সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

মন্তব্য

 

মন্তব্য

উপরে বর্ণিত যুদ্ধ ও অভিযান সমূহের হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, মাদানী জীবনের ১০ বছরের মধ্যে ৭৮১ দিনের অধিক অর্থাৎ দু’বছরের বেশী সময় রাসূল (সাঃ) যুদ্ধের ময়দানে অতিবাহিত করেছেন। এই অবস্থার মধ্যেই ইসলামের বহু বিধি-বিধান জারী হয়েছে। হিজরতের পর রবীউল আউয়াল থেকে শা‘বান পর্যন্ত মাস ছ’য়েক কিছুটা স্বস্তিতে থাকার পর রামাযান থেকে যুদ্ধাভিযান সমূহ শুরু হয়। যা মৃত্যুর দু’দিন আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে বুঝা যায় যে, ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পথ সর্বদা বাধা সংকুল ছিল এবং কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। সত্য ও মিথ্যার এ দ্বন্দ্বে সর্বদা আল্লাহর গায়েবী মদদে সত্য জয়লাভ করেছে। বস্ত্তগত শক্তি অপর্যাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা ঈমানী শক্তির জোরেই মুসলমান আল্লাহর সাহায্য লাভ করেছে। আর আল্লাহর বিধান অমান্য করে কখনোই তাঁর সাহায্য লাভ করা যায় না। চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী সকলের জন্য এর মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।


যুদ্ধ ও অভিযান সমূহ পর্যালোচনা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
(১ম হিজরীর রামাযান হতে ১১ হিজরীর রবীউল আউয়াল পর্যন্ত) ৯ বছর ৪ মাস
উপরের আলোচনায় মোট ২৯টি গাযওয়া ও ৬১টি সারিইয়া সাল ও তারিখ সহ ক্রমানুযায়ী আমরা বর্ণনা করলাম। মোট ৯০টি যুদ্ধের মধ্যে ইবনু হিশাম ২৭টি গাযওয়া ও ৩৮টি সারিইয়াহ সহ মোট ৬৫টি যুদ্ধের কথা বলেছেন (ইবনু হিশাম ২/৬০৮-০৯)। মানছূরপুরী ৮২টি অভিযানের তালিকা দিয়েছেন। আমরা তাঁর ও মুবারকপুরীর তালিকা মিলিয়ে মোট ৮৬টি পেয়েছি। এতদ্ব্যতীত হাদীছে ও ইতিহাসে আরও চারটি পেয়েছি। যা নিয়ে মোট ৯০টি হয়েছে। সঠিক সংখ্যা আল্লাহ ভাল জানেন।


উভয় পক্ষে শহীদ ও নিহতদের সংখ্যা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
মাদানী জীবনে সংঘটিত যুদ্ধ সমূহে উভয় পক্ষে নিহত ও শহীদগণের সঠিক তালিকা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। মানছূরপুরী সারিইয়া ইবনু আবিল ‘আওজা-তে (ক্রমিক ৬৫) মুসলিম পক্ষে ৪৯ জন শহীদ বলেছেন। কিন্তু মুবারকপুরী উক্ত বিষয়ে কিছু বলেননি। অনুরূপভাবে গাযওয়া বনু কুরাইজাতে ইহূদীপক্ষে নিহতের সংখ্যা মানছূরপুরী ৪০০ বলেছেন। কিন্তু মুবারকপুরী ৬০০ থেকে ৭০০-এর মধ্যে বলেছেন। মানছূরপুরী ৪০০ ধরে হিসাব করেছেন। কিন্তু আমরা ৬০০ ধরে হিসাব করেছি। ফলে কাফের পক্ষে আমাদের হিসাব তাঁর চাইতে বেশী হয়েছে। এরপরেও ৬টি সারিইয়ায় প্রতিপক্ষের নিহতের সংখ্যা উল্লেখ না করে বলা হয়েছে ‘কিছু লোক’। এছাড়া ওহুদ যুদ্ধে ৩৭-এর অধিক এবং মুতার যুদ্ধে ‘বহু লোক’ নিহত হয়। অতএব কাফের পক্ষে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। উল্লেখ্য যে, সবচেয়ে বড় ৯টি যুদ্ধে অর্থাৎ বদর (ক্রমিক ৯), ওহুদ (২০), খন্দক (৩১), খায়বর (৫২), মুতা (৬৯), মক্কা বিজয় (৭২), হোনায়েন (৭৭), ত্বায়েফ (৮১) ও তাবূক (৮৭) যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে যথাক্রমে ১৪, ৭০, ৬, ১৮, ১২, ২, ৬, ১২, ০০=১৪০ জন সহ ৩৩৩ জন শহীদ এবং কাফের পক্ষে ৭০, ৩৭, ১০, ৯৩, ০০, ১২, ৭১, ০০, ০০=২৯৩ জন সহ ১০০৯ জন নিহত। সর্বমোট ১৩৪২ জন। মানছূরপুরীর হিসাব মতে যা ৩২২ ও ৮৪৯ মোট ১১৭১ জন।
আধুনিক জাহেলিয়াতের যুগে তথাকথিত গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যেভাবে দেশে দেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়, তার তুলনায় এ সংখ্যা তৃণসম বলা চলে।


