মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

বিদায় হজ্জ পর্ব-২

 

বিদায় হজ্জ পর্ব-২

যোহর ও আছরের সালাত জমা ও ক্বছরের সাথে আদায় :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
খুৎবা শেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বেলালকে আযান দিতে বলেন। অতঃপর প্রথম এক্বামতে যোহরের সালাত এবং দ্বিতীয় এক্বামতে আছরের সালাত আদায় করেন। তিনি উভয় সালাত দু’রাক‘আত করে জমা ও ক্বছর হিসাবে পড়েন।[1] এদিন আছরের সালাত এগিয়ে যোহরের সময় মিলিয়ে পড়া হয় (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। যাকে ‘জমা তাক্বদীম’ বলা হয়। উভয় সালাতের মধ্যে কোন সুন্নাত-নফল পড়েননি।[2]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, নিঃসন্দেহে এদিন মক্কাবাসীগণ রাসূল (সাঃ)-এর সাথে যোহর ও আছর জমা ও ক্বছর সহ আদায় করেন। তিনি তাদেরকে সালাত পূর্ণ করতে বলেননি কিংবা জমা পরিত্যাগ করতে বলেননি’ (যাদুল মা‘আদ ২/২১৬)। এক্ষণে যিনি বলেন যে, এদিন রাসূল (সাঃ) তাদের বলেছিলেন, يَا أَهْلَ الْبَلَدِ صَلُّوا أَرْبَعًا فَإِنَّا قَوْمٌ سَفْرٌ ‘হে শহরবাসীগণ! তোমরা চার রাক‘আত সালাত পূর্ণ কর। কেননা আমরা মুসাফির’। কথাটি মারাত্মক ভুল। কেননা এটি তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। কারণ তারা সেখানে মুক্বীম ছিলেন’ (আবুদাঊদ হা/১২২৯; আহমাদ হা/১৯৮৯১)। অতএব এটিই বিদ্বানগণের বিশুদ্ধতম সিদ্ধান্ত যে, মক্কাবাসীগণ আরাফাতের ময়দানে জমা ও ক্বছরের সাথে সালাত আদায় করবেন। যেমন তারা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে করেছিলেন। এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, সফরের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব ও সময়কাল শর্ত নয়। কেবল সফরটাই শর্ত (যাদুল মা‘আদ ২/২১৬-১৭)। আর কুরআনেরও বক্তব্য সেটাই (নিসা ৪/১০১)।
সালাত শেষে রাসূল (সাঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করে ওয়াদীয়ে নামেরাতে স্বীয় তাঁবুতে গমন করেন ও সূর্য অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সবাইকে বলেন,عَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ ‘পুরা আরাফাতের ময়দান হল অবস্থানস্থল’ (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৯)। কেননা এটি ইবরাহীমের উত্তরাধিকার সমূহের অন্যতম’ (তিরমিযী হা/৮৮৩)। এ সময় নাজদবাসীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,الْحَجُّ عَرَفَةُ ‘হজ্জ হল আরাফাহ’ (তিরমিযী হা/৮৮৯)। এখানে তিনি একাকী বুক পর্যন্ত হাত উঠিয়ে মিসকীনের ন্যায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও কান্নাকাটিতে রত থাকেন। তিনি বলেন,خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘শ্রেষ্ঠ দো‘আ হল আরাফার দো‘আ’।[তিরমিযী হা/৩৫৮৫; মিশকাত হা/২৫৯৮]


ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার সনদ নাযিল :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
এদিন অর্থাৎ জুম‘আর দিন সন্ধ্যায় আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিল হয় এক অনন্য দলীল, ইসলামের পরিপূর্ণতার সনদ, যা ইতিপূর্বে কোন এলাহী ধর্মের জন্য নাযিল হয়নি। এ সময় ‘অহি’ নাযিলের গুরুভার বহনে অপারগ হয়ে রাসূল (সাঃ)-এর বাহন ‘আযবা’ (الْعَضْبَاءُ) আস্তে করে বসে পড়ে। অতঃপর ‘অহি’ নাযিল হল-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْناً-
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’।[তাফসীর ত্বাবারী হা/১১১১২] একারণে বিদায় হজ্জকে ‘হাজ্জাতুল ইসলাম’(حَجَّةُ الْإِسْلاَمِ) বা ‘ইসলামের হজ্জ’ বলা হয় (আল-বিদায়াহ ৫/১০৯)।
উক্ত আয়াত নাযিলের বিষয়ে পরবর্তীতে ইহূদীরা উমর ফারূক (রাঃ)-কে বলেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন! যদি উক্ত আয়াত আমাদের উপর নাযিল হত, তাহলে আমরা ঐ দিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। তখন উমর (রাঃ) বললেন,
وَاللهِ إِنِّى لأَعْلَمُ الْيَوْمَ الَّذِى نَزَلَتْ فِيهِ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالسَّاعَةَ الَّتِى نَزَلَتْ فِيهَِا، نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَشِيَّةَ عَرَفَةَ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ ‘আল্লাহর কসম! আমি জানি যেদিন এটি রাসূল (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল এবং কখন এটি নাযিল হয়েছিল। এটি রাসূল (সাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল জুম‘আ ও আরাফার দিন সন্ধ্যায়’ (আহমাদ হা/১৮৮, সনদ সহীহ)। মুসলিমের বর্ণনায় জুম‘আর রাতের(لَيْلَةَ جَمْعٍ) কথা বলা হয়েছে যার অর্থ ইমাম নববী বলেন, জুম‘আর দিন (শরহ মুসলিম হা/৩০১৭)। বুখারীর বর্ণনায় স্পষ্টভাবে জুম‘আর দিনের(فِى يَوْمِ جُمُعَةٍ) কথা বলা হয়েছে (বুখারী হা/৭২৬৮)।[3] অর্থাৎ জুম‘আর দিন মাগরিবের পূর্বে। কেননা মাওয়ার্দী বলেন, عَشِيَّةٌ অর্থ অপরাহ্ন। যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য ঢলে পড়ে। مَسَاءٌ অর্থ সূর্যাস্তের পর অন্ধকার প্রকাশিত হওয়া’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা রূম ১৮ আয়াত)।
নবী বলেন, এর দ্বারা উমর (রাঃ) বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, আমরা ঐ দিনটিকে ঈদ হিসাবেই গ্রহণ করেছি। কেননা ঐ দিন ছিল জুম‘আ এবং আরাফার দিন। আর দু’টিই হল মুসলমানদের নিকট ঈদের দিন’ (শরহ মুসলিম হা/৩০১৭)। একই প্রশ্ন ইবনু আববাস (রাঃ)-কে করা হলে তিনি বলেন, فَإِنَّهَا نَزَلَتْ فِى يَوْمِ عِيدٍ فِى يَوْمِ جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ ‘কেননা আয়াতটি নাযিল হয়েছিল ‘জুম‘আ ও আরাফাহর দুই ঈদের দিন’ (তিরমিযী হা/৩০৪৪, সনদ সহীহ)।
ইবনু জুরাইজ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, এই আয়াত নাযিলের পর আল্লাহর নবী (সাঃ) আর মাত্র ৮১ দিন ধরাধামে বেঁচে ছিলেন।[মুসলিম হা/১৬৭৯ (২৯); বুখারী হা/১৭৩৯, ৪৪০৫]
এই সময় একজন মুহরিম ব্যক্তি সওয়ারী থেকে পড়ে মারা গেলে রাসূল (সাঃ) তাকে কোনরূপ সুগন্ধি ছাড়াই পানি ও কুলপাতা দিয়ে গোসল দিয়ে ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিতে বলেন। অতঃপর বলেন যেন তার মাথা ও চেহারা ঢাকা না হয় এবং খবর দেন যে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন’ (বুখারী হা/১৮৫১; মুসলিম হা/১২০৬ (৯৮))।


মুযদালেফায় রাত্রি যাপন :
━━━━━━━━━━━━━━━
অস্তায়মান সূর্যের হলুদ আভা মিলিয়ে যাবার পর উসামা বিন যায়েদকে ক্বাছওয়ার পিছনে বসিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুযদালেফা অভিমুখে রওয়ানা হন (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। অতঃপর সেখানে পৌঁছে এক আযান ও দুই এক্বামতের মাধ্যমে মাগরিব ও এশা পড়েন। এশার সালাতে ক্বছর করেন। এদিন মাগরিবের সালাত পিছিয়ে এশার সালাতের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া হয়। একে ‘জমা তাখীর’ বলা হয়। উভয়ের মাঝে কোন সুন্নাত-নফল পড়েননি (বুখারী হা/১০৯২, ১৬৭৩; মিশকাত হা/২৬০৭)। অতঃপর ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকেন। কোনরূপ রাত্রি জাগরণ করেননি। অতঃপর সকাল স্পষ্ট হলে তিনি আযান ও এক্বামতের মাধ্যমে ফজরের সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, مُزْدَلِفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ ‘মুযদালিফার পুরাটাই অবস্থানস্থল’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৪০০৬)। অতঃপর ক্বাছওয়ায় সওয়ার হয়ে মাশ‘আরুল হারামে আসেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ ও তাসবীহ-তাহলীলে লিপ্ত হন। পূর্বাকাশ ভালভাবে ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭)।
এদিন তিনি দুর্বলদের ফজরের আগেই চাঁদ ডুবে যাবার পর মিনায় রওয়ানা হওয়ার অনুমতি দেন (বুখারী হা/১৮৫৬; মুসলিম হা/১২৯৩) এবং নির্দেশ দেন যেন সূর্যোদয়ের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ না করে (তিরমিযী হা/৮৯৩; আহমাদ হা/২৮৪২)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে তিনটি মতামত রয়েছে। (১) সক্ষম বা দুর্বল যে কেউ মধ্যরাত্রির পরে যেতে পারবে (২) ফজর উদিত হওয়ার আগে রওয়ানা হওয়া যাবে না এবং (৩) দুর্বলরাই কেবল ফজর উদিত হওয়ার পূর্বে যেতে পারবে, সক্ষমরা নয়। এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত সেটাই, যা হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, মধ্যরাত্রির পরে নয়, বরং চাঁদ ডুবে যাবার পর রওয়ানা হতে পারবে। মধ্যরাত্রির সীমা নির্ধারণ করার কোন দলীল নেই’ (যাদুল মা‘আদ ২/২৩৩)।


মিনায় প্রত্যাবর্তন :
━━━━━━━━━━━
অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্বেই তিনি মুযদালেফা হতে মিনায় রওয়ানা হন। এ সময় ফযল বিন আববাসকে ক্বাছওয়া সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নেন (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। এ সময় তিনি তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকেন। অতঃপর তিনি ইবনু আববাসকে সাতটি কংকর কুড়িয়ে দিতে বলেন। অতঃপর সেগুলি হাতে নিয়ে ঝেড়ে ফেলে বললেন, এরূপ কংকরই তোমরা নিক্ষেপ করবে। إِيَّاكُمْ وَالْغُلُوَّ فِى الدِّينِ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمُ الْغُلُوُّ فِى الدِّينِ ‘ধর্মের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বের লোকেরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ধ্বংস হয়েছে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩০২৯; আহমাদ হা/৩২৪৮)। মিনায় আসার পথে ওয়াদীয়ে মুহাসসিরে(وَادِي مُحَسِّر) সামান্য দ্রুত চলেন। অতঃপর মধ্যবর্তী পথ ধরে জামরায়ে কুবরায় পৌঁছে যান, যেখানে একটি বৃক্ষ ছিল। অতঃপর সেখানে সওয়ারীতে বসে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করেন। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলেন। কংকরগুলি ছিল এমন ছোট যা দু’আঙ্গুলে চিমটি দিয়ে ধরা যায়(مِثْلُ حَصَى الْخَذْفِ)। এসময় তিনি তালবিয়াহ পাঠ বন্ধ রাখেন। বেলাল ও ওসামা দু’জনের একজন তাঁর উটনীর লাগাম ধরে রাখেন। অন্যজন কাপড় দিয়ে তাঁকে ছায়া করেন’। অতঃপর তারা কংকর নিক্ষেপ করেন (মুসলিম হা/১২৯৮ (৩১২); আহমাদ হা/২৭৩০০)। এতে প্রমাণিত হয় যে, মুহরিম ব্যক্তি গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর ছায়া করতে পারেন (যাদুল মা‘আদ ২/২৩৭)।


