বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫

যুদ্ধ শুরু

 

যুদ্ধ শুরু

না‘এম দুর্গ জয় :
━━━━━━━━━━
৮টি দুর্গের মধ্যে সেরা ছিল না‘এম দুর্গ। যা ইহূদী বীর ‘মারহাব’ (مَرْحَب)-এর নেতৃত্বাধীন ছিল। যাকে এক হাযার বীরের সমকক্ষ বলা হত। কৌশলগত দিক দিয়ে এটার স্থান ছিল সবার উপরে। সেজন্য রাসূল (সাঃ) প্রথমেই এটাকে জয় করার দিকে মনোযোগ দেন।
রাতের বেলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلاً يُفْتَحُ عَلَى يَدَيْهِ، يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ، وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ ‘কাল সকালে আমি এমন একজনের হাতে পতাকা দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন’। সকালে সবাই রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে হাযির হলেন। নেতৃস্থানীয় প্রত্যেকের ধারণা পতাকা তার হাতে আসবে। এমন সময় রাসূল (সাঃ) বললেন,أَيْنَ عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ؟ ‘আলী ইবনু আবী ত্বালেব কোথায়’? সবাই বলল, চোখের অসুখের কারণে তিনি পিছনে পড়েছেন। রাসূল (সাঃ) বললেন,فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتُونِى بِهِ ‘তার কাছে লোক পাঠাও এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো’। অতঃপর তাকে আনা হল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ মুখের লালা তার চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য সুস্থতার দো‘আ করলেন। ফলে তিনি এমনভাবে সুস্থ হলেন যেন ইতিপূর্বে তার চোখে কোন অসুখ ছিল না। অতঃপর রাসূল (সাঃ) তার হাতে পতাকা দিয়ে বললেন,اُنْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ ‘ধীরে-সুস্থে এগিয়ে যাও, যতক্ষণ না তাদের এলাকায় অবতরণ কর’। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দাও এবং জানিয়ে দাও আল্লাহর হক হিসাবে তাদের উপরে কি কি বিষয় ওয়াজিব রয়েছে।فَوَاللهِ لَأَن يَّهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَّكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ ‘আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তোমার দ্বারা একজন লোককেও হেদায়াত দান করেন, তবে সেটি তোমার জন্য মূল্যবান লাল উটের (কুরবানীর) চাইতে উত্তম হবে’।[1] যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে রাসূল (সাঃ)-এর এই বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁর শান্তিবাদী নীতি ফুটে ওঠে।
অতঃপর আলী (রাঃ) সেনাদল নিয়ে ‘না‘এম’ (نَاعِمٌ) দুর্গের সম্মুখে উপস্থিত হলেন ও দুর্গবাসীদের প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। ইহূদীরা এই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল এবং তাদের নেতা ‘মারহাব’ দর্পভরে কবিতা বলে এগিয়ে এসে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানালো। মারহাবের দর্পিত আহবানে সাড়া দিয়ে পাল্টা কবিতা বলে ‘আমের ইবনুল আকওয়া‘ ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাঁর তরবারি আকারে ছোট থাকায় তার আঘাত মারহাবের পায়ের গোছায় না লেগে উল্টা নিজের হাঁটুতে এসে লাগে। যাতে তিনি আহত হন ও পরে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের আঘাতে শহীদ হওয়ায় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন যে, তিনি দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবেন।[বুখারী হা/৩৮৭৫; মুসলিম হা/৩৩৮৩]
এরপর মারহাব পুনরায় গর্বভরে কবিতা আওড়াতে থাকে ও মুসলিম বাহিনীর প্রতি দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানাতে থাকে। তখন সেনাপতি আলী (রাঃ) তার দর্প চূর্ণ করার জন্য নিজেই এগিয়ে গেলেন এবং গর্বভরে কবিতা বলে সিংহের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে এক আঘাতেই শেষ করে দিলেন। এভাবে তাঁর হাতেই মূলতঃ না‘এম দুর্গ জয় হয়ে গেল। হযরত আলী (রাঃ) তাঁর পঠিত উক্ত কবিতায় নিজের সম্পর্কে বলেন,
أَنَا الَّذِى سَمَّتْنِى أُمِّى حَيْدَرَهْ + كَلَيْثِ غَابَاتٍ كَرِيهِ الْمَنْظَرَهْ
أُوفِيهِم بِالصَّاعِ كَيْلَ السَّنْدَرَهْ
‘আমি সেই ব্যক্তি আমার মা যার নাম রেখেছিলেন হায়দার (বাঘ)। তাই বনের বাঘের মত ভয়ংকর আমি’। ‘আমি তাদেরকে অতি দ্রুত অধিক সংখ্যায় হত্যা করব’।[2] একারণে হযরত আলীকে ‘আলী হায়দার’ বলা হয়।
‘মারহাব’ নিহত হওয়ার পরে তার ভাই ‘ইয়াসের’ (يَاسِر) এগিয়ে আসে। সে যুবায়ের (রাঃ)-এর হাতে নিহত হয়। তারপর উভয়পক্ষে কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলে। তাদের নেতৃস্থানীয় ইহূদীদের অনেকে নিহত হয়। ফলে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়ে যায় এবং না‘এম দুর্গ বিজয় সমাপ্ত হয়।[ইবনু হিশাম ২/৩৩৪]