অভিযান সমূহ কাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল এবং কেন? :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
অভিযানগুলির মধ্যে ১ হতে ৭২-এর মধ্যে মোট ২১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে কুরায়েশদের বিরুদ্ধে। ১১ হতে ৫৩-এর মধ্যে মোট ৮টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে ইহূদীদের বিরুদ্ধে। ৪৪ হতে ৯০-এর মধ্যে ৬টি অভিযান খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে এবং ১০ হতে ৮৩-এর মধ্যে মোট ৫১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে নাজদ ও অন্যান্য এলাকার বেদুঈন গোত্র ও সন্ত্রাসী ডাকাত দলের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ২৪, ২৫, ৩৬ ও ৬৫ নং সারিইয়া চারটি ছিল স্রেফ তাবলীগী কাফেলা এবং প্রতারণামূলকভাবে যাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়। বদরসহ প্রথম দিকের ৯টি অভিযান ছিল কুরায়েশদের বাণিজ্য কাফেলা দখল করে তাদের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ প্রস্তুততি ভন্ডুল করার জন্য।
শুরুতে কুরায়েশদের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের ভাষায় ছাবেঈ (صَابِئِي) বা ধর্মত্যাগী মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথী মুষ্টিমেয় মুহাজিরদের নির্মূল করা এবং সেখানে আক্রোশটা ছিল প্রধানতঃ ধর্মবিশ্বাসগত। কিন্তু পরে তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় মদীনা হয়ে সিরিয়ায় তাদের ব্যবসায়িক পথ কণ্টকমুক্ত করা। সেই সাথে ছিল তাদের বড়ত্বের অহংকার। কেননা মুহাম্মাদ তাদের বহিষ্কৃত সন্তান হয়ে তাদের চাইতে বড় হবে ও তাদের উপরে প্রাধান্য বিস্তার করবে, এটা ছিল তাদের নিকটে একেবারেই অসহ্য। তাদের এই ক্ষুব্ধ ও বিদ্বেষী মানসিকতাকেই কাজে লাগায় ধূর্ত ইহূদী নেতারা ও অন্যান্যরা। ফলে মক্কা বিজয়ের পূর্বেকার মুসলিম অভিযানগুলির অধিকাংশ ছিল প্রতিরোধ মূলক।
ইহূদীদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলি হয় অবিরতভাবে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে এবং তাদের চুক্তিভঙ্গের কারণে। খ্রিষ্টানদের কোন তৎপরতা মদীনায় ছিল না। সিরিয়ার নিকটবর্তী দূমাতুল জান্দালে প্রথম যে অভিযানটি (ক্রমিক ৪৪) তাদের দিকে প্রেরিত হয়, সেটি ছিল মূলতঃ তাবলীগী সফর এবং তাতে তাদের গোত্রনেতাসহ সকলে মুসলমান হয়ে যায়। অতঃপর মুতার যুদ্ধ (ক্রমিক ৬৯) এবং তাবূক অভিযান (ক্রমিক ৮৬) ছিল আগ্রাসী রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে ও তার প্রেরিত বিশাল বাহিনীর মদীনা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। অবশেষে রোমকরা ভয়ে পিছু হটে গেলে কোন যুদ্ধ হয়নি।
উল্লেখ্য যে, ৩য় হিজরীতে ওহুদ যুদ্ধে (ক্রমিক ২০) কপটতার জন্য রাসূল (সাঃ) মুনাফিকদের আর কোন যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেননি। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও অন্যান্যদের প্রকাশ্যে তওবা ও বারবার অনুরোধে তিনি তাদেরকে ৫ম হিজরীতে বনু মুছত্বালিক যুদ্ধে (ক্রমিক ৪৩) যাবার অনুমতি দেন। কিন্তু সেখানে তারা যথারীতি মুনাফেকী করে। ফলে তাদেরকে আর কোথাও অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাবূক অভিযানে (ক্রমিক ৮৬) তাদের ১২ জন এজেন্ট গোপনে ঢুকে পড়ে ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
পরিশেষে বলা চলে যে, ইসলামের দাওয়াত মক্কায় ছিল কেবল প্রচারমূলক। কিন্তু মদীনায় ছিল প্রচার ও প্রতিরোধ মূলক। যুগে যুগে ইসলামী দাওয়াতে উভয় নীতিই প্রযোজ্য হয়েছে এবং হবে। এখানে হারাম মাসে যুদ্ধ করার অনুমতিও পাওয়া গেছে কেবল বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে। যার সূত্রপাত ঘটে নাখলা যুদ্ধে (ক্রমিক ৮)। এ প্রসঙ্গে সূরা বাক্বারাহ ২১৭ আয়াতটি নাযিল হয়।


যুদ্ধ সমূহের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
(১) প্রথমেই উল্লেখ করা আবশ্যক যে, রাসূল আগমনের উদ্দেশ্য হল, মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব ছেড়ে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনা এবং অহীর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের সমানাধিকার নিশ্চিত করা (যারিয়াত ৫১/৫৬)। সেই সাথে এর ফলাফল হিসাবে দুনিয়াবাসীকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনানো এবং ব্যর্থতায় জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করা। বহুত্ববাদ ছেড়ে মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী করা (আ‘রাফ ৭/৬৫) এবং এর মাধ্যমে মানবতার সর্বোত্তম বিকাশ ঘটানো। মক্কার ইবরাহীম সন্তানেরা উক্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু পরে তারা তা থেকে বিচ্যুত হয়। যদিও তাদের দাবী বাকী ছিল। নবুঅত লাভের পর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং ইবরাহীমী পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। মক্কাতে রাসূল (সাঃ) সেই দাওয়াতই শুরু করেছিলেন। কিন্তু আত্মগর্বী কুরায়েশ নেতারা রাসূল (সাঃ)-এর এ দাওয়াতের মধ্যে নিজেদের দুনিয়াবী ক্ষতি বুঝতে পেরে প্রচন্ড বিরোধিতা করে এবং অবশেষে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। পরে তিনি মদীনায় হিজরত করলেন। কিন্তু সেখানেও তারা লুটতরাজ, হামলা ও নানাবিধ চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চালাতে লাগল। ফলে তাদের হামলা প্রতিরোধের জন্য এবং অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রাসূল (সাঃ)-কে যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয় (হজ্জ ২২/৩৯)। ফলে এটাই প্রমাণিত সত্য যে, হামলাকারীদের প্রতিরোধ ও তাদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার জন্যই প্রধানতঃ যুদ্ধগুলি সংঘটিত হয়েছিল।

(২) সমস্ত যুদ্ধই ছিল মূলতঃ কুরায়েশদের হিংসা ও হঠকারিতার ফল। বনু কুরায়েশ, বনু গাত্বফান, বনু সুলায়েম, বনু ছা‘লাবাহ, বনু ফাযারাহ, বনু কেলাব, বনু ‘আযল ও ক্বারাহ, বনু আসাদ, বনু যাকওয়ান, বনু লেহিয়ান, বনু সা‘দ, বনু তামীম, বনু হাওয়াযেন, বনু ছাক্বীফ প্রভৃতি যে গোত্রগুলির সাথে যুদ্ধ হয়েছিল, এরা সবাই ছিল কুরায়েশদের পিতামহ ইলিয়াস বিন মুযারের বংশধর (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২০৭-০৯)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও ছিলেন কুরায়েশ বংশের বনু হাশেম গোত্রের। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে এদের যত লড়াই হয়েছে, সবই ছিল মূলতঃ গোত্রীয় হিংসার কারণে। এইসব গোত্রের নেতারা রাসূল (সাঃ)-এর নেতৃত্ব ও প্রাধান্যকে মেনে নিতে পারেনি। বদরের যুদ্ধে বনু হাশেম গোত্র চাপের মুখে অন্যান্যদের সাথে থাকলেও তারা রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। কিন্তু আবু জাহল সহ বাকীরা সবাই ছিল অন্যান্য গোত্রের।

(৩) রাসূল (সাঃ)-এর জীবনকালে আরব উপদ্বীপের অন্য কোন গোত্রের সাথে তাঁর কোন যুদ্ধ বা সংঘাত হয়নি। তিনি সারা আরবে লড়াই ছড়িয়ে দেননি।

(৪) রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে ইহূদী ও মুনাফিকদের শত্রুতার প্রধান কারণ ছিল তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব হারানো। বাকীগুলি ছিল অজুহাত মাত্র। এজন্য তারা ছিল কুরায়েশদের সঙ্গে একাত্ম অথবা গোপনে চুক্তিবদ্ধ।

(৫) নবুঅতের পুরা সময়কালে একজন লোকও এমন পাওয়া যাবে না, যে কেবলমাত্র ধর্মীয় কারণে মুসলমানদের হাতে নিগৃহীত হয়েছে। যতক্ষণ না সে মুসলমানদের উপরে চড়াও হয়েছে কিংবা ষড়যন্ত্র করেছে। চাই সে মূর্তিপূজারী হৌক বা ইহূদী-নাছারা হৌক বা অগ্নিপূজারী হৌক।

(৬) মুশরিকদের হামলা ঠেকাতে গিয়ে দারিদ্র্য জর্জরিত ও ক্ষুৎ পিপাসায় কাতর অথচ ঈমানের বলে বলীয়ান মুসলিম বাহিনী ক্রমে এমন শক্তিশালী এক অপরাজেয় বাহিনীতে পরিণত হয় যে, রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় তারা কোন যুদ্ধেই পরাজিত হননি। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেও খেলাফতে রাশেদাহর যুগে এই বিজয়াভিযান অব্যাহত থাকে। যার সামনে তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমক ও পারসিক বাহিনী মুসলিম বাহিনীর হাতে নীস্ত ও নাবূদ হয়ে যায়।

(৭) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুদ্ধকে পবিত্র জিহাদে পরিণত করেন। কেননা জিহাদ হল অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সে যুগের যুদ্ধনীতিতে সকল প্রকার স্বেচ্ছাচার ও পাপাচার সিদ্ধ ছিল। কিন্তু ইসলামী জিহাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসৃত হয়। যা মানবতাকে সর্বদা সমুন্নত রাখে। ফলে তা প্রতিপক্ষের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। যে কারণে সারা আরবে ও আরবের বাইরে দ্রুত ইসলাম বিস্তার লাভ করে।

(৮) যুদ্ধবন্দীর উপরে বিজয়ী পক্ষের অধিকার সর্বযুগে স্বীকৃত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উদার নীতি এক্ষেত্রে নবযুগের সূচনা করে। প্রতিপক্ষ বনু হাওয়াযেন গোত্রের ১৪ জন নেতা ইসলাম কবুল করে এলে তাদের সম্মানে ও অনুরোধে হোনায়েন যুদ্ধের ছয় হাযার যুদ্ধবন্দীর সবাইকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিনা শর্তে মুক্তি দেন। এমনকি বিদায়ের সময়ে তাদের প্রত্যেককে একটি করে মূল্যবান ক্বিবতী চাদর উপহার দেন।

(৯) যুদ্ধরত কাফের অথবা বিচারে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত কাউকে হত্যা করার বিধান ইসলামে নেই। সেকারণ মাদানী রাষ্ট্রের অধীনে চুক্তিবদ্ধ অসংখ্য অমুসলিম পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে শান্তির সাথে বসবাস করত।

(১০) রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমতি বা আদেশ ব্যতীত কাউকে হত্যা করা নিষিদ্ধ ছিল। সেকারণ মক্কা বিজয়ের পূর্বরাতে মক্কার নেতা আবু সুফিয়ান হযরত উমরের হাতে ধরা পড়া সত্ত্বেও তাঁর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি উমর (রাঃ)-এর অটুট আনুগত্য প্রদর্শনের কারণে। অতএব রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বাইরে এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে কেউ কাউকে হত্যা বা যখম করতে পারে না। এতে বুঝা যায় যে, জিহাদ ফরয হলেও সশস্ত্র জিহাদ পরিচালনার দায়িত্ব এককভাবে মুসলিম সরকারের হাতে ন্যস্ত, পৃথকভাবে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের হাতে নয়। রাসূল (সাঃ)-এর পরে খেলাফতে রাশেদাহর সময়েও একই নীতি অনুসৃত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...