কুরবানী :
━━━━━
১০ই যিলহাজ্জ ঈদুল আযহার দিন। সকালে জামরায়ে কুবরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপের পর রাসূল (সাঃ) কুরবানী করেন। নিজে ৬৩টি ও আলী (রাঃ)-এর মাধ্যমে ৩৭টি মোট ১০০টি উট নহর করেন। আনাস (রাঃ) বলেন ৭টি ও জাবের (রাঃ) বলেন ৬৩টি। এর ব্যাখ্যা হল আনাস ৭টি দেখেছেন ও বাকীগুলিকে তিনি নহরকারীকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর জাবের সবগুলি দেখেছেন। অতঃপর প্রত্যেকে যা দেখেছেন তা বর্ণনা করেছেন (যাদুল মা‘আদ ২/২৪০)। আলীকে তিনি নিজ কুরবানীতে শরীক করে নেন। অতঃপর রান্না গোশত ও সুরুয়া খান (ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৪)। এদিন তিনি নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেন (বুখারী হা/৫৫৫৯; মুসলিম হা/১২১১ (১১৯))। অন্যদেরকে সাতজনে একটি উটে বা গরুতে শরীক হতে বলেন (মুসলিম হা/১৩১৮ (৩৫১)। তিনি আলীকে এসবের গোশত, চামড়া ও নাড়ি-ভুঁড়ি মিসকীনদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেন। তবে কসাইদের মজুরী নিজের থেকে দেন (যাদুল মা‘আদ ২/২৪০)। কারণ তাঁরা ছিলেন তামাত্তু হাজী। ফলে ৯জন স্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি গরুই যথেষ্ট ছিল (যাদুল মা‘আদ ২/২৪৩)।


কুরবানীর দিনের ভাষণ :
━━━━━━━━━━━━━━
১. জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এদিন(يَوْمُ النَّحْرِ) সূর্য ঢলার পর ‘আযবা (الْعَضْبَاء) উটনীর পিঠে বসে কংকর নিক্ষেপ শেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
خُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى أَنْ لاَ أَحُجَّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ-
হে জনগণ! তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ ও কুরবানীর নিয়ম-কানূন শিখে নাও। হয়তবা এ বছরের পর আমার পক্ষে আর হজ্জ করা সম্ভব হবে না’ (মুসলিম হা/১২৯৭ (৩১০); মিশকাত হা/২৬১৮)। এভাবে বিদায় নেওয়ার কারণে লোকেরা একে হাজ্জাতুল বিদা‘(حَجَّةُ الْوَدَاع) বা বিদায় হজ্জ বলে (যাদুল মা‘আদ ২/২৩৮)।
২. আবু বাকরাহ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি আরও বলেন,
إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَالسَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبٌ شَهْرُ مُضَرَ الَّذِىْ بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ- أَىُّ شَهْرٍ هَذَا؟ قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ. قَالَ أَلَيْسَ هَذَا ذَا الْحِجَّةِ؟ قُلْنَا بَلَى. قَالَ فَأَىُّ بَلَدٍ هَذَا؟ قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ. قَالَ أَلَيْسَتِ الْبَلْدَةَ؟ قُلْنَا بَلَى. فَأَىُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قُلْنَا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ. قَالَ أَلَيْسَ يَوْمَ النَّحْرِ؟ قُلْنَا بَلَى. قَالَ فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِى بَلَدِكُمْ هَذَا فِى شَهْرِكُمْ هَذَا- وَسَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ فَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوْا بَعْدِى ضُلاَّلاً، يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ- أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ؟ قَالُوْا نَعَمْ. قَالَ اللَّهُمَّ اشْهَدْ، فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ، فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ-
‘কালচক্র আপন নিয়মে আবর্তিত হয়, যেদিন থেকে আসমান ও যমীন সৃষ্টি হয়েছে। বছর বারো মাসে হয়। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। তিনটি পরপর, যুলক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম এবং রজবে মুযার’[4] যা হল জুমাদা ও শা‘বানের মধ্যবর্তী (বুখারী হা/৪৪০৬; মুসলিম হা/১৬৭৯)। অতঃপর তিনি বলেন, (৩) এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেন, এটা কি যুলহিজ্জাহ নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেন, এটা কি মক্কা নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আজ কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম হয়ত তিনি এর পরিবর্তে অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেন, আজ কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, জেনে রেখ, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইয্যত তোমাদের উপরে ঐরূপ হারাম যেরূপ আজকের এই দিন, এই শহর, এই মাস তোমাদের জন্য হারাম (অর্থাৎ পরস্পরের জন্য উক্ত তিনটি বস্ত্ত সর্বদা হারাম)। (৪) ‘সত্বর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান! আমার পরে তোমরা পুনরায় ‘পথভ্রষ্ট’ (ضُلاَّلاً) হয়ে ফিরে যেয়ো না এবং একে অপরের গর্দান মেরো না’। (৫) ‘হে জনগণ! আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছি (দু’বার)? লোকেরা বলল, হ্যাঁ। রাসূল (সাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক! আর তোমাদের উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতগণকে কথাগুলি পৌঁছে দেয়। কেননা উপস্থিত শ্রোতাদের অনেকের চাইতে অনুপস্থিত যাদের নিকট এগুলি পৌঁছানো হবে, তাদের মধ্যে অধিক জ্ঞানী ব্যক্তি থাকতে পারেন’।[5]
একই রাবীর অন্য বর্ণনায় এসেছে,لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘সাবধান! আমার পরে তোমরা পুনরায় ‘কাফের’ হয়ে ফিরে যেয়ো না এবং একে অপরের গর্দান মেরো না’।[তাফসীর ত্বাবারী হা/১১০৮২] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এটি ছিল উম্মতের জন্য তাঁর অছিয়ত স্বরূপ (বুখারী হা/১৭৩৯)।
এই ‘কাফের’ অর্থ কর্মগত কাফের অর্থাৎ অবাধ্য। আক্বীদাগত কাফের নয়, যা মুসলমানকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের উপর ঈমান আনবে ও কিছু অংশে কুফরী করবে’?[বাক্বারাহ ২/৮৫; ফাৎহুল বারী হা/৪৮] রাসূল (সাঃ) বলেন,سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেক্বী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী’ (বুখারী হা/৪৮)। এসময় তাঁকে কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ও মাথা মুন্ডনে আগপিছ হয়ে গেলে করণীয় কি হবে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,افْعَلُوا وَلاَ حَرَجَ ‘করে যাও। কোন সমস্যা নেই’ (মুসলিম হা/১৩০৬)।
৩. আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) বলেন, এদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি,
أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَلاَ أُمَّةَ بَعْدَكُمْ، وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ، وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ طَيِّبَةً بِهَا أَنْفُسُكُمْ وَأَطِيعُوا وُلاَةَ أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ-
‘হে জনগণ! শুনে রাখ আমার পরে কোন নবী নেই এবং তোমাদের পরে কোন উম্মত নেই। অতএব (৭) তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর। রামাযান মাসের সিয়াম পালন কর। সন্তুষ্ট চিত্তে মালের যাকাত দাও। তোমাদের শাসকদের আনুগত্য কর। তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ কর’। অন্য বর্ণনায় এসেছে,اتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর। রামাযান মাসের সিয়াম পালন কর। তোমাদের মালের যাকাত দাও। তোমাদের আমীরের আনুগত্য কর। তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ কর’ (আহমাদ হা/২২২১৫; মিশকাত হা/৫৭১)।


মাথা মুন্ডন :
━━━━━━━
কুরবানী শেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নাপিত ডাকেন এবং নিজের মাথা মুন্ডন করেন (মুসলিম হা/১৩০৪)। তাঁর সাহাবীগণের অনেকে মুন্ডন করেন ও কেউ কেউ চুল ছাটেন (বুখারী হা/৪৪১১; মুসলিম হা/১৩০১)। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, অতঃপর মাথার ডান পাশের চুলগুলি নাপিত মা‘মার বিন আব্দুল্লাহকে দেন এবং বামপাশের চুলগুলি আবু ত্বালহা আনছারীকে দেন এবং বলেন, এগুলি লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দাও (মুসলিম হা/১৩০৫)। অতঃপর তিনি মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার ও চুল ছাটাইকারীদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন (মুসলিম হা/১৩০৩; মিশকাত হা/২৬৪৯)। পবিত্র কুরআনেও মাথা মুন্ডনের কথা আগে অতঃপর চুল ছাটাইয়ের কথা এসেছে (সূরা ফাৎহ ৪৮/২৭)। এর ফলে অধিকাংশ মাথা মুন্ডন করেন ও কিছু ব্যক্তি চুল ছাটাই করেন (যাদুল মা‘আদ ২/২৪৯)। নববী বলেন, কাটা চুল বণ্টনের মধ্যে রাসূল (সাঃ)-এর চুলের বরকত প্রমাণিত হয় এবং নেতা ও গুরুজনদের জন্য অধঃস্তনদের প্রতি হাদিয়া প্রদানের নির্দেশনা পাওয়া যায়।[6]
১০ই যিলহজ্জ কুরবানীর দিন সকালে সূর্য উপরে উঠলে[এতে বুঝা যায় যে, সম্ভবতঃ কুরবানীর পূর্বেই তিনি এ ভাষণ দেন](حِينَ ارْتَفَعَ الضُّحَى) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি সাদা-কালো মিশ্রিত খচ্চরে(عَلَى بَغْلَةٍ شَهْبَاءَ) সওয়ার হয়ে (কংকর নিক্ষেপের পর) জামরায়ে আক্বাবায় এক ভাষণ দেন। এমতাবস্থায় লোকদের কেউ দাঁড়িয়েছিল, কেউ বসেছিল। হযরত আলী (রাঃ) তাঁর ভাষণ লোকদের শুনাচ্ছিলেন। এ দিনের ভাষণে তিনি আগের দিন আরাফাতের ময়দানে দেওয়া ভাষণের কিছু কিছু অংশ পুনরুল্লেখ করেন (আবুদাঊদ হা/১৯৫৬; মিশকাত হা/২৬৭১)।


ত্বাওয়াফে এফাযাহ :
━━━━━━━━━━━━
১০ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী ও মাথা মুন্ডন শেষে রাসূল (সাঃ) মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। একে ‘ত্বাওয়াফে এফাযাহ’(طَوَافُ الْإِفَاضَةِ) বলা হয়। এটি হজ্জের অন্যতম রুকন। যা না করলে হজ্জ সম্পন্ন হয় না।.. অতঃপর তিনি যমযম কূপে আসেন। সেখানে বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের লোকেরা পূর্বের রীতি অনুযায়ী হাজীদের পানি পান করাচ্ছিলেন। সেখানে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুশী হয়ে বললেন,انْزِعُوْا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلاَ أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ ‘হে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা পানি উত্তোলন কর। যদি তোমাদের উপরে লোকদের বিজয়ী হবার ভয় না থাকত, তাহলে আমি নিজেই তোমাদের সাথে পানি উত্তোলন করতাম’। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) নিজে এই বরকতের কাজে অংশ নিলে অন্যেরাও ঐকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ফলে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিবের অধিকার ক্ষুণ্ণ হত। অতঃপর তারা রাসূল (সাঃ)-কে এক বালতি পানি উঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে তিনি মিনায় চলে আসেন।




[1]. বুখারী হা/১৬৬২ ইবনু উওমর (রাঃ) হতে ‘হজ্জ’ অধ্যায়-২৫ ‘আরাফা ময়দানে দুই সালাত জমা করা’ অনুচ্ছেদ-৮৯; মিশকাত হা/২৬১৭ ‘মানাসিক’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৫; ‘আওনুল মা‘বূদ শরহ আবুদাঊদ হা/১৯১৩; বুখারী হা/১১০৭, ইবনু আববাস (রাঃ) হতে; হা/১১০৯ ইবনু উমর (রাঃ) হতে ‘সালাতে ক্বছর করা’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫; মির‘আত শরহ মিশকাত হা/২৫৭৯-এর আলোচনা; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ (কুয়েত : ৩য় সংস্করণ ১৪০৩ হিঃ) পৃঃ ২৯-৩০।
[3]. প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (সাঃ)-এর মুখে এই আয়াত শ্রবণ করে উমর ফারূক (রাঃ) কেঁদে উঠলেন। অতঃপর লোকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, إِنَّهُ لَيْسَ بَعْدَ الْكَمَالِ إِلاَّ النُّقْصَانُ ‘পূর্ণতার পরে তো আর কিছুই থাকেনা ঘাটতি ব্যতীত’ (আল-বিদায়াহ ৫/২১৫; কুরতুবী হা/২৫৬৩; ত্বাবারী হা/১১০৮৭, সনদ যঈফ)। মুবারকপুরী এটি ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বুখারীর সূত্রে বর্ণিত বলেছেন, যা ঠিক নয় (আর-রাহীক্ব পৃঃ ৪৬০ টীকা-৫ সহ)। তিনি রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (১/২৬৫ পৃঃ) থেকে গৃহীত বলেছেন। কিন্তু সেখানে উমর (রাঃ)-এর উক্ত বক্তব্য নেই (ঐ, দিল্লী সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ ১/২৩৫ পৃঃ)।
[4]. মুযার গোত্রের দিকে সম্পর্কিত করে ‘রজবে মুযার’ বলা হয়েছে। কারণ তারা ছিল রজব মাসের নিষিদ্ধতার প্রতি সারা আরবের মধ্যে সর্বাধিক কঠোরতা আরোপকারী (মির‘আত হা/২৬৮৩-এর আলোচনা)।
[5]. বুখারী হা/১৭৪১, ৪৪০৬ আবু বাকরাহ হতে, ‘মিনার দিনসমূহের ভাষণ’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/১৬৭৯; মিশকাত হা/২৬৫৯। একইরূপ বর্ণনা ইবনু আববাস ও ইবনু উমর (রাঃ) থেকেও এসেছে (বুখারী হা/১৭৩৯, ১৭৪২)।
[6]. মুসলিম, শরহ নববী হা/১৩০৫; যাদুল মা‘আদ ২/২৪৯। কিন্তু এর দ্বারা রাসূল (সাঃ)-এর চুল বা পরিত্যক্ত বস্ত্তসমূহের ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা আছে মনে করা শিরক। কেননা এর মালিক একমাত্র আল্লাহ (ইউনুস ১০/১০৭)। আর সেটা মনে করলে সাহাবায়ে কেরাম সকলেই এতে শরীক হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। যেমন এযুগে এসব কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়। কাশ্মীরে ‘হযরত বাল’ (حضرت بال) নিয়ে চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি তার অন্যতম প্রমাণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...