ওহুদ যুদ্ধ শুরু
৩য় হিজরীর ৭ই শাওয়াল শনিবার সকালে যুদ্ধ শুরু হয়। সে যুগের রীতি অনুযায়ী কুরায়েশ বাহিনীর পতাকাবাহী এবং তাদের সেরা অশ্বারোহী বীরদের অন্যতম তালহা বিন আবু তালহা আব্দুল্লাহ আল-আবদারী উটে সওয়ার হয়ে এসে প্রথমে দ্বৈরথ যুদ্ধে মুকাবিলার আহবান জানান। মুসলিম বাহিনীর বামবাহুর প্রধান যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ) তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এগিয়ে যান এবং সিংহের ন্যায় এক লাফে উটের পিঠে উঠে তাকে সেখান থেকে মাটিতে ফেলে যবেহ করে হত্যা করেন। এ অভাবনীয় দৃশ্য দেখে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীগণ খুশীতে তাকবীর ধ্বনি করেন।[1]
প্রধান পতাকাবাহীর পতনের পর তার পরিবারের আরও পাঁচ জন পরপর নিহত হয় এবং এভাবে দশ/বারো জন পতাকাবাহী মুসলিম বাহিনীর হাতে খতম হয়। যার মধ্যে একা কুযমান ৪ জনকে এবং আলী (রাঃ) ৮ জনকে হত্যা করেন। আউস গোত্রের বনু যাফর(بنو ظَفَر) বংশের কুযমান(قُزْمَان) ইবনুল হারেছ ছিল একজন মুনাফিক। সে এসেছিল নিজ বংশের গৌরব রক্ষার্থে, ইসলামের স্বার্থে নয়।
মাক্কী বাহিনীর পতাকাবাহীরা একে একে নিহত হওয়ার পর মুসলিম সেনাদল বীরদর্পে এগিয়ে যান ও মুশরিকদের সঙ্গে হাতাহাতি লড়াই শুরু হয়ে যায়। এই সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকলকে আহবান করে বলেন,مَنْ يَأْخُذُ مِنِّى هَذَا؟ ‘কে আছ আমার এই তরবারি গ্রহণ করবে’? তখন সকলে আমি আমি বলে একযোগে এগিয়ে এলেন তরবারি নেবার জন্য। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন,فَمَنْ يَأْخُذُهُ بِحَقِّهِ ‘কে এটির হক সহ গ্রহণ করবে’? তখন লোকেরা ভিড় করল। এ সময় আবু দুজানাহ সিমাক বিন খারাশাহ(أَبُو دُجَانَةَ سِمَاكُ بْنُ خَرَشَةَ) বলে উঠলেন,أَنَا آخُذُهُ بِحَقِّهِ ‘আমি একে তার হক সহ গ্রহণ করব’। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে তরবারিটি প্রদান করেন। অতঃপর তিনি মুশরিকদের মাথা বিদীর্ণ করতে লাগলেন’।[মুসলিম হা/২৪৭০; ইবনু হিশাম ২/৬৬]
এই যুদ্ধে হযরত হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবের বীরত্ব ছিল কিংবদন্তীতুল্য। প্রতিপক্ষের মধ্যভাগে প্রবেশ করে তিনি সিংহ বিক্রমে লড়াই করছিলেন। তাঁর অস্ত্রচালনার সামনে শত্রুপক্ষের কেউ টিকতে না পেরে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কিন্তু আল্লাহর এই সিংহকে কাপুরুষের মত গোপন হত্যার মাধ্যমে শহীদ করা হয়। তাকে হত্যাকারী ওয়াহ্শী বিন হারব ছিল মক্কার নেতা জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইমের হাবশী গোলাম। যার চাচা তু‘আইমা বিন ‘আদী বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। ওয়াহ্শী ছিল বর্শা নিক্ষেপে পারদর্শী, যা সাধারণতঃ লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না। মনিব তাকে বলেছিল, তুমি আমার চাচা হত্যার বিনিময়ে যদি মুহাম্মাদের চাচা হামযাকে হত্যা করতে পার, তাহলে তুমি মুক্ত হয়ে যাবে’। ওয়াহশী বলেন যে, আমি কেবল আমার নিজের মুক্তির স্বার্থেই যুদ্ধে আসি এবং সর্বক্ষণ কেবল হামযার পিছনে লেগে থাকি। আমি একটি বৃক্ষ বা একটি পাথরের পিছনে ওঁৎ পেতে ছিলাম। ইতিমধ্যে যখন তিনি আমার সম্মুখে জনৈক মুশরিক সেনাকে এক আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলেন এবং তাকে আমার আওতার মধ্যে পেয়ে যাই, তখনই আমি তাঁর অগোচরে তাঁর দিকে বর্শাটি ছুঁড়ে মারি, যা তাঁর নাভীর নীচ থেকে ভেদ করে ওপারে চলে যায়। তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। কিন্তু পড়ে যান ও কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আমি তাঁর দেহ থেকে বর্শাটি বের করে নিয়ে চলে আসি। এরপর মক্কায় ফিরে গেলে আমাকে আযাদ করে দেওয়া হয়।[বুখারী হা/৪০৭২; ইবনু হিশাম ২/৭১-৭২]