অন্যান্য দুর্গ জয় :
━━━━━━━━━━
না‘এম দুর্গ জয়ের পর দ্বিতীয় প্রধান দুর্গ ছা‘ব বিন মু‘আয(حِصْنُ الصَّعْب بن مُعَاذ) দুর্গটি বিজিত হয় হযরত হুবাব ইবনুল মুনযির (রাঃ)-এর নেতৃত্বে তিনদিন অবরোধের পর। এই দুর্গটি ছিল খাদ্যসম্ভারে পূর্ণ। আর এই সময় মুসলিম সেনাদলে দারুণ খাদ্য সংকট চলছিল। তখন এ দুর্গটি জয়ের জন্য আল্লাহর নিকটে রাসূল (সাঃ) বিশেষ দো‘আ করেন এবং সেদিনই সন্ধ্যার পূর্বে দুর্গ জয় সম্পন্ন হয়। এ সময় ক্ষুধার তাড়নায় মুসলিম সেনাদলের কেউ কেউ গাধা যবহ করে তার গোশত রান্না শুরু করে দেয়। এ খবর শুনে রাসূল (সাঃ) গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেন’ (বুখারী হা/৫৪৯৭)। এই দুর্গ থেকে সেই আমলের প্রচলিত কিছু ট্যাংক ও কামান (মিনজানীক্ব ও দাববাবাহ) হস্তগত হয়। যা দুর্গ দুয়ার ভাঙ্গা এবং পাহাড়ের চূড়া বা উচ্চ ভূমিতে আগুনের গোলা নিক্ষেপের কাজে ব্যবহৃত হত। পরবর্তী যুদ্ধগুলিতে যা খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়। যেমন অত্যন্ত মযবুত ‘নেযার’ (نِزَار) দুর্গটি জয় করার সময় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) উক্ত ট্যাংক ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করে সহজ বিজয় অর্জন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল যুদ্ধে কামান ব্যবহারের প্রথম ঘটনা। নাত্বাত ও শিক্ব অঞ্চলে ৫টি দুর্গের পতনের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাতীবাহ অঞ্চলে গমন করেন ও তাদেরকে অবরোধ করেন। পরে তাদের উপরে কামানের গোলা নিক্ষেপের হুমকি দিলে ১৪দিন পর তারা বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে ও সন্ধির প্রস্তাব দেয়। অতঃপর সন্ধিচুক্তির মাধ্যমে ‘কাতীবাহ’ অঞ্চলের তিনটি দুর্গ বিজিত হয়। এভাবে খায়বর বিজয় সম্পন্ন হয়।


সন্ধির আলোচনা :
━━━━━━━━━━
‘কাতীবাহ’ অঞ্চলের বিখ্যাত ‘ক্বামূছ’(حِصْن الْقَمُوص) দুর্গের অধিপতি মদীনা হতে ইতিপূর্বে বিতাড়িত বনু নাযীর গোত্রের নেতা আবুল হুক্বাইক্ব-এর দুই ছেলে সন্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে আসেন। আলোচনায় স্থির হয় যে, দুর্গের মধ্যে যারা আছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে। তাদের সোনা-রূপাসহ অন্যান্য সকল সম্পদ মুসলিম বাহিনীর অধিকারভুক্ত হবে। ইহূদীরা সপরিবারে দুর্গ ত্যাগ করে চলে যাবে। সুনানে আবুদাঊদের বর্ণনায় এসেছে যে, নিজ নিজ বাহনের উপরে যতটুকু মালামাল নেওয়া সম্ভব ততটুক নেওয়ার অনুমতি তাদেরকে দেওয়া হয়। কেউ কিছু লুকালে সে ব্যাপারে কোন দায়িত্ব বা কোন চুক্তি থাকবে না। কিন্তু আবুল হুক্বাইক্বের ছেলেরা সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে অনেক মাল লুকিয়ে ফেলে। জিজ্ঞেস করা হল أَيْنَ مَسْكُ حُيَىِّ بْنِ أَخْطَبَ؟ ‘হুয়াই বিন আখত্বাব-এর মশকটি কোথায়? ইতিপূর্বে মদীনা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার সময় হুয়াই বিন আখত্বাব চামড়ার মশক ভরে যে সোনা-দানা ও অলংকারাদি নিয়ে এসেছিল, সেই মশকটার কথা এখানে বলা হয়েছে। এতদ্ব্যতীত কেনানা বিন আবুল হুক্বাইক্বের নিকটে বনু নাযীরের যে মূল্যবান সম্পদরাজি গচ্ছিত ছিল, সেগুলি সে জনশূন্য একটি স্থানে মাটির নীচে পুঁতে রেখেছিল। জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলল যে, যুদ্ধ ও অন্যান্য কাজে খরচ হয়ে গেছে। অতঃপর সেগুলি পাওয়া গেল। তখন সন্ধি ভঙ্গের অপরাধে ইবনু আবিল হুক্বাইক্বকে হত্যা করা হল এবং তার পরিবার ও অন্যান্যদের বন্দী করা হল। অতঃপর তাদের সবাইকে খায়বর থেকে বিতাড়িত করতে চাইলে তারা অর্ধেক ফসল দানের বিনিময়ে সন্ধিচুক্তি করে...।[আবুদাঊদ হা/৩০০৬, সনদ হাসান]


সাফিইয়াহর সাথে রাসূল (সাঃ)-এর বিবাহ :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
কেনানাহ বিন আবুল হুক্বাইক্বের নব বিবাহিতা স্ত্রী সাফিয়া বিনতে হুয়াই বিন আখত্বাব বন্দী হন। দাসী হিসাবে প্রথমে তাকে দেহিইয়া কালবীকে দেয়া হয়। পরক্ষণেই নেতৃকন্যা হিসাবে তাকে রাসূল (সাঃ)-এর ভাগে দেওয়া হয়। রাসূল (সাঃ) তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তিনি ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর তাকে মুক্ত করে তিনি তাকে বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর মর্যাদা দান করেন। এই মুক্তি দানকেই তার মোহরানা হিসাবে গণ্য করা হয়। অতঃপর মদীনায় ফেরার পথে ‘সাহবা’ (الصَّهْبَاء) নামক স্থানে পৌঁছে ‘সাফিয়া’ হালাল হলে তার সঙ্গে সেখানে তিনদিন বাসর যাপন করেন’ (বুখারী হা/৪২১১)। আনাস (রাঃ)-এর মা উম্মে সুলায়েম তাকে সাজ-সজ্জা করে রাসূল (সাঃ)-এর কাছে পাঠান। এই সময় তার মুখে (অন্য বর্ণনায় দু’চোখে) সবুজ দাগ দেখে রাসূল (সাঃ) তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার খায়বর আগমনের পূর্বে আমি একরাতে স্বপ্ন দেখি যে, চাঁদ কক্ষচ্যুত হয়ে আমার কোলে পড়ল। একথা কেনানাকে বললে সে আমার গালে জোরে থাপ্পড় মারে, আর বলে যে,أَتُرِيْدِيْنَ مَلِكَ يَثْرِبَ؟ ‘তুমি কি ইয়াছরিবের বাদশাহকে চাও? তিনি বলেন, আমার নিকটে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তি কেউ ছিলেন না। কারণ তিনি আমার পিতা ও স্বামীকে হত্যা করেছেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) আমার নিকটে বারবার ওযর পেশ করেন এবং বলেন, হে সাফিইয়াহ! তোমার পিতা আমার বিরুদ্ধে আরবদের জমা করেছিলেন। তাছাড়া অমুক অমুক কাজ করেছিলেন। অবশেষে আমার অন্তর থেকে তার উপরে বিদ্বেষ দূরীভূত হয়ে যায়’।[সহীহ ইবনু হিববান হা/৫১৯৯; ত্বাবারাণী, সহীহাহ হা/২৭৯৩; ইবনু হিশাম ২/৩৩৬]


রাসূল (সাঃ)-কে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
খায়বর বিজয়ের পর রাসূল(সাঃ) যখন একটু নিশ্চিন্ত হলেন, তখন বিতাড়িত বনু নাযীর গোত্রের অন্যতম নেতা ও কোষাধ্যক্ষ সাল্লাম বিন মিশকামের স্ত্রী যয়নব বিনতুল হারেছ তাকে বকরীর ভূনা রান হাদিয়া পাঠায়। সে আগেই জেনে নিয়েছিল যে, রাসূল (সাঃ) রানের গোশত পসন্দ করেন। এজন্য উক্ত মহিলা উক্ত রানে ভালভাবে বিষ মাখিয়ে দিয়েছিল। রাসূল (সাঃ) গোশতের কিছু অংশ চিবিয়ে ফেলে দেন, গিলেননি। অতঃপর বলেন,إنَّ هَذَا الْعَظْمَ لَيُخْبِرُنِي أَنَّهُ مَسْمُومٌ ‘এই হাড্ডি আমাকে বলছে যে, সে বিষ মিশ্রিত’। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন উক্ত মহিলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে কৈফিয়ত দিয়ে বলল, এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল এই যে,إنْ كَانَ مَلِكًا اسْتَرَحْتُ مِنْهُ، وَإِنْ كَانَ نَبِيًّا فَسَيُخْبَرُ ‘যদি এই ব্যক্তি বাদশাহ হন, তাহলে আমরা তার থেকে নিষ্কৃতি পাব। আর যদি নবী হন, তাহলে তাঁকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, أَرَدْنَا إِنْ كُنْتَ كَاذِبًا نَسْتَرِيحُ وَإِنْ كُنْتَ نَبِيًّا لَمْ يَضُرَّكَ ‘আমরা চেয়েছিলাম যদি আপনি মিথ্যাবাদী হন, তাহলে আমরা নিষ্কৃতি পাব। আর যদি আপনি নবী হন, তাহলে এ বিষ আপনার কোন ক্ষতি করবে না’ (বুখারী হা/৩১৬৯; আহমাদ হা/৩৫৪৭)। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু সাথী বিশর বিন বারা বিন মা‘রূর এক টুকরা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছিলেন। যাতে তিনি মারা যান। ফলে তার বদলা স্বরূপ ঐ মহিলাকে হত্যা করা হয়।[ইবনু হিশাম ২/৩৩৭; ফিক্বহুস সীরাহ ৩৪৭ পৃঃ; হাকেম হা/৪৯৬৭]


খায়বর যুদ্ধে উভয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
এই যুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের সংঘর্ষে সর্বমোট শহীদ মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১৬ জন। তন্মধ্যে ৪ জন কুরায়েশ, ১ জন আশজা‘ গোত্রের, ১ জন আসলাম গোত্রের, ১ জন খায়বরবাসী ও বাকী ৯ জন ছিলেন আনছার। তবে ১৬ জনের স্থলে ১৮, ১৯, ২৩ মর্মে মতভেদ রয়েছে। ইহূদী পক্ষে মোট ৯৩ জন নিহত হয় (আর-রাহীক্ব ৩৭৭ পৃঃ)।


খায়বরের ভূমি ইহূদীদের হাতে প্রত্যর্পণ ও সন্ধি :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইহূদীদেরকে মদীনার ন্যায় খায়বর হতেও নির্মূল করতে চেয়েছিলেন এবং সেমতে কাতীবাহর ইহূদীরা সবকিছু ফেলে চলে যেতে রাযীও হয়েছিল। কিন্তু ইহূদী নেতারা এক পর্যায়ে রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে আবেদন করল যে, আমাদের এখানে থাকতে দেওয়া হৌক, আমরা এখানকার জমি-জমা দেখাশুনা ও চাষাবাদ করব ও আপনাদেরকে ফসলের অর্ধেক ভাগ দেব। এখানকার মাটি সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা আপনাদের চেয়ে বেশী রয়েছে’। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদের এ প্রস্তাব বিবেচনা করলেন এবং উৎপন্ন ফসলের অর্ধাংশ প্রদানের শর্তে রাজি হলেন। সেই সাথে বলে দিলেন যতদিন তিনি চাইবেন, কেবল ততদিনই এ চুক্তি বহাল থাকবে। প্রয়োজনবোধে যেকোন সময় এ চুক্তি তিনি বাতিল করে দিবেন। অতঃপর উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাকে দায়িত্ব দেন।




[1]. বুখারী হা/৩৭০১, ৪২১০ ‘সাহাবীগণের ফাযায়েল’ ও ‘মাগাযী’ অধ্যায় ‘আলীর মর্যাদা’ ও ‘খায়বর যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; ইবনু হিশাম ২/৩৩৪।
[2]. মুসলিম হা/১৮০৭। ‘সানদারাহ’ একটি প্রশস্ত পরিমাপের নাম যা দিয়ে অধিক পরিমাণ বস্ত্ত দ্রুত পরিমাপ করা যায় (মুসলিম, শরহ নববী)। প্রসিদ্ধ আছে যে, এদিন আলী (রাঃ) দুর্গের একটি দরজা উপড়ে ফেলে সেটাকে হাতের ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ করেন। অবশেষে যখন আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন, তখন তিনি সেটা ছুঁড়ে ফেলে দেন। রাবী আবু রাফে‘ বলেন, পরে আমরা আটজনে মিলেও সেটা নাড়াতে পারিনি (ইবনু হিশাম ২/৩৩৫; তারীখ ত্বাবারী ৩/১৩)। বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ বা ‘ছিন্নসূত্র’ (মা শা-‘আ ১৮০ পৃঃ)। আলী (রাঃ)-এর মর্যাদা প্রমাণের জন্য অসংখ্য সহীহ হাদীছ রয়েছে। অতএব এরূপ যঈফ বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া আদৌ সমীচীন নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা

  মু‘জিযা সমূহ পর্যালোচনা মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যা...