একজন এতিম সৈনিকের জিবন কাহিনি।😥
ট্রেনিং সেন্টারে আমার রুমমেট ছিল ১১জন এর মধ্যে সৈকত ছিল সবার থেকে আলাদা,আমরা আড্ডা দিতাম রাতে গান বাজনা করতাম আর সৈকত একা একা বাহিরে গিয়ে পড়া লেখা করতো,সবার সাথে কম কথা বলতো এটা নিয়ে আমরা সবাই ওর সাথে হিংসা করতাম। ওর জিনিসপত্র ফেলে দিতাম বাহিরে এবং বলতাম যে সৈকত একটা মানসিক প্রতিবন্ধী ওর চাকরি হলো কিভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সামনে ঈদ ছুটিতে বাসায় যাবো সবাই এজন্য কত আনন্দ করে ক্যান্টিন থেকে সেনাবাহিনীর গেঞ্জি ঘড়ি এগুলো কিনতাম বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের গিফট করবো বলে। কিন্তু সৈকত ক্যান্টিনে যেতো না খুব কিপ্টা ছিল।
ঈদের ছুটিতে যাওয়া'র আগের দিন যখন স্টাফ আসলো রুমে বাসের সিট প্লান করার পর কার বাসা কোন জেলায় এটা ঠিক করে টিকিট দিচ্ছিলো।
তখন আমরা ঠিকানা দিয়ে টিকিট এবং লিভ কার্ড হাতে
পেলাম। এরপর যখন স্টাফ সৈকতের ঠিকানা জিজ্ঞেস করলো তখন ও চুপ করে রইলো কোন কিছু বলে না এটা দেখে স্টাফ রেগে গিয়ে ওরে ধমকের সুরে বললো কিরে রিক্রুটের বাচ্চা কথা কানে যায় না.. বাড়ির ঠিকানা বল তার পর ও বললো স্টাফজ্বি আমি বাসায় যাবো না... এটা শুনে তো আমরা সবাই অবাক! স্টাফ বললো কি হয়েছে কেন বাসায় যাবে না.? সৈকত বললো স্টাফজ্বি আমি এতিম, বাবা মা মারা যাওয়ার পর নানির কাছে বড় হয়েছি
তার পর স্টাফ বললো তাহলে নানীর কাছে যাও, সৈকত বলে নানী নেই ট্রেনিং সেন্টারে আসার ৭দিন আগে উনি মারা গিয়েছেন এখন আমার কেউ নেই..!
এটা শোনার পর সবাই চুপ হয়ে গেল, আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম তুই আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। বাকি ৯ জন একই কথা বললো যে তাদের বাড়িতে যেতে কেউ ছেড়ে দিতে রাজি না। সবাই ওরে নিয়ে টানাটানি করছে দেখে, স্টাফ খুব খুশি হলো এবং বললো দাড়া আমি লটারি করে দিচ্ছি যার নাম উঠবে ও তার বাসায় যাবে.. লটারিতে আমি জিতে গেলাম ওকে নিয়ে আমার বাসায় গেলাম এবং ২ ঈদেই আমার বাসায় যায়।
আমার মা ওকে নিজের ছেলের মতো যত্ন করে বরং আমার থেকে বেশিই আদর করে ওরে। এরপর আমরা যখন ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যাই তখন হঠাৎ করে ৩ দিন যাবত ওর কোন খোঁজ নেই।
সৈকত প্রতিদিন আমার মাকে কল দিতো কথা বলতো হঠাৎ করে ৩ দিন কল না দেওয়ার কারণে মা আমাকে সৈকতে'র ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। তখন আমি ওর ইউনিটে গিয়ে যোগাযোগ করি।
যোগাযোগ করার পর জানতে পারি সৈকত আর নেই। আইপিএফটি দিতে গিয়ে মারা গেছে। এই খবর শোনার পর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথার উপর।
তারপর এখন পর্যন্ত আমি আমার মাকে তার মৃত্যুর খবর জানাতে পারিনি।
শুধু মনে মনে বললাম আল্লাহ ছেলেটার জীবনে সুখ পাইলো না। আল্লাহ তুমি তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করো,আমিন🤲🤲
#Bangladesh #Army ⚔️🇧🇩⚔️ #Bangladesh_Army

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন