সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

প্রতিনিধি দল সমূহ

 

প্রতিনিধি দল সমূহ

প্রতিনিধি দল সমূহের আগমন :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে হোনায়েন যুদ্ধের পর থেকে ৯ম ও ১০ম হিজরী সনকে আমরা ‘প্রতিনিধি দলসমূহের আগমন বছর’(عَامُ الْوُفُود) হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি। মূলতঃ ৮ম হিজরীর রামাযান মাসে মক্কা বিজয়ের পর চারিদিকে ইসলাম কবুলের ঢেউ ওঠে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভের জন্য সমগ্র আরব জাহান যেন মক্কা বিজয়ের অপেক্ষায় ছিল। কেননা তারা বলত,اتْرُكُوهُ وَقَوْمَهُ، فَإِنَّهُ إِنْ ظَهَرَ عَلَيْهِمْ فَهُوَ نَبِىٌّ صَادِقٌ ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর কওমকে ছেড়ে দাও। কেননা যদি তিনি তাদের (অর্থাৎ কুরায়েশদের) উপরে জয়লাভ করেন, তাহলে তিনি সত্য নবী’।[বুখারী হা/৪৩০২; মিশকাত হা/১১২৬; আর-রাহীক্ব ৪৩৫ পৃঃ] অতঃপর যখন তিনি মক্কা জয় করলেন এবং কুরায়েশ নেতারা ইসলাম কবুল করলেন, এমনকি হোনায়েন যুদ্ধে রাসূল (সাঃ)-এর পক্ষ হয়ে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করলেন, তখন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন গোত্রের পক্ষ হতে দলে দলে প্রতিনিধি দল মদীনায় আসতে শুরু করল এবং ইসলাম কবুল করে ধন্য হল। ফলে দেখা গেল যে, মক্কা বিজয়ের মাত্র নয় মাসের মাথায় ৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূক অভিযানের সময় ৩০,০০০ ফৌজ জমা হয়ে গেল। তার এক বছর পর ১০ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ চবিবশ হাযার বা ত্রিশ হাযার মুসলমান আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সাথী হলেন।[মির‘আত, শরহ মিশকাত ‘মানাসিক’ অধ্যায়, হা/২৫৬৯] দু’দিন আগেও যারা লাত, মানাত, ‘উয্যা, হোবলের নামে জয়ধ্বনি করত ও তাদের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন নযর-নেয়ায নিয়ে তাদের অসীলায় পরকালে মুক্তি লাভের জন্য সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ত, আজ তাদের লাববায়েক আল্লাহুম্মা লাববায়েক, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে গগন-পবন মুখরিত হয়ে উঠলো।


প্রতিনিধি দল সমূহ :
━━━━━━━━━━━━
ইবনু সা‘দ, দিমইয়াত্বী, ইবনু সাইয়িদিন নাস, মুগলাত্বাঈ, যয়নুদ্দীন ইরাকী প্রমুখ জীবনীকারগণ ৬০-এর অধিক প্রতিনিধি দলের কথা বর্ণনা করেছেন। যুরক্বানী বলেন, উক্ত সংখ্যা ৭০ পর্যন্ত পৌঁছবে না, যা প্রসিদ্ধ আছে’। তিনি ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে জি‘ইর্রানাতে হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টন শেষে আগত বনু হাওয়াযেন গোত্রের প্রতিনিধি দলকে তালিকার প্রথমে এনেছেন। অতঃপর মোট ৩৫টি প্রতিনিধি দলের বর্ণনা দিয়েছেন।[যুরক্বানী, শারহুল মাওয়াহেব ৫/১১৪-২৩৪] আমরা সেখান থেকে ৩৪টি, যাদুল মা‘আদ থেকে ২টি ‘বনু তামীম’ ও কা‘ব বিন যুহায়ের’ এবং ত্বাবাক্বাত ইবনু সা‘দ থেকে ১টি ‘ইয়ামনের শাসকদের দূত’ সহ মোট ৩৭টি প্রতিনিধি দলের বর্ণনা দিলাম। যার মধ্যে ইবনুল ক্বাইয়িম বর্ণিত ৩৫টি, মানছূরপুরী বর্ণিত ২৬টি এবং মুবারকপুরী বর্ণিত ১৬টি দলের উল্লেখ রয়েছে। দলগুলি হল যথাক্রমে (১) বনু হাওয়াযেন (২) ছাক্বীফ (৩) বনু ‘আমের বিন ছা‘ছা‘আহ (৪) আব্দুল ক্বায়েস (৫) বনু হানীফা (৬) ত্বাঈ (৭) কিন্দা (৮) আশ‘আরী (৯) বনু তামীম (১০) বনুল হারেছ (১১) হামদান (১২) মুযায়নাহ (১৩) দাউস (১৪) নাজরান (১৫) ফারওয়া বিন আমরের দূত (১৬) বনু সা‘দ বিন বকর (১৭) তারেক বিন আব্দুল্লাহ প্রতিনিধি দল (১৮) তুজীব (১৯) বনু সা‘দ হুযায়েম (২০) বনু ফাযারাহ (২১) বনু আসাদ (২২) বাহরা (২৩) উযরাহ (২৪) বালী (২৫) বনু মুর্রাহ (২৬) খাওলান (২৭) মুহারিব (২৮) ছুদা (২৯) গাসসান (৩০) সালামান (৩১) বনু ‘আব্স (৩২) গামেদ (৩৩) আযদ (৩৪) বনুল মুনতাফিক্ব (৩৫) কা‘ব বিন যুহায়ের (৩৬) ইয়ামনের শাসকদের দূত এবং (৩৭) নাখঈ।
জীবনীকারগণ যতগুলি প্রতিনিধি দলের বিবরণ দিয়েছেন তার অনেকগুলি মুহাদ্দিছগণের নিকটে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। তবে প্রায় সবগুলি মর্মগতভাবে প্রমাণিত। অনেকগুলি বর্ণনা সহীহ হাদীছ সমূহে এসেছে। যেমন বনু হাওয়াযেন, বনু তামীম, আব্দুল ক্বায়েস, বনু হানীফাহ, নাজরান, ইয়ামনবাসী আশ‘আরীগণ, দাউস, তাঈ, কিন্দা, মুযায়নাহ এবং বনু সা‘দ বিন বকর প্রতিনিধি দল সমূহ। আমরা প্রত্যেকটি দল সম্পর্কে আলোচনা করব। কেননা প্রত্যেকটিতেই রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়, যা অতীব যরূরী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...