উল্লেখ্য যে, মক্কা বিজয়ের পর ওয়াহ্শী ত্বায়েফে পালিয়ে যান। অতঃপর সেখানকার প্রতিনিধি দলের সাথে ৯ম হিজরী সনে মদীনায় এসে রাসূল (সাঃ)-এর নিকট ইসলাম কবুল করেন। রাসূল (সাঃ) তাকে ভবিষ্যতে পুনরায় সামনে আসতে নিষেধ করেন। ফলে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কখনো মদীনায় আসেননি। আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবকে ইয়ামামার যুদ্ধে ঐ বর্শা দিয়েই তিনি হত্যা করেন এবং বলেন, فَإِنْ كُنْتُ قَتَلْتَهُ، فَقَدْ قَتَلْتُ خَيْرَ النَّاسِ بَعْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَدْ قَتَلْتُ شَرَّ النَّاسِ ‘যদি আমি তাকে হত্যা করে থাকি, তবে আমি রাসূল (সাঃ)-এর পরে শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে হত্যা করেছিলাম। আর এখন আমি নিকৃষ্টতম মানুষটিকে হত্যা করলাম’।[ইবনু হিশাম ২/৭২-৭৩; ফাৎহুল বারী হা/৪০৭২] রোমকদের বিরুদ্ধে ইয়ারমূকের যুদ্ধেও তিনি শরীক হন। তিনি উসমান (রাঃ) অথবা আমীর মু‘আবিয়ার খেলাফতকালে ইরাকের হিমছে বসবাস করেন ও সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ৯১১৫)।
‘সাইয়িদুশ শুহাদা’ হযরত হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওহুদ যুদ্ধে তিনি একাই ৩০ জনের অধিক শত্রুসেনাকে হত্যা করেন।[আল-ইছাবাহ, হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব, ক্রমিক ১৮২৮] কেবল আবু দুজানা ও হামযা নন, অন্যান্য বীরকেশরী সাহাবীগণের অতুলনীয় বীরত্বের সম্মুখে কাফির বাহিনী কচুকাটা হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এমনকি তারা তাদের সেনা শিবির ছেড়ে সবকিছু ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাতে থাকে। বারা ইবনু ‘আযেব (রাঃ) বলেন, মুশরিক বাহিনীর মধ্যে পালানোর হিড়িক পড়ে গেল। তাদের নারীরা পায়ের গোছা বের করে ছুটতে লাগল। মুসলিম বাহিনী তাদের পিছনে তরবারি নিয়ে ধাওয়া করল। অতঃপর সবাই তাদের পরিত্যক্ত গণীমতের মাল জমা করতে শুরু করল’ (বুখারী হা/৪০৪৩)।
তীরন্দাযদের ভুল ও তার খেসারত :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
কাফিরদের পলায়ন ও মুসলিম বাহিনীর গণীমত জমা করার হিড়িক দেখে গিরিপথ রক্ষী তীরন্দায দল ভাবল যে, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। অতএব আর এখানে থাকার কি প্রয়োজন? গণীমতের মাল ও দুনিয়ার লোভরূপী শয়তান সাময়িকভাবে তাদের মাথায় চেপে বসল। ‘গণীমত’ ‘গণীমত’(الْغَنِيمَةَ الْغَنِيمَةَ) বলতে বলতে তারা ময়দানের দিকে ছুটে চলল’। দলপতি আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের আনছারী (রাঃ) তাদেরকে বলেন, أَنَسِيتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم- قَالُوا وَاللهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ فَلَنُصِيبَنَّ مِنَ الْغَنِيمَةِ ‘তোমরা কি ভুলে গেলে রাসূল (সাঃ) তোমাদেরকে কি বলেছিলেন? জবাবে তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই লোকদের সঙ্গে গণীমত কুড়াব’ (বুখারী হা/৩০৩৯)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি ও তাঁর সাথী একদল শহীদ হয়ে যান।[আর-রাউযুল উনুফ ৩/৩০৩; ইবনু হিশাম ২/১১৩ টীকা-১] ওয়াক্বেদী বলেন, তাদের সংখ্যা অনধিক দশ জন ছিল (ওয়াক্বেদী ১/২৩০)।
শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনীর ধুরন্ধর সেনাপতি খালেদ বিন অলীদ সুযোগ বুঝে নক্ষত্র বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে ঐ ক্ষুদ্র বাহিনীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের ও তাঁর সাথীগণ সকলে প্রাণপণ লড়াই করে শহীদ হয়ে গেলেন। অতঃপর খালেদ ও তার পশ্চাদবর্তী কুরায়েশ সেনাদল অতর্কিতে এসে অপ্রস্তুত মুসলিম বাহিনীর উপরে হামলা করল। ঐ সময় ‘আমরাহ বিনতে ‘আলক্বামা(عَمْرة بنتُ عَلْقمةَ الحارثِيَّةُ) নাম্মী জনৈকা কুরায়েশ মহিলা তাদের ভূলুণ্ঠিত পতাকা তুলে ধরলে চারদিক থেকে মাক্কী বাহিনী পুনরায় ময়দানে ছুটে আসে এবং অগ্র-পশ্চাৎ সবদিক থেকে মুসলিম বাহিনীকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় মহা পরীক্ষা। নেমে আসে মহা বিপর্যয়। এই সময় রাসূল (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন মাত্র ১২জন সাহাবী (বুখারী হা/৩০৩৯)। পতাকাবাহী মুছ‘আব বিন ওমায়ের শহীদ হন। তার শাহাদাতের পর রাসূল (সাঃ) যুদ্ধের পতাকা আলী (রাঃ)-এর হাতে তুলে দেন (ইবনু হিশাম ২/৭৩)। অতঃপর তিনি সুকৌশলে স্বীয় বাহিনীকে উচ্চভূমিতে তাঁর ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হন। তীরন্দাযদের ভুলের কারণে মুসলিম বাহিনীর নিশ্চিত বিজয় এভাবে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
জয়-পরাজয় পর্যালোচনা :
━━━━━━━━━━━━━━━━
ওহুদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী প্রথম দিকে বিজয়ী হয় এবং শত্রুবাহিনী ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু তীরন্দাযগণের মারাত্মক ভুলের কারণে অরক্ষিত গিরিসংকট দিয়ে শত্রুবাহিনী অতর্কিতে ময়দানে ঢুকে পড়ে। যাতে মুসলিম বাহিনী চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে আহত হন। তাঁর দান্দান মুবারক শহীদ হয়। এছাড়া মুসলিম বাহিনীর সর্বমোট ৭০ জন শাহাদাত বরণ করেন। যার মধ্যে মুহাজির ৪ জন, ইহূদী ১ জন, বাকী ৬৫ জন আনছারের মধ্যে আউস গোত্রের ২৪ জন ও খাযরাজ গোত্রের ৪১ জন ছিলেন। কুরায়েশ বাহিনীর নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন ২২ জন, কেউ বলেছেন ৩৭ জন। কিন্তু এ হিসাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তারাই বলছেন যে, একা হামযা (রাঃ) ৩০ জনের অধিক শত্রুসৈন্য খতম করেছেন’। তাছাড়া আলী (রাঃ) হত্যা করেছেন ৮ জনকে, কুযমান ৭ অথবা ৮ জনকে। এতদ্ব্যতীত যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম, মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবু দুজানা, আবুবকর, উমর, আছেম বিন সাবেত, হাতেব বিন আবু বালতা‘আহ, আবু তালহা, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ, মুছ‘আব বিন উমায়ের, উসায়েদ বিন হুযায়ের, হুবাব ইবনুল মুনযির, সা‘দ বিন মু‘আয, সা‘দ বিন ওবাদাহ, সা‘দ ইবনু আবী ওয়াকক্বাছ, সা‘দ বিন রাবী‘, নযর বিন আনাস, আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ, হানযালাহ, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ও তাঁর পিতা ইয়ামান, আবু সাঈদ খুদরীর পিতা মালিক ইবনু সিনান, জাবের-এর পিতা আব্দুল্লাহ বিন হারাম, হারিছ ইবনু ছিম্মাহ, উছায়রিম, মুখাইরীক্ব, আব্দুল্লাহ বিন জাহ্শ, রাফে‘ বিন খাদীজ, সামুরাহ বিন জুনদুব, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ, ক্বাতাদাহ বিন নু‘মান, আনাস বিন নাযার, সাবিত বিন দাহদাহ ও তার সঙ্গীরা, আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ, সাহল বিন হুনাইফ প্রমুখ বীর যোদ্ধাদের হাতে কত শত্রুসৈন্য খতম হয়েছে, তার হিসাব কোথায়? তিন হাযারের দুর্ধর্ষ কুরায়েশ বাহিনী কোনরূপ চরম মূল্য না দিয়েই কি ময়দান ছেড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়েছিল? অতএব মুসলিম বীরদের হাতে তাদের যে অগণিত সৈন্য হতাহত হয়েছিল, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়।
দ্বিতীয়তঃ কুরায়েশ বাহিনী বিজয়ী হলে মুসলিম বাহিনীর ঘাঁটি দখল করল না কেন? তাদের মালামাল লুট করল না কেন? তারা মদীনার উপরে চড়াও হল না কেন? সে যুগের প্রথানুযায়ী বিজয়ী দল হিসাবে তারা সেখানে ৩ দিন অবস্থান করল না কেন? কেন একজন মুসলিম সৈন্যও তাদের হাতে বন্দী হল না? অথচ কাফের বাহিনীর দু’জন কবির অন্যতম আবু ‘আযযাহ মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয় এবং ইতিপূর্বে বদরের যুদ্ধে বন্দী হওয়ার পর মুক্তিপণ হিসাবে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। অতএব এটাকে ‘অমীমাংসিত যুদ্ধ’ বলা চলে। তবে আখেরাতের হিসাবে মুসলমানেরাই বিজয়ী এবং সর্বদা লাভবান তারাই। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَهِنُوْا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِنْ تَكُوْنُوْا تَأْلَمُوْنَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُوْنَ كَمَا تَأْلَمُوْنَ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لاَ يَرْجُوْنَ وَكَانَ اللهُ عَلِيْماً حَكِيْمًا ‘শত্রুদলের পশ্চাদ্ধাবনে তোমরা শৈথিল্য প্রদর্শন করো না। যদি তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাক, তবে তারাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে যেমন তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছ। (পার্থক্য এই যে,) তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে (জান্নাত) আশা কর, যা তারা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (নিসা ৪/১০৪)।
তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত :
━━━━━━━━━
আল্লাহ তীরন্দাযদের সাময়িক পদস্খলনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ ‘তোমাদের মধ্যে যারা (ওহুদের যুদ্ধে) দু’দলের মুখোমুখি হবার দিন ঘাঁটি থেকে ফিরে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের কিছু কৃতকর্মের দরুন শয়তান তাদের প্রতারিত করেছিল, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল’ (আলে ইমরান ৩/১৫৫)।
সেই সাথে তাদেরকে সাবধান করে দেওয়া হল যে, উম্মতের সামষ্টিক স্বার্থ জড়িত কোন কাজে শরীক হলে কেউ যেন আমীরের অনুমতি ছাড়া চলে না যায়। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ- (نور 62)-
‘মুমিন তো কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যখন তারা তার সঙ্গে কোন সমষ্টিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাথী হয়, তখন যেন তারা চলে না যায় তার কাছ থেকে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত। নিশ্চয়ই যারা তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে তোমার নিকট অনুমতি চাইলে তাদেরকে তুমি অনুমতি দাও যাকে চাও। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নূর ২৪/৬২)।
‘হামরাউল আসাদ’ :
━━━━━━━━━━━━
মদীনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মক্কার দিকে ৮ মাইল বা ১২ কি. মি. দূরে অবস্থিত। কুরায়েশ বাহিনী পুনরায় হামলা করতে পারে এই আশংকায় ওহুদ যুদ্ধের পরদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ই শাওয়াল রবিবার তাদের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য পুনরায় যুদ্ধ যাত্রা করেন কেবলমাত্র ঐসব সেনাদের নিয়ে যারা আগের দিন ওহুদ যুদ্ধে শরীক ছিলেন। যাদের সংখ্যা ছিল ৭০ জন। পরে যোগদানকারী সাহাবীগণ সহ মোট সংখ্যা দাড়ায় ৬৩০ জন।[আল-বিদায়াহ ৪/৪৮-৪৯; ইবনু সা‘দ ২/৩৭-৩৮] আয়েশা (রাঃ) আলে ইমরান ১৭২ আয়াত নাযিলের কারণ হিসাবে ভাগিনা উরওয়া বিন যুবায়েরকে বলেন, তোমার পিতা যুবায়ের ও নানা আবুবকর ঐ দলের মধ্যে ছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ওহুদের দিন বিপদগ্রস্ত হলেন এবং মুশরিকরা ফিরে গেল, তখন তিনি আশংকা করলেন যে, ওরা ফিরে আসতে পারে। রাসূল (সাঃ) বললেন, কারা ওদের পিছু ধাওয়া করবে? অতঃপর তিনি লোকদের মধ্য থেকে সত্তুর জনকে বাছাই করলেন। উরওয়া বলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন, আবুবকর ও যুবায়ের’ (বুখারী হা/৪০৭৭)। অর্থাৎ তোমার পিতা ও আমার পিতা। ইবনু কাছীর বলেন, এটি ছিল হামরাউল আসাদ-এর দিন’। আয়াতটি ছিল, الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ- الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ‘যারা নিজেরা যখমপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে ও আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার’। ‘যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, নিশ্চয়ই তারা (কুরায়েশ বাহিনী) তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদের থেকে ভীত হও। একথা শুনে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা বলে ‘আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক!’ (আলে ইমরান ৩/১৭২-৭৩)।[ইবনু কাছীর, তাফসীর আলে ইমরান ১৭২-৭৩ আয়াত] মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই অনুমতি চেয়েও ব্যর্থ হয়। তবে সঙ্গত কারণে রাসূল (সাঃ) জাবের বিন আব্দুল্লাহকে অনুমতি দেন এবং ৮ মাইল দূরে ‘হামরাউল আসাদ’(حَمْرَاء الْأَسَد) নামক স্থানে গিয়ে শিবির সন্নিবেশ করেন। অতঃপর চারদিন সেখানে অবস্থান শেষে ১২ই শাওয়াল মদীনায় ফিরে আসেন।
ঘটনা ছিল এই যে, হামরাউল আসাদ পৌঁছে মা‘বাদ বিন আবু মা‘বাদ আল-খুযাঈ নামক জনৈক ব্যক্তি মুসলমান হন। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর হিতাকাংখী ছিলেন। তাছাড়া বনু হাশেম ও বনু খুযা‘আহর মধ্যে জাহেলী যুগ থেকেই মৈত্রীচুক্তি ছিল। তিনি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে আবু সুফিয়ানের নিকট গমন করেন। আবু সুফিয়ানের বাহিনী তখন মদীনা থেকে ৬৮ কি. মি. দক্ষিণে ‘রাওহা’ (الروحاء)-তে অবতরণ করেছে। সে সময় সাথীদের চাপে আবু সুফিয়ান পুনরায় মদীনায় হামলার প্রস্তুততি নিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় মা‘বাদ সেখানে পৌঁছে যান এবং আবু সুফিয়ানকে রাসূল (সাঃ)-এর পশ্চাদ্ধাবন বিষয়ে অবহিত করেন। অতঃপর তাকে দারুণভাবে ভীত করে ফেলেন। এমনকি এ কথাও বলেন যে, মুহাম্মাদের বিশাল বাহিনী টিলার পিছনে এসে গেছে। তোমরা এখুনি পালাও। আবু সুফিয়ান তার ইসলাম গ্রহণের কথা জানতেন না। ফলে তার কথায় বিশ্বাস করে দ্রুত মক্কায় ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে মা‘বাদকে বলে দিলেন তুমি মুহাম্মাদকে জানিয়ে দিয়ো যে, আমরা অতি সত্বর পুনরায় তাদের উপর হামলা করব এবং তাকে ও তার সাথীদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলব’। মা‘বাদ রাজি হলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত খবর জানালে মুসলিম বাহিনীর ঈমানী তেজ আরো বেড়ে যায় এবং তারা বলে ওঠেন, حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ ‘আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট’। আর তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’। এর মাধ্যমে দুই ঈমানী কণ্ঠের মিল হয়ে যায়। (প্রায় আড়াই হাযার বছর পূর্বে) নমরূদের আগুনে নিক্ষেপকালে পিতা ইবরাহীম (আঃ) একই কথা বলেছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, (حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ) قَالَهَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ حِينَ أُلْقِىَ فِى النَّارِ، وَقَالَهَا مُحَمَّدٌ- صلى الله عليه وسلم - حِينَ قَالُوا إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ ‘হাসবুনাল্লাহ... কথাটি ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন যখন তিনি আগুনে নিক্ষিপ্ত হন। আর একই কথা মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছিলেন যখন লোকেরা তাঁকে বলল যে, শত্রুরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হচ্ছে। অতএব তাদেরকে তোমরা ভয় কর। একথা তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি করে দেয় এবং তারা বলে ওঠে হাসবুনাল্লাহ ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি কতইনা সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’।[বুখারী হা/৪৫৬৩; ইবনু হিশাম ২/১০৩] বস্ত্ততঃ সকল যুগের ঈমানদারগণ চূড়ান্ত বিপদে সর্বদা একই কথা বলে থাকেন।
অন্য দিকে আবু সুফিয়ানের গুপ্তচর মু‘আবিয়া বিন মুগীরাহ বিন আবুল ‘আছ যে ব্যক্তি উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নানা ছিল, মদীনায় পৌঁছে তার চাচাতো ভাই উসমান (রাঃ)-এর নিকটে আশ্রয় নেয়। উসমানের আবেদনক্রমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে তিন দিনের জন্য অনুমতি দেন এবং বলেন, এর পরে পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করা হবে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মদীনা ছেড়ে গেলে সে গোপন সংবাদ সংগ্রহে লিপ্ত হয় এবং ৪ দিন পর রাসূল (সাঃ) ফিরে আসার সাথে সাথে পালিয়ে যায়। তখন তিনি যায়েদ বিন হারেছাহ ও ‘আম্মার বিন ইয়াসিরকে পাঠান এবং তার পিছু ধাওয়া করে তাকে পাকড়াও করে হত্যা করেন (ইবনু হিশাম ২/১০৪)। এভাবে ওহুদ যুদ্ধের পরবর্তী চক্রান্ত সমূহ শেষ করে দিয়ে রাসূল (সাঃ) নিশ্চিন্ত হন।
ওহুদ যুদ্ধের বিষয়ে কুরআন ও বিপর্যয়ের রহস্য :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
ওহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানের ১২১ হতে ১৭৯ পর্যন্ত পরপর ৬০টি আয়াত নাযিল হয়। যার মধ্যে যুদ্ধের এক একটি পর্বের আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর ঐসব কারণগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলির ফলে মুসলিম বাহিনী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেখানে মুনাফিকদের অপতৎপরতার কথাও উল্লেখিত হয়েছে। অতঃপর যুদ্ধের ফলাফল ও এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের উপরে আলোকপাত করে বলা হয়েছে, مَا كَانَ اللهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ عَلَى مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىَ يَمِيْزَ الْخَبِيْثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ ‘অপবিত্রকে পবিত্র হতে পৃথক করে না দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই ছেড়ে দিবেন, যে অবস্থায় তোমরা আছ। আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানাবেন...’ (আলে ইমরান ৩/১৭৯)।
অর্থাৎ মুনাফিকদের পৃথক করা ও মুমিনদের ঈমানের দৃঢ়তা পরখ করা ছিল এ যুদ্ধের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। আর একথাগুলি অহীর মাধ্যমে না জানিয়ে বাস্তব প্রমাণের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়াই ছিল ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের অন্যতম রহস্য।
ইবনু হাজার বলেন, বিদ্বানগণ বলেন যে, ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের বিপর্যয়ের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ তাৎপর্য সমূহ নিহিত ছিল। যেমন- (১) রাসূল (সাঃ)-এর অবাধ্যতার পরিণাম সম্পর্কে মুসলমানদের হুঁশিয়ার করা। কেননা তীরন্দাযগণের অবাধ্যতার ফলে আকস্মিক এই বিপর্যয় নেমে আসে (২) রাসূলগণের জন্য সাধারণ নিয়ম এই যে, তারা প্রথমে বিপদগ্রস্ত হন এবং শেষে বিজয়ী হন। কেননা যদি তাঁরা সর্বদা কেবল বিজয়ী হতে থাকেন, তাহলে মুমিনদের মধ্যে এমন লোকও ঢুকে পড়বে, যারা তাদের নয়। আবার যদি তারা কেবল পরাজিত হতেই থাকেন, তাহলে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই হাছিল হবে না। সেকারণ জয় ও পরাজয় দু’টিই একত্রে রাখা হয়, যাতে প্রকৃত বিশ্বাসী ও কপট বিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। (৩) কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য দেরীতে আসলে মুমিনদের হৃদয়ে অধিক নম্রতার সৃষ্টি হয় এবং অহংকার চূর্ণ হয়। তারা অধিক ধৈর্যশীল হয়। পক্ষান্তরে মুনাফিকগণ দিশেহারা হয়। (৪) আল্লাহ মুমিন বান্দাদের জন্য জান্নাতে উচ্চ মর্যাদার এমন স্তরসমূহ নির্ধারণ করেছেন, যেখানে পৌঁছানোর জন্য কেবল তাদের আমলসমূহ যথেষ্ট হয় না। তখন আল্লাহ তাদের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিপদাপদ সমূহ নির্ধারণ করেন। যাতে তারা সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হন। (৫) আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের জন্য সবচেয়ে বড় মর্যাদা হল শাহাদাত লাভ করা। সেকারণ আল্লাহ তাদের নিকটে সে সুযোগ পৌঁছে দেন। (৬) আল্লাহ তার শত্রুদের ধ্বংস করতে চান। সেকারণ তিনি এমন কার্যকারণ সমূহ নির্ধারণ করে থাকেন, যা তাদের কুফরী, সীমালংঘন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে রূপ লাভ করে। এর দ্বারা তিনি মুমিনদের গোনাহ সমূহ দূর করে দেন ও কাফির-মুনাফিকদের সংকুচিত ও ধ্বংস করেন।[যাদুল মা‘আদ ২/৯৯-১০৮; ফাৎহুল বারী হা/৪০৪০]
বলা বাহুল্য যে, উপরোক্ত রহস্য ও তাৎপর্য সমূহ কেবল ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুমিনগণের জন্যই নয়, বরং যুগে যুগে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী সকল মুমিনের জন্য প্রযোজ্য।
[1]. আর-রাহীক্ব ২৫৯ পৃঃ। মুবারকপুরী বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুবায়েরের প্রশংসায় বলেন,إِنَّ لِكُلِّ نَبِيٍّ حَوَارِيًّا، وَحَوَارِيَّ الزُّبَيْرُ ‘নিশ্চয়ই প্রত্যেক নবীর একজন নিকট সহচর থাকেন। আমার সহচর হল যুবায়ের’। এই কথাটি রাসূল (সাঃ) খন্দকের যুদ্ধে বনু কুরাইজা কুরায়েশদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে কি না, তার খবর সংগ্রহের কাজে তাকে নিযুক্তিকালে বলেছিলেন’ (বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪১১৩), ওহুদের যুদ্ধে নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন