গণীমত বণ্টন
খায়বরের যুদ্ধে ভূমি সহ বিপুল পরিমাণ গণীমত হস্তগত হয়। যার অর্ধেক ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য রেখে দিয়ে বাকী অর্ধেক ১৮০০ ভাগে ভাগ করা হয়। হোদায়বিয়ার ১৪০০ সাথীর মধ্যে উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকলের জন্য অংশ নির্ধারিত ছিল। এদের মধ্যে ২০০ জন ছিলেন অশ্বারোহী। প্রত্যেক পদাতিকের জন্য একভাগ ও অশ্বারোহীর জন্য ঘোড়ার দু’ভাগ সহ তিন ভাগ। এক্ষণে ১২০০ পদাতিকের জন্য ১২০০ ভাগ এবং ২০০ অশ্বারোহীর জন্য ৬০০ ভাগ, সর্বমোট ১৮০০ ভাগে গণীমত বণ্টন করা হয়। উক্ত হিসাবে আল্লাহর রাসূলও একটি ভাগ পান।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৯১-৯৩; আর-রাহীক্ব ৩৭৪-৭৫ পৃঃ] মহিলাদের জন্য গণীমতের অংশ দেওয়া হয়নি। তবে ‘ফাই’ থেকে তাদের দেওয়া হয় (তারীখ ত্বাবারী ৩/১৭)।
ফাদাকের খেজুর বাগান :
━━━━━━━━━━━━━━━
এই সময় ফাদাক (فَدَك)-এর খেজুর বাগান রাসূল (সাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ হিসাবে বণ্টিত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন প্রথম খায়বরে উপস্থিত হন, তখন তিনি ফাদাকের ইহূদীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেবার জন্য মুহাইয়েছাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে পাঠান। কিন্তু তারা বিলম্ব করে। অতঃপর যখন খায়বর বিজিত হল, তখন তারা ভীত হয়ে পড়ল এবং রাসূল (সাঃ)-এর কাছে দূত পাঠালো এই মর্মে যে, খায়বরবাসীদের সঙ্গে ফসলের অর্ধাংশ দেবার শর্তে যেরূপ সন্ধি করা হয়েছে, তারাও অনুরূপ সন্ধিতে আগ্রহী। তাদের এ প্রস্তাব কবুল করা হয় এবং ফাদাকের ভূমি রাসূল (সাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। কেননা এই ভূমি জয় করতে কোনরূপ যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। কেবলমাত্র রাসূল (সাঃ)-এর দাওয়াতের মাধ্যমে তা বিজিত হয়েছিল (ইবনু হিশাম ২/৩৩৭, ৩৫৩)।
উল্লেখ্য যে, এই ফাদাকের খেজুর বাগানের উত্তরাধিকার প্রশ্নেই রাসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পরে খলীফা আবুবকরের সঙ্গে হযরত ফাতেমা ও আলী (রাঃ)-এর বিরোধ হয়। হাদীছটি ছিল, إنَّا مَعْشَرُ الأنبياءِ لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَاهُ صَدَقَةٌ ‘আমরা নবীরা আমাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী কেউ হয় না। যা কিছু আমরা ছেড়ে যাই, সবই ছাদাক্বা হয়ে যায়’।[বুখারী হা/৬৭২৭; মুসলিম হা/১৭৫৮; মিশকাত হা/৫৯৬৭] তিনি বলেন,إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‘নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যান না। তাঁরা রেখে যান কেবল ইল্ম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে’।[আহমাদ হা/২১৭৬৩; আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২] বলা বাহুল্য যে, শী‘আরা এখনো উক্ত ফাদাকের সম্পত্তির দাবীতে অটল। তারা খলীফা আবুবকর ও উমর (রাঃ)-কে দায়ী করে থাকে। অথচ পরে আলী (রাঃ) নিজে খলীফা হয়েও ঐ সম্পত্তি দাবী করেননি।
এভাবে খায়বর যুদ্ধে বিপুল গণীমত লাভ হয়। যে বিষয়ে আল্লাহ হোদায়বিয়া থেকে ফেরার পথে আয়াত নাযিল করে বলেছিলেন,وَمَغَانِمَ كَثِيرَةً يَأْخُذُونَهَا وَكَانَ اللهُ عَزِيزًا حَكِيمًا- وَعَدَكُمُ اللهُ مَغَانِمَ كَثِيرَةً تَأْخُذُونَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هَذِهِ وَكَفَّ أَيْدِيَ النَّاسِ عَنْكُمْ وَلِتَكُونَ آيَةً لِلْمُؤْمِنِينَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا ‘আর তিনি তাদের বিপুল পরিমাণ গণীমত লাভের ওয়াদা দিচ্ছেন, যা তারা লাভ করবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’। ‘আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ গণীমতের ওয়াদা দিচ্ছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তোমাদের জন্য এটি ত্বরান্বিত করবেন এবং তোমাদের থেকে লোকদের প্রতিরোধ করবেন। যাতে এটা মুমিনদের জন্য নিদর্শন হয় এবং তিনি তোমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করেন’ (ফাৎহ ৪৮/১৯-২০)।
মুসলমানদের সচ্ছলতা লাভ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━
মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, খায়বর যুদ্ধে বিজয় লাভের পর আমরা বলতে লাগলাম,الآنَ نَشْبَعُ مِنَ التَّمْرِ ‘এখন আমরা খেজুর খেয়ে তৃপ্ত হতে পারব’ (বুখারী হা/৪২৪২)। খায়বর থেকে মদীনায় ফিরে মুহাজিরগণ আনছারগণকে তাদের দেওয়া খেজুর গাছগুলি ফেরৎ দেন। কেননা তখন তাদের জন্য খায়বরে খেজুর গাছের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল’ (মুসলিম হা/১৭৭১)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন