয ক্বোবায় এবং (৪) আবু মাহযূরাহ আউস বিন মুগীরাহ আল-জুমাহী ছিলেন মক্কায় (যাদুল মা‘আদ ১/১২০)।


৯. তাঁর আমীরগণ :
━━━━━━━━━━━
(১) বাযান বিন সামান। পারস্য সম্রাট কিসরা নিহত হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) তাকে ইয়ামনের গবর্ণর নিয়োগ করেন। ইনিই ছিলেন ইয়ামনে ইসলামী যুগের প্রথম আমীর ও প্রথম অনারব মুসলিম। বাযানের মৃত্যুর পর তার পুত্র শাহর বিন বাযানকে আমীর নিযুক্ত হন। পরে তিনি নিহত হলে রাসূল (সাঃ) খালেদ বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-কে সেখানকার আমীর নিয়োগ করেন।
(২) মুহাজির বিন উমাইয়া মাখযূমীকে রাসূল (সাঃ) কিন্দাহ ও ছাদিফ (الصَّدِف) এলাকার আমীর নিযুক্ত করেন। রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর আবুবকর (রাঃ) সেখানকার কিছু মুরতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অভিযান প্রেরণ করেন।
(৩) যিয়াদ বিন উমাইয়া আনছারীকে হাযরামাঊত (৪) আবু মূসা আশ‘আরীকে যাবীদ (زَبِيد), আদন ও সাগর তীরবর্তী এলাকা (৫) মু‘আয বিন জাবালকে জান্দ (الْجَنْد) এলাকা (৬) আবু সুফিয়ান ছাখর বিন হারবকে নাজরান এবং তাঁর পুত্র (৭) ইয়াযীদকে তায়মা (৮) আত্তাব বিন আসীদকে মক্কা (৯) আলী ইবনু আবী ত্বালেবকে ইয়ামন (১০) আমর ইবনুল ‘আছকে ওমান এলাকার প্রশাসক নিয়োগ করেন। এতদ্ব্যতীত (১১) আবুবকর (রাঃ)-কে ৯ম হিজরীতে হজ্জের আমীর নিযুক্ত করেন। যদিও আল্লাহর শত্রু রাফেযী শী‘আরা বলে থাকে যে, আলীকে পাঠিয়ে আবুবকরকে বরখাস্ত করা হয়’ (যাদুল মা‘আদ ১/১২১-২২)।


১০. হজ্জ ও ওমরাহসমূহ :
━━━━━━━━━━━━━━━
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) মাত্র ১টি হজ্জ করেন এবং হিজরতের পরে মোট চারটি ওমরাহ করেন। (১) ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার ওমরাহ (عُمْرَةُ الْحُدَيْبِيَةِ), যা পূর্ণ না হওয়ায় তিনি সন্ধি করে ফিরে যান (২) ৭ম হিজরীতে গত বছরের সন্ধি মতে ওমরাহ (عُمْرَةُ الْقَضَاءِ) আদায় (৩) ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় ও হোনায়েন যুদ্ধের পর গণীমত বণ্টন শেষে জি‘ইর্রা-নাহ হতে ওমরাহ (عُمْرَةِ الْجِعِرَّانَةِ) আদায় এবং (৪) সবশেষে ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের সাথে একত্রিতভাবে ওমরাহ আদায়। সবগুলিই তিনি করেছিলেন যুলক্বা‘দাহ মাসে’।[বুখারী হা/৪১৪৮; মুসলিম হা/১২৫৩] উক্ত হিসাবে দেখা যায় যে, তিনি পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবে কেবল দু’টি ওমরাহ করেছেন। একটি ৭ম হিজরীতে ওমরাতুল ক্বাযা এবং অন্যটি ৮ম হিজরীতে ওমরাতুল জি‘ইর্রানাহ। সম্ভবতঃ একারণেই সাহাবী বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর হজ্জের পূর্বে দু’টি ওমরাহ করেছেন যুলক্বা‘দাহ মাসে’।[বুখারী হা/১৭৮১; মিশকাত হা/২৫১৯]




[1]. ফাৎহুল বারী হা/৪৯৯০-এর পূর্বে ‘নবী(সাঃ)-এর লেখক’ অনুচ্ছেদ, ৯/২২ পৃঃ।
[2]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৫/৩৩৯-৩৫৫; মুছত্বফা আ‘যামী, কুত্তাবুন নবী (বৈরূত : ১৩৯৮/১৯৭৮ খৃঃ)।
[3]. মাহমূদ শাকের, আত-তারীখুল ইসলামী (বৈরূত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, তাবি) ২/৩৫৫ পৃঃ।
[4]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৫/৩৩৯-৩৫৫, ‘অহি লেখকগণ’ অনুচ্ছেদ।
[5]. সহীহ ইবনু হিববান হা/৭৪৪; আহমাদ হা/১২২৩৬, সনদ সহীহ। মিশকাত হা/৫৮৯৮ ‘মু‘জিযা সমূহ’ অনুচ্ছেদ। মিশকাতে বর্ণিত হাদীছে তার মুরতাদ হওয়ার খবর শুনে রাসূল (সাঃ) ‘মাটি তাকে কবুল করবে না’ (إن الأرض لا تقبله) বলেন। অতঃপর শেষে ‘মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ’ লেখা হয়েছে। কিন্তু বুখারী ও মুসলিমে কোথাও উক্ত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বরং তার মৃত্যুর পরে তিনি বলেছিলেনإِنَّ الأَرْضَ لَنْ تَقْبَلَهُ (সহীহ ইবনু হিববান হা/৭৪৪) অথবা إِنَّ الأَرْضَ لَمْ تَقْبَلَهُ (আহমাদ হা/১২২৩৬)।
[6]. ইমাম নববী (৬৩১-৬৭৬ হি.), তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, তাহকীক : মুছত্বফা আব্দুল ক্বাদের ‘আত্বা ১/৩৮-৩৯ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ১/১১১-১৩।
[7]. নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, তাহকীক : মুছত্বফা আব্দুল ক্বাদের ‘আত্বা ১/৩৯ পৃঃ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...